কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকলো ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকলো ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি। নিয়োগে অনিয়মের কারণে ২০২৩ সালে কলকাতার হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খারিজ হয়েছিল। কিন্তু এবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের রায়ে সেই চাকরি বহাল থাকলো। তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছেন, দুর্নীতি তদন্ত অব্যাহত থাকবে। অনিয়ম হয়েছে বলে সবার চাকরি বাতিল করা উচিত হবে না। দীর্ঘ নয় বছর চাকরি করার পর তা বাতিল হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং সমস্যায় পড়বেন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের লোকেরা। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করেন, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। এস. বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে ওএমআর শিট তৈরি করার মূল্যায়ন করা, চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি করা-সহ একাধিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি নিয়োগের জন্য সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল কোন রুল অনুযায়ী, রাজ্যের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, তার কোন নথি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দেখাতে পারেননি। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই বক্তব্যের পর কলকাতা হাইকোর্ট

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকলো ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকলো ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি। নিয়োগে অনিয়মের কারণে ২০২৩ সালে কলকাতার হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খারিজ হয়েছিল। কিন্তু এবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের রায়ে সেই চাকরি বহাল থাকলো।

তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছেন, দুর্নীতি তদন্ত অব্যাহত থাকবে। অনিয়ম হয়েছে বলে সবার চাকরি বাতিল করা উচিত হবে না। দীর্ঘ নয় বছর চাকরি করার পর তা বাতিল হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং সমস্যায় পড়বেন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের লোকেরা।

আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করেন, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। এস. বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে ওএমআর শিট তৈরি করার মূল্যায়ন করা, চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি করা-সহ একাধিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি নিয়োগের জন্য সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল কোন রুল অনুযায়ী, রাজ্যের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, তার কোন নথি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দেখাতে পারেননি। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই বক্তব্যের পর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন>>
বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ, সীমান্তে পচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ
বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের করুণ দশা
বাংলাদেশের ৩ নৌকাসহ ৭৯ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতের কোস্টগার্ড

রায়ের পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, আমি খুশি। কথায় কথায় চাকরি খেয়ে নেওয়া ঠিক নয়। আমাদের উচিত তাদের চাকরি দেওয়া। আমি খুশি এই রায়ে।

রায়ের পর কলকাতা হাইকোর্টের বাইরে প্রাথমিক শিক্ষকেরা আনন্দে আবির খেলেন এবং মিষ্টিমুখ করতে থাকেন। সুভময় রায় নামে একজন শিক্ষক বলেন, ‘সত্যের জয় হলো। যেসব আইনজীবী আমাদের হয়ে সওয়াল করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। আজ মনে হচ্ছে যেন প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছি।’

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। তারপর হয় নিয়োগ পরীক্ষা। তার ভিত্তিতে দুই দফায় ৪২ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। আর ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। ২০২৩ সালের ১২ মে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ শুরুও আদেশ দেওয়া হয়।

এরপরই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্ট অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। একই সঙ্গে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ বহাল রাখা হয়।

এরপর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করে। এছাড়া চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। চাকরিহারা শিক্ষকদের কথায়, ‘সিঙ্গেল বেঞ্চ আমাদের বক্তব্য না শুনেই রায় দিয়েছেন।’ তাদের এই বক্তব্য শুনে সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা ফের হাইকোর্টে পাঠান।

এরপরে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের বেঞ্চে মামলা শুনানি হয়। সেই মামলার শুনানি ১২ নভেম্বর শেষ হলেও রায় স্থগিত রাখা হয়। এরপর বুধবার ৩ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায় দেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন বিচারপতি, বর্তমানে বিজেপির সংসদ সদস্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সবার অধিকার আছে। সে সময় বিচারপতি হিসাবে আমার মনে হয়েছিল এই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। সেই কারণে যা ভালো মনে হয়েছিল সেই রায় আমি দিয়েছিলাম।

বুধবারের রায় প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি জানিয়েছেন, এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করা হবে।

ডিডি/কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow