অর্থনৈতিক শুমারিতে বাদ পড়েছিল ৩ লাখ ৬৫ হাজার ইউনিট

২০২৪ সালের অর্থনৈতিক শুমারিতে মোট ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭২টি অর্থনৈতিক ইউনিট বাদ পড়েছিল। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত ৩৫২টি নমুনা এলাকায় পোস্ট অ্যানুমারেশন চেক (পিইসি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। পিইসি অনুযায়ী শুমারির কভারেজ হার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ, আর বাদ পড়ার হার ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বাদ পড়া সবচেয়ে বেশি হয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সেবা খাতের ইউনিটে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারির গুণগত মান যাচাই করতে পিইসি পরিচালনা করে বিআইডিএস ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস ভবনে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়—শুমারিতে দেশের মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রাথমিক হিসাব ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। পিইসির মূল্যায়নে প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৬টি, যা প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। মূল আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, পরিকল্পনা

অর্থনৈতিক শুমারিতে বাদ পড়েছিল ৩ লাখ ৬৫ হাজার ইউনিট

২০২৪ সালের অর্থনৈতিক শুমারিতে মোট ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭২টি অর্থনৈতিক ইউনিট বাদ পড়েছিল। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত ৩৫২টি নমুনা এলাকায় পোস্ট অ্যানুমারেশন চেক (পিইসি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।

পিইসি অনুযায়ী শুমারির কভারেজ হার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ, আর বাদ পড়ার হার ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বাদ পড়া সবচেয়ে বেশি হয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সেবা খাতের ইউনিটে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারির গুণগত মান যাচাই করতে পিইসি পরিচালনা করে বিআইডিএস ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস ভবনে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়—শুমারিতে দেশের মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রাথমিক হিসাব ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। পিইসির মূল্যায়নে প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৬টি, যা প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।

মূল আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে পিইসি প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।

পিইসিতে দেশের আট বিভাগ থেকে ৩৫২টি নমুনা এলাকা নির্বাচন করা হয়। ঢাকা বিভাগে ১০০, চট্টগ্রামে ৬৩, রাজশাহীতে ৪৮, খুলনায় ৪২, রংপুরে ৪০, ময়মনসিংহে ২৪, বরিশালে ১৯ এবং সিলেটে ১৬টি এলাকা। গ্রাম, শহর, পৌরসভা, উপজেলা সদর ও সিটি করপোরেশন—সব ধরনের এলাকার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয় যাতে কোথায় কত ত্রুটি হয়েছে তা নির্ভুলভাবে বোঝা যায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাদ পড়ার হার সব অঞ্চলে এক রকম ছিল না। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাদ পড়া সবচেয়ে বেশি, কারণ এসব এলাকায় দ্রুত ব্যবসা স্থানান্তর, নতুন উদ্যোগের সূচনা এবং অস্থায়ী বা অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের আধিক্য দেখা যায়। ক্ষুদ্র সেবাভিত্তিক ব্যবসা, অস্থায়ী স্টল, ফুটপাতের দোকান এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ইউনিট অধিক হারে বাদ পড়েছে। বিপরীতে, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ও কর শনাক্তকরণ নম্বর থাকা ইউনিট প্রায় সব ক্ষেত্রেই শুমারিতে ধরা পড়েছে।

শুধু বাদ পড়াই নয়, পিইসি শুমারি ও পিইসির উত্তরের মধ্যে তথ্য-অসঙ্গতিও সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখে। দেখা যায়—প্রতিষ্ঠানের ধরনে প্রায় ১৪ শতাংশ, কার্যক্রমের ধরনে ৮ শতাংশ, মালিকানা তথ্যের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ, আর অগ্নি নিরাপত্তা তথ্যের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভিন্নতা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অসঙ্গতি পাওয়া গেছে ব্যবসা নিবন্ধনের তথ্য–এ, যেখানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে তথ্য মিলেনি।

বিআইডিএস জানায়—এসব অসঙ্গতি মূলত উত্তরদাতার ভুল বোঝা, তথ্য ব্যাখ্যার অসুবিধা বা অনির্দিষ্টতা থেকে এসেছে; এগুলোকে কোনো পরিকল্পিত ভুল হিসেবে দেখা হয়নি।

পিইসি বলছে, কোনো ধরনের উদ্দেশ্যমূলক পক্ষপাত বা প্রণোদিত ত্রুটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ত্রুটিগুলো ছিল এলোমেলো, যা শুমারির সামগ্রিক নির্ভরযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। তবে শহরাঞ্চল, অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা ও নতুন খাতগুলোতে তদারকি আরও জোরদার করা, মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ বাড়ানো এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা উন্নত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পিইএসে ধরা পড়েছে ২.৯৫ শতাংশ নেট কাভারেজ এরর, যা বিশেষজ্ঞদের মতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য। তারা যোগ করেন, কোনো দেশের অর্থনৈতিক শুমারিতেই শূন্য কাভারেজ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

শুমারি পরিচালনায় মাঠপর্যায়ের এনুমারেটরদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে অর্থনৈতিক শুমারির সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও বর্তমান পরিকল্পনা সচিব শাকিল আকতার বলেন, শুমারির সঠিকতা নির্ভর করে ডেটা সংগ্রহকারীর দক্ষতা, তাদের প্রশিক্ষণ, প্রবেশাধিকার (অ্যাক্সেস) এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের ওপর। তিন থেকে পাঁচ দিনের স্বল্প ট্রেনিংয়ে বৃহৎ ও জটিল ম্যানুয়াল শেখা কঠিন, অথচ এরা শুমারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তিনি বলেন, অনেক গার্মেন্টস কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা সংবেদনশীল জায়গায় অ্যানুমারেটরদের প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায় তথ্য সংগ্রহ বিঘ্নিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মী, ব্যবস্থাপনা, কিংবা মালিকপক্ষ তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, পিইসির ফলাফল দেশের বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। তারা মনে করেন—শুমারিতে বাদ পড়া ইউনিটের হার তুলনামূলক কম হলেও তা নীতিনির্ধারণ, আঞ্চলিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার ডাটাবেইস হালনাগাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমওএস/এমআইএইচএস/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow