এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, যুবশক্তির নেত্রী আটক

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় এক নেতা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার নাম মোতালেব শিকদার (৪২)। তিনি শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মোতালেব যে ফ্ল্যাটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেটি তল্লাশি করে মাদকের অস্তিত্ব পেয়েছে পুলিশ।  নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার ওই ফ্ল্যাটে মাদক সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল বলেও পুলিশ ও বাড়ির মালিকের ভাষ্যে উঠে এসেছে। মোতালেব শিকদার এবং তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নারী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন।  তবে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে গুলি লাগার এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন ওই নারী।  শ্রমিক শক্তির নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন এই তনিমা ওরফে তন্বী অবশ্য বেশ কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাকে রাতে নগরীর সদর থানা এলাকা থেকে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল আটক করে। মহানগর ডিবির ওসি তৈমুর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  আটক তন্বী এনসিপির আরেক সহযোগী সংগঠন যুবশক্তির নেত্রী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও শনাক

এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, যুবশক্তির নেত্রী আটক

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় এক নেতা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার নাম মোতালেব শিকদার (৪২)। তিনি শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মোতালেব যে ফ্ল্যাটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেটি তল্লাশি করে মাদকের অস্তিত্ব পেয়েছে পুলিশ। 

নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার ওই ফ্ল্যাটে মাদক সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল বলেও পুলিশ ও বাড়ির মালিকের ভাষ্যে উঠে এসেছে। মোতালেব শিকদার এবং তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নারী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। 

তবে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে গুলি লাগার এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন ওই নারী। 

শ্রমিক শক্তির নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন এই তনিমা ওরফে তন্বী অবশ্য বেশ কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাকে রাতে নগরীর সদর থানা এলাকা থেকে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল আটক করে।

মহানগর ডিবির ওসি তৈমুর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

আটক তন্বী এনসিপির আরেক সহযোগী সংগঠন যুবশক্তির নেত্রী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ মোতালেবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের লোকজন ও মোতালেব দাবি করেছিলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকায় গাজী মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে তাকে গুলি করা হয়। ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে যেভাবে মাথায় গুলি করা হয়েছে, তাকেও একইভাবে মাথায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা। 

পরে অবশ্য পুলিশ জানতে পারে, রাস্তায় নয়, ফ্ল্যাটের ভেতর গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব। এর পরই নগরীর আল আকসা মসজিদ সরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউসের নিচতলার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি মদের একাধিক বোতল, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটি মোতালেবের বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। এতে রক্তক্ষরণ হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, তার মাথার বাঁ পাশে গুলি লেগেছে। হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ড্রেসিংরুমে তার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত।

মোতালেব শিকদার সোনাডাঙ্গা শেখপাড়া পল্লী মঙ্গল স্কুল এলাকার মৃত মোসলেম শিকদারের ছেলে। তিনি জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক। পেশায় ট্রাকচালক, এক সময় যুবলীগের সক্রিয় কর্মীও ছিলেন।

খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, তারা ফ্ল্যাটটিতে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, ওই ফ্ল্যাট থেকে মাদক ও মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদে বাকিদের নাম জানা যাবে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

সোনাডাঙ্গা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, শনিবার রাত থেকে মোতালেব টানা মুক্তা হাউসের নিচতলার ফ্ল্যাটটিতে ছিলেন। গুলির ঘটনাও ওই ফ্ল্যাটেই ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া তন্বী নামে নারী পলাতক রয়েছেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। 

মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার কালবেলাকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী দুই মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন।

ফ্ল্যাটটিতে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল জানিয়ে বাড়ির মালিক বলেন, পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পারেন তারা। এরপর এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও দেওয়া হয়। 

এদিকে হাসপাতাল থেকে গুলির ঘটনাস্থলের তথ্য পেয়ে ওই এলাকার বিভিন্ন দোকানদার বা পথচারীদের কাছে জানতে চাইলেও কেউ গুলির শব্দ বা কাউকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেননি বলে জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি ফার্মেসির সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায়, মোতালেব রক্তাক্ত অবস্থায় নিজেই পাশের আল-আকসা মসজিদ গলি থেকে বের হন। 

ফুটেজে রোববার মধ্যরাতে একটি প্রাইভেটকারে আরও দুজনসহ তাকে ওই গলিতে ঢুকতেও দেখা যায়। রাস্তায় পড়ে থাকা রক্ত দেখে পুলিশ গলির ১০৯ নম্বর ভবন মুক্তা হাউসে ঢুকে নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। একই সঙ্গে সেখানে থাকা বিদেশি মদ, মদের একাধিক বোতল, ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারতলা মুক্তা হাউসটি উপরের তিনটি ফ্লোরেই মেস হিসেবে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকেন। নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তন্বী নামে পলাতক নারী। 

গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদারের মা রাবেয়া কালবেলাকে বলেন, মোতালেব বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বলছিল মেডিকেলে রোগী নিয়ে যাবে। দুপুর ১২টায় আমরা জানলাম ওকে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। তখন আমরা বাড়ির সবাই হাসপাতালে আসি। আল আকসা মসজিদ গলিতে মোতালেবের ওপর গুলি চালানো ও মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।

স্থানীয় লোকজন জানান, পেশায় ট্রাক ড্রাইভার মোতালেব শিকদার এক সময় যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ২০২২ সালে কার্যনির্বাহী সদস্য ও খুলনার প্রভাবশালী মটর শ্রমিক নেতা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বিপ্লবের ঘনিষ্ঠ এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের অনুসারী ছিলেন তিনি। 

গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ফিরে এসে স্থানীয় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এনসিপি সংগঠক ওয়াহেদুজ্জামান অনিকের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দলটিতে যোগ দেন মোতালেন। মটর শ্রমিক নেতা হওয়ায় দায়িত্ব পান জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়কের। তবে সম্প্রতি অবস্থান জানান দিতে এতিমদের শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করার জন্য নিজের নামে কার্ড ছাপিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

খুলনা মহানগর এন‌সি‌পির সংগঠক রাহাত হোসেন কাল‌বেলা‌কে ব‌লেন, আমরা খোঁজ নি‌য়েছি মোতালেবের গুলির ঘটনাটি কোনো সাংগঠনিক বিষয় নয়। তি‌নি যেখা‌নে গু‌লি‌বিদ্ধ হ‌য়ে‌ছিলেন, সেটা তার একান্ত ব‌্যক্তিগত বিষয়। সংগঠন এ দায়ভার নে‌বে না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow