সাভারের সিআরপি থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় মায়ের সঙ্গে এসেছিলেন মো. শুভ মিয়া। একটি চেয়ারে বসে অনুষ্ঠান দেখছিলেন। বাম পায়ের হাঁটু সোজা করতে পারছিলেন না। নার্ভের সমস্যার কারণে গোড়ালিও কাজ করে না তার। চেয়ারে বসে থাকতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল তার।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সন্তান ও অভিভাবক ফোরামের আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদ পরিবার ও আহত ছাত্র জনতার দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সন্তান ও অভিভাবক সম্মেলনে’ অংশ নিতে এসেছিলেন মো. শুভ মিয়াসহ আহত অনেক শিক্ষার্থী, নানা পেশার নানা বয়সী মানুষ। এ সময় যেন আহতদের বেদনা হৃদয় ছুঁইয়ে গেল।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শুভ মিয়া। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবাকে হারান। মো. শুভ মিয়া বলেন, ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে পাকুন্দিয়ায় বাম পায়ে হাঁটুর পেছনে শেল লাগে। শেলে নার্ভ ইনজুরি হয়েছে। সিআরপিতে মা আমার সঙ্গে রয়েছে।
ছবি : আহত শুভ মিয়া।
শহীদ গোলাম নাফিসের বাবা বলেন, ৪ আগস্ট, গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে পুলিশ যখন রিকশার পাদানিতে তুলে দেয়, তখনো সে রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল। রিকশাচালক তাকে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বাধা দিয়েছিল। সেই ছবি মুহূর্তের মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার সন্তানকে হারালেও, যারা আহত হয়েছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন তাদের সেবা দিতে প্রস্তুত। কীভাবে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় সেটা আমাদের ভাবতে হবে।
সিলেট ক্যান্টনমেন্টের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকী জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়ায় তার ও ১৩ বছর বয়সী ছোট ভাইয়ের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন সবার সামনে।
সাকী বলেন, আধাঘণ্টা নির্মম নিযাতনের পরও যখন আমি অজ্ঞান হই না, তখন আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। আমি অজ্ঞান হলে ছোট ভাই ভেবেছিল, আমি মারা গেছি।
উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ আহতদের উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের যে ঘাটতি রয়েছে এটা পূরণ করতে হবে। আমরা যেন একটি গণমানুষের নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি সেজন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তারা তাদের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনে আমাদের দায়িত্ব সীমাহীন। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এজন্য তিনি নিহত ও আহত অভিভাবকদের একসঙ্গে বসার আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত নাজুক, তদুপরি আহতদের সুচিকিৎসার জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। যারা এখনো চিকিৎসাসেবায় পিছিয়ে আছেন তাদের চিকিৎসা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে এবং পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।
এর আগে তিনি শহীদ মিনারে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। তিনি আহতদের সান্ত্বনা দেন এবং নতুন দিনের স্বপ্ন একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ, বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ সংগঠনের আহ্বায়ক ডাক্তার কাজী সাইফউদ্দিন, ডাক্তার ইসরাত জাহান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশের সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু, নারী সংস্কার কমিটির প্রধান শিরীন হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং শহীদ ও আহত পরিবারের অভিভাবক প্রমুখ।
সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, নাদিম কাওয়াল, সাইদুর রহমান বয়াতি, বাউল শফি মণ্ডল, টিম এস ওমিক্স, বটতলা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সমগীত, দ্য কমরেডস্, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি।