আলোর পথ মুক্তির দ্বার
অস্থিরতা, উন্মাদনা, বিশৃঙ্খলা-আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নিত্যকার বিষয়। অথচ আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আলোর পথে যাত্রা। যেখানে উন্নতি, অগ্রগতি, আধুনিকতা ইতিবাচকতা অন্ধকার ঠেলে এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চলেছি পশ্চাতে। পৃথিবী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে। আর আমরা বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজছি ফিকাহ হাদিস চষে। দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধের বড়ই অভাব। নিজের কাজ, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নামই যে দেশপ্রেম সেটা মানি না। অথচ কথা কথায় দেশপ্রেমের বুলি উড়াই। আমাদের পিছনে ফেরার আর কোনো অবকাশ নেই। এজন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করাই সময়ের দাবি। এজন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে কুসংস্কারমুক্ত একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি। একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়েই আমাদের আলোর পথে যাত্রা করতে হবে। সমাজকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করতে হলে নানা স্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শিক্ষার প্রসার: সমাজের উন্নতির মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
অস্থিরতা, উন্মাদনা, বিশৃঙ্খলা-আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নিত্যকার বিষয়। অথচ আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আলোর পথে যাত্রা। যেখানে উন্নতি, অগ্রগতি, আধুনিকতা ইতিবাচকতা অন্ধকার ঠেলে এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চলেছি পশ্চাতে। পৃথিবী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে। আর আমরা বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজছি ফিকাহ হাদিস চষে।
দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধের বড়ই অভাব। নিজের কাজ, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নামই যে দেশপ্রেম সেটা মানি না। অথচ কথা কথায় দেশপ্রেমের বুলি উড়াই। আমাদের পিছনে ফেরার আর কোনো অবকাশ নেই। এজন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করাই সময়ের দাবি। এজন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে কুসংস্কারমুক্ত একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি। একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়েই আমাদের আলোর পথে যাত্রা করতে হবে।
সমাজকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করতে হলে নানা স্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
শিক্ষার প্রসার: সমাজের উন্নতির মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, কুসংস্কার দূর করে এবং নতুন ধারণা গ্রহণে সহায়তা করে। সচেতনতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা (যেমন: দুর্নীতি, লিঙ্গবৈষম্য, পরিবেশ দূষণ) সম্পর্কে গণমাধ্যমে ও সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
মানুষ সচেতন হলে নিজেরাই সমাধানের অংশ হয়ে উঠবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এটি মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা ও আস্থার জন্ম দেয়। উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান: তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা মনোভাব তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা: পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা, সততা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেওয়া উচিত। নারীর ক্ষমতায়ন: সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হলো নারী। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হলে সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
পৃথিবী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) যুগে। আর আমরা বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজছি ফিকাহ হাদিস চষে। দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধের বড়ই অভাব। নিজের কাজ, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নামই যে দেশপ্রেম সেটা মানি না। অথচ কথা কথায় দেশপ্রেমের বুলি উড়াই। আমাদের পিছনে ফেরার আর কোনো অবকাশ নেই। এজন্য ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করাই সময়ের দাবি। এজন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে কুসংস্কারমুক্ত একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ: সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল আচরণ সমাজ পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রাখে। এই কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং ব্যক্তিবিশেষের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
দুই.
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং সামগ্রিক সমাজ পরিবর্তনে লাইব্রেরি আন্দোলন একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। লাইব্রেরি আন্দোলন বলতে শুধু নতুন গ্রন্থাগার স্থাপন নয়, বরং বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোর আধুনিকীকরণ এবং পাঠাভ্যাসকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করাকে বোঝায়। এটি নিশ্চিত করতে কিছু মূল পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন: গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিক কেন্দ্রে পরিণত করা: লাইব্রেরিগুলোকে শুধু বই রাখার জায়গা না রেখে মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, কমিউনিটি লার্নিং হাব এবং বিতর্কের মঞ্চ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
পাঠাভ্যাসকে জনপ্রিয় করা: তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি, যেমন—বই রিভিউ প্রতিযোগিতা, লেখক পরিচিতি পর্ব, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং পাঠচক্রের আয়োজন করতে হবে। সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা: সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে বই সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি এই ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রযুক্তিগত ব্যবহার: ই-বুক, অডিওবুক এবং অনলাইন রিসোর্স ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পাঠকরা পরিচিত হতে পারে।
সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ: স্থানীয় সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের যৌথ উদ্যোগে লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। নীতিগত সমর্থন ও তহবিল: সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে লাইব্রেরি আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল ও নীতিগত সমর্থন নিশ্চিত করা জরুরি। লাইব্রেরি আন্দোলন মানুষের জ্ঞানচর্চাকে প্রসারিত করে, সমালোচনামূলক চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায় এবং একটি আলোকিত ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে সহায়তা করে।
তিন.
