আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস কেন এত মলিন

একজন পুরুষ-ছেলে, ভাই, স্বামী, বাবা, পরিবারে অনেকগুলো ভূমিকা পালন করেন। দায়িত্বও বেশি। ভালো ছেলে হওয়া তারপর ভালো স্বামী, ভালো বাবা হওয়া। এতসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন নিজেকেই ভুলে যান যে তিনিও একজন আলাদা সত্তা। আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। এই দিবস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে কোথাও তেমন কোনো আওয়াজ নেই। নেই অফার, ক্যাম্পেইন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা আলোচনার ঝড়। ক্যালেন্ডারে ১৯ নভেম্বর এলেই দৃশ্যটা উল্টো। যেন কেউ জানেনই না! পুরুষ দিবস এত নিস্তেজ কেন? উপেক্ষা, ভুলে যাওয়া নাকি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীর পক্ষপাত? সমাজে পুরুষদের নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা আছে, তারা নাকি সব সময় শক্ত, দৃঢ় আর অনুভূতি-পরিচালনায় দক্ষ। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের বলা হয়, ‘কাঁদা যাবে না’, ‘ভয় পেলে চলবে না’, ‘দুর্বলতা দেখানো মানা’। এই মানসিকতার ফলে পুরুষেরা অনেক সময় নিজের কষ্ট, মানসিক চাপ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছুই প্রকাশ করেন না। যেহেতু তাদের সমস্যা প্রকাশ পায় না, সমাজও ধরে নেয় পুরুষ দিবস পালনের তেমন প্রয়োজন নেই। আরেকটি বড় কারণ হলো, দৃষ্টিভঙ্গিগত অসমতা। পুরুষদের সমস্যাগুলোকে অনেকেই বাস্তব সমস্যা হিসেবে মানতে চান না।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস কেন এত মলিন

একজন পুরুষ-ছেলে, ভাই, স্বামী, বাবা, পরিবারে অনেকগুলো ভূমিকা পালন করেন। দায়িত্বও বেশি। ভালো ছেলে হওয়া তারপর ভালো স্বামী, ভালো বাবা হওয়া। এতসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন নিজেকেই ভুলে যান যে তিনিও একজন আলাদা সত্তা।

আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। এই দিবস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে কোথাও তেমন কোনো আওয়াজ নেই। নেই অফার, ক্যাম্পেইন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা আলোচনার ঝড়। ক্যালেন্ডারে ১৯ নভেম্বর এলেই দৃশ্যটা উল্টো। যেন কেউ জানেনই না! পুরুষ দিবস এত নিস্তেজ কেন? উপেক্ষা, ভুলে যাওয়া নাকি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীর পক্ষপাত?

সমাজে পুরুষদের নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা আছে, তারা নাকি সব সময় শক্ত, দৃঢ় আর অনুভূতি-পরিচালনায় দক্ষ। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের বলা হয়, ‘কাঁদা যাবে না’, ‘ভয় পেলে চলবে না’, ‘দুর্বলতা দেখানো মানা’। এই মানসিকতার ফলে পুরুষেরা অনেক সময় নিজের কষ্ট, মানসিক চাপ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছুই প্রকাশ করেন না। যেহেতু তাদের সমস্যা প্রকাশ পায় না, সমাজও ধরে নেয় পুরুষ দিবস পালনের তেমন প্রয়োজন নেই।

আরেকটি বড় কারণ হলো, দৃষ্টিভঙ্গিগত অসমতা। পুরুষদের সমস্যাগুলোকে অনেকেই বাস্তব সমস্যা হিসেবে মানতে চান না। অনেকের ধারণা, পুরুষেরা ‘প্রিভিলেজড’, তাই তাদের আলাদা দিবসের প্রয়োজন নেই। অথচ বাস্তবে কর্মজীবনের চাপ, আত্মহত্যার হার, আসক্তি, পরিবারে দায়িত্ব এমন কিছু ক্ষেত্রে পুরুষেরা বেশি সংকটে থাকে।

কোনো প্রতিষ্ঠান পুরুষ দিবসে তেমন আগ্রহ দেখায় না। পুরুষ দিবসে কয়েকটি পোস্ট দিয়েই দায়িত্ব সারার মতো ব্যাপার। যেখানে আলো নেই, সেদিকে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসও কম।

এ ছাড়া অনেকেই জানেনই না যে, পুরুষ দিবসের উদ্দেশ্য কী? এটি শুধু উদযাপনের দিন নয়; পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য, দায়িত্ব, ইতিবাচক রোল মডেল, পরিবার ও সমাজে তাদের অবদান এসব বিষয় সামনে আনার দিন। উদ্দেশ্য অস্পষ্ট থাকায় দিবসটির গুরুত্বও কমে যায়।

বিশ্ব পুরুষ দিবস প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে। মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার দিকে মনোযোগ দেওয়া, লিঙ্গভিত্তিক সমতা নিশ্চিত করা, পরিবার ও সমাজে পুরুষদের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরা এবং মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বব্যাপী এটি উদযাপিত হয় ১৯ নভেম্বর, যেখানে পুরুষদের জীবনের নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো হয়।

সবশেষে একটি মজার দিক হলো, পুরুষেরা নিজেরাই কখনো কখনো উদযাপনে আগ্রহ দেখান না। অনেক সময় তারা মজা করে বলেন, আমাদের আবার দিবস লাগে নাকি! এ ধরনের মনোভাব দিবসটিকে আরও পিছিয়ে দেয়। পরিবারে পুরুষদের নীরব অবদান সাধারণ হিসেবে ধরা হয়, ফলে তাদের কেয়ার বা আবেগ-অনুভূতির জায়গা নিয়ে আলোচনা কম হয়।

তাহলে কি পুরুষ দিবসের প্রয়োজন নেই? বরং আরও বেশি প্রয়োজন। সমাজের ভারসাম্য তখনই তৈরি হয় যখন নারী-পুরুষ উভয়ের অনুভূতি, স্বাস্থ্য, চাহিদা ও চাপ সমানভাবে গুরুত্ব পায়। পুরুষদের নীরব সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া মানেই সামাজিক উন্নতির আরেক ধাপ। পুরুষ দিবস মলিন নয়, শুধু আলো এখনো পুরো শক্তিতে জ্বলে ওঠেনি। যেদিন সমাজ পুরুষদের নীরব দায়িত্ব, ক্লান্তি ও অবদান বোঝা শুরু করবে সেদিনই পুরুষ দিবসও সমান উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন
যে হাটে সংসারের গল্প বিক্রি হয় রঙিন পসরা সাজিয়ে
‘এমএ পাস চা ওয়ালা’র সাফল্যের গল্প বললেন সহিদুল

কেএসকে/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow