আটক আ.লীগ নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে তোপের মুখে পুলিশ 

5 days ago 11

রাজশাহীতে আটক আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে তোপের মুখে পুলিশ। দিনভর ওই নেতাকে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে তাকে নগরীর সাধুর মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। এ ছাড়া তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। সফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। পরে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নে। একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি। অধ্যাপক সফিকুলের গ্রামের বাড়ি বাগমারায় হলেও তিনি শহরের বাসার রোড এলাকায় থাকেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পিএম সফিকুল ইসলামকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সাধুর মোড় এলাকার একটি জায়গায় নিয়ে যায় স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা দিলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত দুই লাখ টাকা দিতেও রাজি হন পিএম সফিকুল। 

এরই এক পর্যায়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মারমুখী হয়ে ওঠে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের ওপর চড়াও হন কেউ কেউ। পুলিশকে আক্রমণও করা হয়। এতে পুলিশের এক এসআই আহত হয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার ২০ হাজার টাকাও খোয়া গেছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ওই কর্মকর্তাকে আটক এবং পুলিশ গিয়ে ছাড়ানোর সময়ের একটি ভিডিও কালবেলার হাতে আসে। ভিডিওতে দেখা গেছে, পিএম সফিকুল ইসলামকে কয়েকজন পুলিশ ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দিচ্ছেন এবং মারমুখী আচরণ করছেন। এক পর্যায়ে পিএম সফিকুলকে মারধর করা হয়। এসময় ‘আওয়ামী লীগের পুলিশ’ বলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ করা হয়।

পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় পিএম সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলাম। আমি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। আমার নামে কোনো মামলাও নেই।’ তিনি জানান, স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও পাড়ার ছেলেরা তাকে আটকে রেখেছিলেন। তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সোহাগ নামের একজনকে দিয়ে পিএম সফিকুল ইসলাম ২ লাখ টাকা নিয়েও আসে। কিন্তু এরই মধ্যে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় পাড়ার ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপরও আক্রমণ করে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ কালবেলাকে বলেন, পিএম সফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে কোনো মামলা নেই। তবে তাকে এখনো বোয়ালিয়া থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এখন বাগমারা থানায় তার নামে কোনো মামলা আছে কি না সেটি আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

পুলিশের ওপর আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এটা হয়েই থাকে। কেননা, কোনো আসামিকে যখন পুলিশ আটক করতে যায়, তখন নানা ধরনের মানুষ আসামিকে মারধর করার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের গায়েও তো ধাক্কা লাগে। 

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।

Read Entire Article