শিক্ষার আলো মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করে এবং সঠিক বিচার-বিবেচনা তৈরি করে। যে কোনো বিষয়কে যুক্তি দিয়ে বিচার করা এবং অন্ধভাবে বিশ্বাস না করা গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং প্রাকৃতিক নিয়মাবলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করে। প্রচলিত বিশ্বাসগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে ভুল ধারণাগুলো দূর করা সম্ভব।
সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার মনোভাব কুসংস্কার দূর করে একটি সুষম সমাজ গঠনে সাহায্য করে। ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো জেনে গোঁড়ামি ও অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করা প্রয়োজন। অনেক ধর্মীয় নেতা এবং প্রতিষ্ঠান এই লক্ষ্যে কাজ করছে। গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অনুষ্ঠান, নাটক ও অন্যান্য পরিবেশনার মাধ্যমে কুসংস্কার দূর করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে ব্যক্তি ও সমাজ ধীরে ধীরে অন্ধকার, কুসংস্কার থেকে আলোর পথে অগ্রসর হতে পারে।
চার.
কুসংস্কার থেকে বিজ্ঞান মানুষকে মুক্ত করতে পারে। যথার্থ শিক্ষা ও যুক্তিবোধ মানুষকে উদার করে। ফলে মানুষের চিন্তা যুক্তিনির্ভর হয়। শিক্ষার অভাব মানুষকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, আর তখনই কুসংস্কারগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বর্তমানে অনেক সংগঠন বক্তৃতা বা পথসভার মাধ্যমে মানুষের মনের এই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
মানুষ বহুদিনের চেষ্টায় বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে এই সভ্যতা গড়ে তুলেছে। কিন্তু অজস্র কুসংস্কার অনেক সময় মানুষের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিজ্ঞানকে দিয়েই কুসংস্কারকে প্রতিহত করতে হবে।
পাঁচ.
ধর্মীয় উন্মাদনা একটি জটিল সামাজিক সমস্যা এবং এটি বন্ধ করার জন্য বহুমুখী ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা তৈরি করা। পাঠ্যসূচিতে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গঠনের উপর জোর দেওয়া উচিত। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা, মতবিনিময় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা। ধর্মীয় নেতারা ধর্মের মূল মানবিক ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাগুলো প্রচার করবেন এবং ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকবেন। গণমাধ্যমগুলো ধর্মীয় বিষয়গুলো সংবেদনশীলতার সাথে উপস্থাপন করবে এবং এমন কোনো খবর প্রচার করবে না যা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সাংস্কৃতিক সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তরুণদের এই কাজে যুক্ত করা এবং তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার মনোভাব তৈরি করা।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এটা হতে হবে সঠিক শিক্ষা। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত শিক্ষার নীতিমালাই ঠিক হলো না। কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, বাংলা মাধ্যম এবং ইংরেজি মাধ্যমের মতো বিভিন্ন শিক্ষা ধারায় নানারকম সংকট বিদ্যমান। কিন্ডারগার্টেনগুলোতে সঠিক তদারকি ও নীতিমালার অভাব, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর লাগামহীন পরিচালনা, এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অভাব প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এছাড়াও, শিক্ষার গুণগত মান, কারিকুলামের সমন্বয়, এবং শিক্ষার্থীদের পেশাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সমন্বিত কাঠামোর অভাব রয়েছে। এই বহুমুখী সংকট সমাধানের জন্য, একটি সমন্বিত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা সকল শিক্ষা ধারাকে সমান গুরুত্ব দেবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) যুগে কর্মমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিবান্ধব, কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ।
এইচআর/জেআইএম
What's Your Reaction?