এ কে খন্দকার: এক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার মহাপ্রয়াণ

এ কে খন্দকারের জীবনের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহূর্ত হলো ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক সেই স্বাক্ষরের সময় তিনি ভারতীয় জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানচিত্র বিনির্মাণে যে কজন মানুষ নিজেদের মেধা ও সাহসের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রেখেছেন, এ কে খন্দকার তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি কেবল একজন সামরিক কর্মকর্তাই ছিলেন না, বরং ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সূর্যোদয়ের সাক্ষী ও কারিগর। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের উপ-সর্বাধিনায়ক, বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান এবং আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার এ কে খন্দকার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হলো। এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সেনানী। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকাবস্থায় বিদ্রোহ করে মুক্তি সংগ্রামে যোগ দেন। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার তাকে মুক্তিবাহিনীর ‘ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ’ নিযুক্ত করে। জেনারেল ওসমা

এ কে খন্দকার: এক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার মহাপ্রয়াণ

এ কে খন্দকারের জীবনের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহূর্ত হলো ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক সেই স্বাক্ষরের সময় তিনি ভারতীয় জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন।

বাংলাদেশের মানচিত্র বিনির্মাণে যে কজন মানুষ নিজেদের মেধা ও সাহসের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রেখেছেন, এ কে খন্দকার তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি কেবল একজন সামরিক কর্মকর্তাই ছিলেন না, বরং ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সূর্যোদয়ের সাক্ষী ও কারিগর।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের উপ-সর্বাধিনায়ক, বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান এবং আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার এ কে খন্দকার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হলো।

এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সেনানী। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকাবস্থায় বিদ্রোহ করে মুক্তি সংগ্রামে যোগ দেন। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার তাকে মুক্তিবাহিনীর ‘ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ’ নিযুক্ত করে। জেনারেল ওসমানীর পর তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ব্যক্তিত্ব।

প্রতিকূল পরিবেশে ভারতের ডিমাপুরে তিনি ‘কিলো ফ্লাইট’ নামক বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনী ইউনিট গঠন করেন, যা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক লগ্নে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেই ঐতিহাসিক স্বাক্ষরের ফ্রেমটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অমর দলিল।

এ কে খন্দকার: এক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার মহাপ্রয়াণ

রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন এ কে খন্দকার/ফাইল ছবি

দেশ স্বাধীনের পর তিনি বিমান বাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলেন। সামরিক জীবনের পর তিনি দেশ ও জাতির সেবায় ভিন্ন মাত্রায় যুক্ত হন।

তিনি ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন একটি স্বাধীন দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে প্রতিষ্ঠা করতে তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল অনন্য।

দুই দফায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে এরশাদ সরকারের সময় তিনি ১৯৮৬ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯০ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

পরবর্তীতে মহাজোট সরকারের সময়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পাবনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য সাহসিকতা, রণকৌশল এবং নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়াও জাতীয় জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক (২০১১) প্রদান করা হয়।

এ কে খন্দকার: এক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার মহাপ্রয়াণ

‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইয়ের লেখক এ কে খন্দকার/ছবি: সংগৃহীত

তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বরপুত্র এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি পাবনা জেলার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সুদীর্ঘ ৯৫ বছরের এক কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবন অতিবাহিত করার পর, বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার এই মহাপ্রয়াণ কেবল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদায় নয়। বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জীবন্ত কিংবদন্তির চিরবিদায়। যার নাম চিরকাল ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়গাথার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকবে। তার রচিত ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ গ্রন্থটি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে থেকে যাবে।

এমডিএএ/এমএমকে/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow