কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদ
ভারতের কলকাতা শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদের নাম ‘নাখোদা মসজিদ’। মসজিদটি মধ্য ও উত্তর কলকাতাসংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট এবং রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে চিতপুর এলাকায় অবস্থিত। এখান থেকেই শুরু হয় কলকাতার বড় বাজার। দ্বিতলবিশিষ্ট এ মসজিদের চাতাল এতটাই বড় যে, লাখো মানুষের জমায়েত হতে পারে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে যেমন থাকেন স্থানীয়রা, তেমন জুমাবারে নামাজ পড়তে আসেন বাংলার দূর-দূরান্ত থেকে। ঈদের দিন প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। নাখোদা মসজিদের নির্মাণ শুরু হয় ১৯২৬ সালে এবং নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৪২-এ। নাখোদা মসজিদের বিশাল স্থাপত্যটি নির্মাণ করেছিলেন গুজরাটের বাসিন্দা, তৎকালীন বিখ্যাত নাবিক আবদুর রহিম ওসমানের নেতৃত্বে। মসজিদ নির্মাণের সমুদয় অর্থ তিনিই দান করেছিলেন। তাই তার পেশার দিকে ইঙ্গিত করে মসজিদের নাম রাখা হয় ‘নাখোদা মসজিদ’। কারণ, ফারসি ভাষায় নাবিকের সমার্থক শব্দ হলো ‘নাখোদা’। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে দুটি ভাষাকে সরকারিভাবে প্রাধান্য দেওয়া হতো। একটি ফারসি, অন্যটি ইংরেজি। ইতিহাস বলছে, তৎকালীন সময় ভারতজুড়ে ফারসি ভাষার যথেষ্ট কদর ছিল। অর্থাৎ, নাবিক
ভারতের কলকাতা শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদের নাম ‘নাখোদা মসজিদ’। মসজিদটি মধ্য ও উত্তর কলকাতাসংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট এবং রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে চিতপুর এলাকায় অবস্থিত। এখান থেকেই শুরু হয় কলকাতার বড় বাজার। দ্বিতলবিশিষ্ট এ মসজিদের চাতাল এতটাই বড় যে, লাখো মানুষের জমায়েত হতে পারে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে যেমন থাকেন স্থানীয়রা, তেমন জুমাবারে নামাজ পড়তে আসেন বাংলার দূর-দূরান্ত থেকে। ঈদের দিন প্রায় লাখো মানুষের সমাগম হয়।
নাখোদা মসজিদের নির্মাণ শুরু হয় ১৯২৬ সালে এবং নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৪২-এ। নাখোদা মসজিদের বিশাল স্থাপত্যটি নির্মাণ করেছিলেন গুজরাটের বাসিন্দা, তৎকালীন বিখ্যাত নাবিক আবদুর রহিম ওসমানের নেতৃত্বে। মসজিদ নির্মাণের সমুদয় অর্থ তিনিই দান করেছিলেন। তাই তার পেশার দিকে ইঙ্গিত করে মসজিদের নাম রাখা হয় ‘নাখোদা মসজিদ’। কারণ, ফারসি ভাষায় নাবিকের সমার্থক শব্দ হলো ‘নাখোদা’। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে দুটি ভাষাকে সরকারিভাবে প্রাধান্য দেওয়া হতো। একটি ফারসি, অন্যটি ইংরেজি। ইতিহাস বলছে, তৎকালীন সময় ভারতজুড়ে ফারসি ভাষার যথেষ্ট কদর ছিল। অর্থাৎ, নাবিকের তত্ত্বাবধানে সৃষ্টির কারণে মসজিদটির নাম হয় ‘নাখোদা’ মসজিদ। ফলে এর সঙ্গে খোদা বা আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই।
মসজিদটি শুরুতে ছোট এবং দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। পরে এটি সম্প্রসারণ করা হয়। আজকে যে অঞ্চলে ‘নাখোদা’ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে, সেখানে পাশাপাশি দুটো মসজিদ ছিল। একটি মসজিদের প্রবেশদ্বার ছিল জাকারিয়া স্ট্রিটের দিকে। অন্য মসজিদের মূল ফটক ছিল রবীন্দ্র সরণির দিকে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বাবা ছিলেন মাওলানা খায়রুদ্দিন। তার ইচ্ছেতেই দুটি মিলে একটি বড় মসজিদে পরিণত হয়। একটা মসজিদের মোতাওয়াল্লি ছিলেন এক নারী, নাম শামসুন্নি সাবেরি। আর অন্য মসজিদের ট্রাস্টি ছিলেন রওশন হাক্কাক। পরবর্তীকালে মাওলানা খায়রুদ্দিনের মধ্যস্থতায় দুই মসজিদ কমিটির সম্মতিতে সে অঞ্চলে বড় মসজিদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন গুজরাটের বাসিন্দা নাবিক আবদুর রহিম। মসজিদ নির্মাণে তৎকালীন ১৫ লাখ রুপি ব্যয় করা হয়েছিল। বর্তমানে যার বাজারমূল্য কয়েকশ কোটি রুপির বেশি।
মসজিদের নির্মাণশৈলীতেও ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন বিদ্যমান। প্রধান ফটক বানানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আগ্রার ফতেপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজার অনুকরণে। একই সঙ্গে মোগল সম্রাট আকবরের সমাধিসৌধের প্রভাবও রয়েছে নাখোদা মসজিদের নির্মাণশৈলীতে। এসব ডিজাইনের জন্য রাজস্থান, গুজরাট থেকে আনা হয়েছিল গ্রানাইট, বেলে ও শ্বেতপাথর। লাল বেলে পাথর দিয়ে বানানো ইন্দো-সেরাসেনিক রীতির সুন্দর স্থাপত্য এটি। শ্বেতপাথর দিয়ে গড়া মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ, যা তাজমহলের কথা মনে করিয়ে দেবে। বিস্তৃত চাতালে জুড়ে রয়েছে গ্রানাইট পাথর।
নাখোদা মসজিদে রয়েছে ১০০ ফুট উচ্চতার ২৫টি ছোট মিনার, ১৫০ ফুট উচ্চতার দুটি বড় মিনারসহ গোটা অবকাঠামো জুড়ে দেখা যায় চোখধাঁধানো অলংকরণ। মসজিদের সৌন্দর্য আর ইতিহাসের টানে সারা বছর এখানে মুসল্লি ও পর্যটক আগমন করেন। কলকাতার সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন মসজিদ বলে ‘বরি মসজিদ’ (বড় মসজিদ) নামেও ডাকা হয় নাখোদা মসজিদকে। ‘নাখোদা’ মসজিদ যেমন মুসলমানদের কাছে প্রাচীন ইবাদতস্থল হিসেবে পরিচিত, ঠিক ততটাই কলকাতার ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য হিসেবেও সমাদৃত। দুই ঈদে এখানে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হন। এ ছাড়া সারা বছর লেগে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
What's Your Reaction?