কলেজের ভবন দখল করে থাকছেন শিক্ষকরা, শ্রেণিকক্ষেই কোচিং বাণিজ্য

কলেজভবন দখল করে বসবাস করছেন কয়েকজন শিক্ষক আর শ্রেণিকক্ষেই যে যার মতো কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। ফরিদপুরের সদরপুর সরকারি কলেজে চলছে এ কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসেন না, ক্লাসও করান না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের অভিযোগ, সদরপুর সরকারি কলেজে চরম অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক শিথিলতার কারণে শিক্ষার পরিবেশ কার্যত ভেঙে পড়েছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজটির একাডেমিক ভবনের একাধিক কক্ষ দখল করে ‘টিচার্স কোয়ার্টার’ বানিয়ে বসবাস করছেন কতিপয় শিক্ষক। একাডেমিক ভবনের কক্ষগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কোচিং বাণিজ্য চালানোর। সরকারি ছুটির দিনেও (শুক্র ও শনিবার) কলেজ খোলা রাখেন শিক্ষকরা। তবে কোনো অতিরিক্ত ক্লাস বা এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের মতো এই দুদিনও শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহৃত হয় শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাচ পড়ানোর জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্যাররা ক্লাসে

কলেজের ভবন দখল করে থাকছেন শিক্ষকরা, শ্রেণিকক্ষেই কোচিং বাণিজ্য

কলেজভবন দখল করে বসবাস করছেন কয়েকজন শিক্ষক আর শ্রেণিকক্ষেই যে যার মতো কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। ফরিদপুরের সদরপুর সরকারি কলেজে চলছে এ কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসেন না, ক্লাসও করান না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

অভিভাবকদের অভিযোগ, সদরপুর সরকারি কলেজে চরম অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক শিথিলতার কারণে শিক্ষার পরিবেশ কার্যত ভেঙে পড়েছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজটির একাডেমিক ভবনের একাধিক কক্ষ দখল করে ‘টিচার্স কোয়ার্টার’ বানিয়ে বসবাস করছেন কতিপয় শিক্ষক। একাডেমিক ভবনের কক্ষগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কোচিং বাণিজ্য চালানোর। সরকারি ছুটির দিনেও (শুক্র ও শনিবার) কলেজ খোলা রাখেন শিক্ষকরা। তবে কোনো অতিরিক্ত ক্লাস বা এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের মতো এই দুদিনও শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহৃত হয় শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাচ পড়ানোর জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্যাররা ক্লাসে ঠিক মতো পড়ান না। কিন্তু তাদের কাছে প্রাইভেট পড়লে ওই একই ক্লাসরুমে খুব যত্ন করে পড়ান। সরকারি ফ্যান, লাইট আর বেঞ্চ ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত ব্যবসা করছেন, এটা স্পষ্ট অনিয়ম।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ শিক্ষক কর্মরত থাকলেও নিয়মিত কলেজে আসেন অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়া শিক্ষকরা নিয়মিত না আসায় অতিরিক্ত চারজন ভলান্টিয়ার শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম (ছদ্মনাম) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে পড়াশোনার চেয়ে স্যারদের ব্যবসার চিন্তা বেশি। একাডেমিক ভবনে স্যাররা থাকেন, এটা কেমন নিয়ম? আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।

অন্যদিকে অভিভাবকরা বলেন, সরকারি কলেজে পাঠিয়েছি ভালো শিক্ষার আশায়। এখন দেখছি ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য বেশি। শিক্ষকরা যদি ক্লাসে না এসে কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে গরিব ছাত্রদের কী হবে? আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একাডেমিক ভবনে বসবাসরত এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি কোয়ার্টার নেই। তাই বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই এখানে থাকছি। তবে এতে ক্লাসের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

শ্রেণিকক্ষে কোচিং করানোর বিষয়ে আরেক শিক্ষক বলেন, কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই কোচিং করাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। একে কোচিং বা ব্যবসা বলা ঠিক নয়।

কলেজর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক জানান, শিক্ষকদের উপস্থিতির বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

একাডেমিক ভবনে থাকার বিষয়ে তিনি জানান, সদরপুরে থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক ভবনে থাকছেন। কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি সব সরকারি কলেজেই হচ্ছে। তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৌখিক পারমিশন নিয়ে অনেক আগে থেকেই কলেজের রুম ব্যবহার করে কোচিং করাচ্ছেন।

এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ শাওন জানান, আমি নতুন জয়েন করিছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow