কানাডিয় বরকে ৩০ বছর পর ঢাকায় আবার বিয়ে

কানাডিয় তরুণ রিচার্ড পিজন ও পুরান ঢাকার জমিদারের নাতনি জিসান হকের বিয়ে হয় ৩০ বছর আগে। এরই মধ্যে তিন ছেলের বাবা-মা তারা। প্রথমবারের মতো মাতৃভূমিতে আসছেন কাইল, লুকাস, জোসুয়া ও তাদের বাবা। এই ভ্রমণকে স্মরণীয় করতে পরিবারের সদস্যরা আবারও তাদের বিয়ের আয়োজন করেছেন। চিত্রশিল্পী জিসান হক ছবি আঁকেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি ও স্বীকৃতি দুইই পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয় এই শিল্পী। শিল্পকর্ম নিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশেও তার দুটি একক প্রদর্শনী হয়েছে। আসছে শুক্রবার আয়োজন করা হয়েছে তৃতীয় একক। এ উপলক্ষে দেশে এসেছেন তিনি। দেশ দেখাতে সঙ্গে এনেছেন স্বামী ও সন্তানদের। কিন্তু পরিবারের লোকেরা আবারও তাদের বিয়ে দিচ্ছেন! সেই আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে জিসান হক বললেন, ‘ভাগ্নিরা বলল, আন্টি, তোমার বিয়ে খাইনি। এবার বিয়েটা করে ফেলো। আমরা পুরান ঢাকার লোক, কানাডায় বিয়ে করলে বিয়েটা অপূর্ণ থেকে যায়। ওদের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। আমার ছেলেরাও দেখুক, মায়ের দেশে বিয়ের আচার কেমন।’ দেশে এসে এবার ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে শিল্পীকে। প্রদর্শনীর ছবিগুলোর কিউ

কানাডিয় বরকে ৩০ বছর পর ঢাকায় আবার বিয়ে

কানাডিয় তরুণ রিচার্ড পিজন ও পুরান ঢাকার জমিদারের নাতনি জিসান হকের বিয়ে হয় ৩০ বছর আগে। এরই মধ্যে তিন ছেলের বাবা-মা তারা। প্রথমবারের মতো মাতৃভূমিতে আসছেন কাইল, লুকাস, জোসুয়া ও তাদের বাবা। এই ভ্রমণকে স্মরণীয় করতে পরিবারের সদস্যরা আবারও তাদের বিয়ের আয়োজন করেছেন।

চিত্রশিল্পী জিসান হক ছবি আঁকেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি ও স্বীকৃতি দুইই পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয় এই শিল্পী। শিল্পকর্ম নিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশেও তার দুটি একক প্রদর্শনী হয়েছে। আসছে শুক্রবার আয়োজন করা হয়েছে তৃতীয় একক। এ উপলক্ষে দেশে এসেছেন তিনি। দেশ দেখাতে সঙ্গে এনেছেন স্বামী ও সন্তানদের। কিন্তু পরিবারের লোকেরা আবারও তাদের বিয়ে দিচ্ছেন!

কানাডিয় বরকে ৩০ বছর পর আবার বিয়ে

সেই আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে জিসান হক বললেন, ‘ভাগ্নিরা বলল, আন্টি, তোমার বিয়ে খাইনি। এবার বিয়েটা করে ফেলো। আমরা পুরান ঢাকার লোক, কানাডায় বিয়ে করলে বিয়েটা অপূর্ণ থেকে যায়। ওদের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। আমার ছেলেরাও দেখুক, মায়ের দেশে বিয়ের আচার কেমন।’

দেশে এসে এবার ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে শিল্পীকে। প্রদর্শনীর ছবিগুলোর কিউরেশন, ক্যাটালগসহ নানান কাজ করতে হলো। তার ওপর বিয়ের আয়োজন। নিজের জন্য ঢাকাই শাড়ি কেনা হয়েছে, তবে বরের পাঞ্জাবি কেনা বাকি আছে। তিনি বলেন, ‘ছোটরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বরের জুতা চুরি করবে, ডলার না দিলে জুতা দেবে না।’

পুরান ঢাকায় জন্ম, কিশোরীকাল সেখানেই কেটেছে জিসানের। এক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে গত শতকের আশির দশকে স্থায়ী হন উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায়। সেখানেই পড়শোনা, প্রশিক্ষণ, চাকরি, বিয়ে ও সংসার। পুরান ঢাকার জমিদার মৌলভী আবুল খায়রাত মুহাম্মদের বংশধর জিসানের রক্তে রয়েছে প্রতিভাবান বাবার সৃজনশীলতা। যার প্রকাশ ঘটেছে আধুনিক চিত্রকলায়। দীর্ঘদিনের শিল্পকর্মগুলো বহুদূরের দেশ থেকে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের শিল্পরসিকদের জন্য।

খ্যাতিমান শিল্পী মনিরুল ইসলাম জিসানের শিল্পযাত্রা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের মানুষ ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে, বিভিন্ন দেশের গ্যালারি ঘুরে আর্টিস্টদের ছবি দেখে যে অভিজ্ঞতা সে অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতা অমূল্য। সে যদি দেশে থেকে যেত, তাহলে কিন্তু সেটা হতো না। এটা একটা বিরাট পাওয়া।’

কানাডিয় বরকে ৩০ বছর পর আবার বিয়ে

অ্যাক্রিলিক, তেল ও জলরঙে কাজ করেছেন জিসান। একপর্যায়ে মাধ্যম বদলে ডিজিটালে কাজ শুরু করেন। সে প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, ‘ছেলে একদিন একটা ট্যাব কিনে দিলো। বলল, এটায় আঁকতে পারো। এক সপ্তাহ পর আমি ওকে একটা ছবি এঁকে দেখালাম। সে তো অবাক। বলল, এটা কী করে সম্ভব? আমি বললাম, আঁকার গ্রামার তো একই। মাধ্যম আলাদা হতেই পারে।’ ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা জিসানের বিমূর্ত সব ছবি এখন মোটা অঙ্কের অর্থে সংগ্রহ করেন নানান দেশের শিল্পরসিকেরা।

ডিজিটাল মাধ্যম প্রসঙ্গে শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পীসত্ত্বা থাকলে যে কোনো মাধ্যমেই মাস্টারপিস তৈরি করা সম্ভব। আমরা আগে সব কাজ হাতেই করতাম। এখন একবার কাজটা করার পর সেটাকে কম্পিউটারে ফেলে অনেক কিছু করতে পারি। হাজারও সম্ভাবনার দিকে সেই শিল্পকর্মটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আগে এ সুযোগ ছিল না। আগে একটি অসমাপ্ত চিত্রকর্ম হয় শেষ করতে হতো, নয়তো নষ্ট করতে হতো। বাঙালি বলে না, বিড়াল সাদা না কালো, সেটা ব্যাপার না, ইদুর ধরতে পারে কি না সেটাই জরুরি।’

ঐতিহ্যবাহী পরিবার জিসানদের। পুরান ঢাকায় তার পূর্বপুরুষদের ওই বাড়িতে বেড়িয়ে গেছেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুসহ আরও অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি। সেই বাড়ি, পরিবার, বন্ধুদের ছেড়ে ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার একাকিত্ব, পুরান ঢাকার খাবার, বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি, পূর্বপুরুষদের সমাধিসৌধ তার কাছে কেবলই স্মৃতি। যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র নগরী ও কানাডায় সংগ্রামী জীবনও তার জীবনের সম্পদ। শিল্পকর্মে সেসব তুলে ধরেছেন এই শিল্পী।

কানাডিয় বরকে ৩০ বছর পর আবার বিয়ে

আগামী ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৫টায় ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে জিসানের প্রদর্শনী ‘ইনভাইটেশন টু লাইফ’-এর উদ্বোধন। এ আয়োজনে সম্মানিত অতিথি থাকবেন খ্যাতিমান শিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগের সাম্মানিক অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বার্‌ক্‌ আলভি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক প্রধান নকশাকার ও খ্যাতিমান শিল্পী আবদুল মান্নান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রশিদ আমিন। সমাপনী দিনে অতিথি হতে সম্মতি জানিয়েছেন খ্যাতিমান চিত্রকর মনিরুল ইসলামও।

প্রদর্শনী চলবে ২৬ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ তিন দিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্পরসিকদের স্বাগত জানাবেন গ্যালারি কর্তৃপক্ষ। জিসানকে নিয়ে আরও জানতে ঘুরে আসা যাবে শিল্পীর ওয়েব সাইটে

আরএমডি

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow