ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন?

ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। দীর্ঘ সময় পর এ সংকট সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই শান্তি পরিকল্পনার মূল কথা হচ্ছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার শর্ত সংবিধানে সংযুক্ত করবে এবং দখল হওয়া লুহানস্ক, দোনেস্ক, খেরসন এবং ঝাপোরঝিয়া অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রাশিয়ার জয় বনাম ক্ষয়ক্ষতিএই শান্তি পরিকল্পনা আপাতত দৃষ্টিতে রাশিয়ার জয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে রনাঙ্গণে দুই পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেদিক বিবেচনায় রাশিয়া এ যুদ্ধে কি হারালো এবং চুক্তি বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ার জন্য যেসব বিষয় মেনে নিতে হবে তা নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের ওপর পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ২০২৫ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়ার ১১ লাখ ৬৪ হাজার সৈন্য কোনো না কোনো ভাবে আহত হয়েছে। ইউক্রেনের জাতীয় বার্তা সংস্থা ইউক্রেইনিফর্মের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (২২ নভেম্বর) জেনারেল স্

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন?

ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। দীর্ঘ সময় পর এ সংকট সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই শান্তি পরিকল্পনার মূল কথা হচ্ছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার শর্ত সংবিধানে সংযুক্ত করবে এবং দখল হওয়া লুহানস্ক, দোনেস্ক, খেরসন এবং ঝাপোরঝিয়া অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

রাশিয়ার জয় বনাম ক্ষয়ক্ষতি
এই শান্তি পরিকল্পনা আপাতত দৃষ্টিতে রাশিয়ার জয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে রনাঙ্গণে দুই পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেদিক বিবেচনায় রাশিয়া এ যুদ্ধে কি হারালো এবং চুক্তি বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ার জন্য যেসব বিষয় মেনে নিতে হবে তা নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।

২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের ওপর পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ২০২৫ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়ার ১১ লাখ ৬৪ হাজার সৈন্য কোনো না কোনো ভাবে আহত হয়েছে।

ইউক্রেনের জাতীয় বার্তা সংস্থা ইউক্রেইনিফর্মের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (২২ নভেম্বর) জেনারেল স্টাফ তাদের ফেসবুক পোস্টে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও জনশক্তির সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে প্রায় সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে রাশিয়ার ভারী অস্ত্র ও যুদ্ধযান ধ্বংসের সংখ্যা বিপুলহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনফিন ডট কম ডট ইউএ-এর তথ্য মতে, রাশিয়ার এ যুদ্ধে ১ লাখ ১৬ হাজার ডলার মূল্যের সামরিক অস্ত্র ধ্বংস হয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ হিসাব
ট্যাঙ্ক: ১১,৩৬১টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +৪), সাঁজোয়া যুদ্ধযান (এএফভি): ২৩,৬০৭টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +৭)

আর্টিলারি সিস্টেম: ৩৪,৫৫৯টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +৯),মাল্টিপল রকেট লঞ্চার (এমএলআরএস): ১,৫৪৭টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +১)

অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেম: ১,২৪৮টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +১), ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র: ৩,৯৮১টি

যুদ্ধবিমান: ৪২৮টি, হেলিকপ্টার: ৩৪৭টি, ট্যাকটিক্যাল ড্রোন: ৮২,৮৪২টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +২২২)

যানবাহন ও জ্বালানিবাহী ট্রাক: ৬৭,৮৪২টি (গত ২৪ ঘণ্টায় +৭৪),বিশেষ সরঞ্জাম: ৪,০০২টি ,যুদ্ধজাহাজ/কাটার: ২৮টি,সাবমেরিন: ১টি

২৮ দফায় রাশিয়ার জন্য যেসব শর্ত মানতে হবে
মার্কিন প্রস্তাবিত ২৮ দফার ১৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউক্রেন পুনর্গঠন ও বিনিয়োগে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ইউরোক্লিয়ার সেন্ট্রাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরিতে গচ্ছিত রাখা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত সম্পদ ব্যবহার করে এ অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করা হবে। যুদ্ধ শেষে এ তহবিলে ইউরোপ আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে। স্থগিত বাকি রুশ তহবিলের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া যৌথ বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে যাবে। এ বিনিয়োগের লাভের ৫০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র পাবে। এসব শর্তে, ইউরোক্লিয়ার সেন্ট্রাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরিতে স্থগিত বাকি অর্থ রাশিয়া ফেরত পাবে।

আরও পড়ুন:
ইউক্রেনকে ১৪ হাজার কোটি ইউরো ঋণের প্রস্তাবে বেলজিয়ামের আপত্তি

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধসংক্রান্ত চুক্তি
মার্কিন প্রস্তাবের ২৮ দফার ১৭ নম্বর দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধসংক্রান্ত চুক্তিগুলোর মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হবার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৯৪ সালে হওয়া কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস চুক্তি স্টার্ট-১ চুক্তি রয়েছে। ২০১০ সালের নিউ স্টার্ট চুক্তি আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়া) মধ্যে কৌশলগত আক্রমণাত্মক অস্ত্রের হ্রাস ও সীমাবদ্ধতা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছিল স্টার্ট-১। এছাড়াও ১৯৭০ সালে হওয়া নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)র দ্বিতীয় দফা (নিরস্ত্রীকরণ) বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ দফায় বলা হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স) ধীরে ধীরে তাদের অস্ত্র কমানোর প্রতিশ্রুতি দিবে।

সূত্র : আল-জাজিরা, ইউক্রেনিফর্ম, দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তাস, মিনফিন ডট কম

কেএম 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow