অনলাইনে অবৈধ সিসা বার চক্রের মূলহোতা ও ডেলিভারিম্যান গ্রেফতার
নিয়মিত অভিযানের কারণে সরাসরি বন্ধ হলেও অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছিল অবৈধ সিসা বার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই চলছিল সিসা বরের অবৈধ ব্যবসা। অর্ডারে হোম ডেলিভারিও দিচ্ছিল চক্রের সদস্যরা। প্রয়োজনে স্যাম্পল ও ব্যবহারের নিয়ম দেখানো হতো ভিডিও পাঠিয়ে। সম্প্রতি এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে ফাঁদ পাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। চক্রটি ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দেশব্যাপী অবৈধ মাদকদ্রব্য সিসা সরবরাহ করেছে। হোম ডেলিভারিতে পৌঁছে দেওয়া হতো গন্তব্যে। এমন তথ্য পাওয়ার পর ক্রেতা সেজে চক্রকে অনুসরণ শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট। চক্রটিকে ধরতে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে সিসাপণ্য কেনাও হয়। ছদ্মবেশে পরিচালিত অভিযানে মোট ১৮ কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেট, সিসা সেবনে ব্যবহৃত চারকোল, সিসি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গত ১৬ নভেম্বরের অভিযানে গ্রেফতার করা হয় চক্রের ডেলিভারিম্যান মো. আশিকুর রহমান সামি (১৯) ও চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক আব্দুল আলিম ওয়াসিফকে (২৮)। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে সেগুনবাগিচাস্থ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য
নিয়মিত অভিযানের কারণে সরাসরি বন্ধ হলেও অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছিল অবৈধ সিসা বার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই চলছিল সিসা বরের অবৈধ ব্যবসা। অর্ডারে হোম ডেলিভারিও দিচ্ছিল চক্রের সদস্যরা। প্রয়োজনে স্যাম্পল ও ব্যবহারের নিয়ম দেখানো হতো ভিডিও পাঠিয়ে।
সম্প্রতি এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে ফাঁদ পাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
চক্রটি ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দেশব্যাপী অবৈধ মাদকদ্রব্য সিসা সরবরাহ করেছে। হোম ডেলিভারিতে পৌঁছে দেওয়া হতো গন্তব্যে। এমন তথ্য পাওয়ার পর ক্রেতা সেজে চক্রকে অনুসরণ শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট।
চক্রটিকে ধরতে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে সিসাপণ্য কেনাও হয়।
ছদ্মবেশে পরিচালিত অভিযানে মোট ১৮ কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেট, সিসা সেবনে ব্যবহৃত চারকোল, সিসি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গত ১৬ নভেম্বরের অভিযানে গ্রেফতার করা হয় চক্রের ডেলিভারিম্যান মো. আশিকুর রহমান সামি (১৯) ও চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক আব্দুল আলিম ওয়াসিফকে (২৮)।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে সেগুনবাগিচাস্থ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ।
তিনি বলেন, ডিএনসির গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে এবং এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসির কাছে গোপন তথ্য ছিল যে, একটি চক্র ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দেশব্যাপী অবৈধ মাদকদ্রব্য সিসা সরবরাহ করছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সিসাবারে কঠোর নজরদারি ও অভিযান চালানোর ফলে চক্রগুলো এখন নতুন কৌশলে অনলাইন অর্ডার, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও গোপন ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সিসা সরবরাহ করছে। এই উদীয়মান প্রবণতা বন্ধে ডিএনসি বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে।
ডিএনসি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীতে সক্রিয় একটি অনলাইনভিত্তিক সিসা সরবরাহ চক্র শনাক্ত করে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্স ও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে অর্ডার নিতো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে গত ১৬ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ টিম উপ-পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্ত্বে ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট ছদ্মবেশে অভিযানে নামে।
ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে ডিএনসি সদস্যরা প্রথমে চক্রের আশিকুর রহমান সামি নামে একজন ডেলিভারিম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। হাতিরঝিল এলাকায় পণ্য ডেলিভারির সময় ও স্থান নির্ধারণ করেন। গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টায় হাতিরঝিল মহানগর প্রকল্প এলাকায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সামি সিসার জারভর্তি ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হলে ডিএনসি দল তাকে ছদ্মবেশী ক্রেতার ফাঁদে ফেলে আটক করে। তার স্কুলব্যাগ তল্লাশিতে ২ কেজি AL FAKHER সিসা পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে সামি জানান, তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন অর্ডার অনুযায়ী সিসা সরবরাহের ডেলিভারি বয়, এবং তিনি শুধু একাই নন, এটির পেছনে একাধিক ব্যক্তি কাজ করছে। তিনি আরও স্বীকার করেন, চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক আব্দুল আলিম ওয়াসিফ।
সামির দেওয়া তথ্য যাচাই করে ডিএনসি দল দ্রুত উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়াম প্লাজায় অবস্থিত ইনোভেট আইটি বেইজ দোকান শনাক্ত করে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। ওই রাতেই দোকানে সন্দেহজনক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের পর দোকানের মালিক আব্দুল আলিম ওয়াসিফকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে স্টোর রুম তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয়, ১৬ কেজি AL FAKHER সিসা (১৬ জার), ৩টি হুক্কা সেট, ২টি পাইপ, চারকোল ১০ প্যাকেট, আইফোন, ৫টি ওয়াইফাই সিসিটিভি ক্যামেরা।
ডিএনসি মহাপরিচালক হাসান মারুফ দাবি করেন, ওয়াসিফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিসা সরবরাহ করতেন এবং সামি তার হয়ে ডেলিভারি দিতো। জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিফ স্বীকার করেন, সে দীর্ঘদিন ধরে আইটি পণ্য বিক্রির আড়ালে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে সিসা সরবরাহ করতো এবং তার একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল।
গ্রেফতার দুই আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্য সদস্যদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে; শিগগি আরও অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান হাসান মারুফ।
ক্রেতা সেজে ফাঁদপাতা অভিযান সম্পর্কে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, নজরদারি ও অভিযানের কারণে অফলাইনে বন্ধ রেখে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে সিসা অনলাইনে বিক্রি করছিল একটি চক্র। আমরা প্রথমে সেই পেজটা শনাক্ত করি। সেখানকার বিজ্ঞাপনগুলো অনুসরণ করি। বিজ্ঞাপনগুলো সব জায়গায় ভিজিবল না। কারণ তাদের নিজস্ব কিছু গ্রুপ আছে। সেসব গ্রুপের মধ্যে বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হয়।
মেহেদী হাসান বলেন, চক্রটিকে অনুসরণ করতে প্রথমেই গ্রুপে মেম্বার হয়েছি, ছদ্দবেশে সে গ্রুপের মেম্বার হয়ে বিজ্ঞাপনগুলো দেখি। নিয়ম মেনে আমরা নিজেরাই ক্রেতা সেজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, ফ্লেভার সম্বন্ধে জানতে হয়, তারা কিছু কোড নেম ব্যবহার করে। সেগুলোও আমাদের জানতে হয়েছে। আমরা অনলাইনে অর্ডার করার পর চক্রটি আমাদের অর্ডারকে এক্সেপ্ট করে।
তারা ভিডিও পাঠিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন ধরনের স্যাম্পেল দেখাচ্ছিল আমাদের। এরপর আমরা স্যাম্পল অ্যাপ্রুভ করার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, দাম, ডিসকাউন্ট, এক্সপায়ার তারিখ জানতে চাই। যেন প্রকৃত ক্রেতা মনে করে। কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড, ফ্লেভার নিশ্চিত করে অর্ডার করার পর আমরা দুইভাগে অভিযানে নামি। মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ডেলিভারি দেয়। তখন প্রথমে ডেলিভারিম্যানকে পরে মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়।
টিটি/এএমএ
What's Your Reaction?