আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের অর্থ, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মুফতি মোহাম্মদ আদনান তাওয়াক্কুল শব্দের শাব্দিক অর্থ কারো ভরসা করা ও আস্থা রাখা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখা। ইসলামের পরিভাষায় তাওয়াক্কুল বলে তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসাই বোঝানো হয়ে থাকে। তাওয়ক্কুল একজন সত্যিকার মুমিনের অন্যতম গুণ বা বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, ভরসা ও আস্থা রাখে। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি পায়। তাওয়াক্কুলকে জীবনের পথে স্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করা যায়। স্বপ্ন যেমন মানুষকে বড় হতে উদ্বুদ্ধ করে, চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসাও মানুষকে চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে ও সফলতার পথে নিয়ে যায়। স্বপ্ন যেমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলও চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় শক্তি ধরে রাখতে, বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করবে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন; তিনি প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধা
মুফতি মোহাম্মদ আদনান
তাওয়াক্কুল শব্দের শাব্দিক অর্থ কারো ভরসা করা ও আস্থা রাখা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখা। ইসলামের পরিভাষায় তাওয়াক্কুল বলে তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ বা আল্লাহর ওপর ভরসাই বোঝানো হয়ে থাকে।
তাওয়ক্কুল একজন সত্যিকার মুমিনের অন্যতম গুণ বা বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, ভরসা ও আস্থা রাখে। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি পায়।
তাওয়াক্কুলকে জীবনের পথে স্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করা যায়। স্বপ্ন যেমন মানুষকে বড় হতে উদ্বুদ্ধ করে, চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসাও মানুষকে চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে ও সফলতার পথে নিয়ে যায়। স্বপ্ন যেমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলও চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় শক্তি ধরে রাখতে, বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
কোরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করবে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন; তিনি প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছেন। (সুরা তালাক: ৩)
হাদিসে আল্লাহর ওপর দৃঢ় তাওয়াক্কুলকে তুলনা করা হয়েছে পাখির তাওয়াক্কুলের সঙ্গে। নবীজি (সা.) বলেন, একদল মানুষ জান্নাতে যাবে যাদের হৃদয় পাখির হৃদয়ের মতো হবে। (সহিহ মুসলিম: ২৮৪) অর্থাৎ যাদের হৃদয়ের ইমান ও ভরসা পাখির ভরসার মতো দৃঢ় হবে।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমরা আল্লাহর ওপর প্রকৃত অর্থে তাওয়াক্কুল করতে, তাহলে পাখির মত রিজিক পেতে। পাখি সকাল বেলা খালি পেটে বের হয়ে সন্ধ্যায় ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসে। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৪৪)
হাদিসের এই তুলনা বা উদাহরণ বুঝতে হলে পাখির জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। পাখির জীবনব্যবস্থার চারটি বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরছি:
১. পাখি কখনো তার বাসায় খাবার জমিয়ে রাখে না। অসুস্থ থাকলে কিংবা সন্তান জন্ম দিলেও আগামীকাল কী খাবে এই চিন্তা তার মধ্যে থাকে না। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় তুফান, খরা, মহামারী কোনো অবস্থাতেই সে আগামীকাল খাবার পাবে কিনা তা ভাবে না। তাই কোনো পাখির বাসা ভাঙলে সেখানে সামান্য দানাপানিও পাওয়া যায় না।
২. পাখিরা তাওয়াক্কুল করে ঘরে বসেও থাকে না, বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের পাশাপাশি রিজিকের সন্ধানে প্রতিদিন ভোরে বের হয়ে যায় এবং যতটুকু রিজিক পায় তাতে সন্তুষ্ট হয়ে ঘরে ফেরে। আবার পরবর্তী দিন সকাল থেকে পরিশ্রম শুরু করে।
৩. পাখি বাসস্থান নির্মাণ বা সংসার গঠনের ক্ষেত্রেও নিজের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী হবে এমন শক্তপোক্ত বাসা পাখি বানায় না। বরং উপস্থিত মৌসুমের দিনগুলো পার করার জন্য অস্থায়ী বাসা বানায়।
৪. পাখির তাওয়াক্কুলের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো তার একাগ্রতার গুণ। পাখি আল্লাহর ওপর ভরসা করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে নিয়মিত পরিশ্রম করে যায়।
অথচ কত মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও অল্পতেই নিরাশ হয়ে যাইয়। ডিপ্রেশনে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়। উন্নত কিছু দেশে অঢেল অর্থ-কড়ি, উন্নত শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ ডিপ্রেশনে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এর মূলে আছে তাওয়াক্কুল বা সর্বশক্তিমানের ওপর বিশ্বাস ও ভরসারও অভাব। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আত্মহত্যাকে রোধ করে। কোনো মুমিন আত্মহত্যা করতে পারে না। (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৬৯)
আল্লাহর উপর ভরসাকারীদের সবচেয়ে বড় প্রতিদান হলো জান্নাত। ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা ঝাড়ফুঁক করায় না, পাখি উড়িয়ে শুভ-অশুভ লক্ষণ বিচার করে না, শরীরে আগুনের দাগ লাগায় না, বরং সব সময় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে। (সহিহ মুসলিম: ৪১৩)
লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা
ওএফএফ
What's Your Reaction?