কালীগঞ্জে ন্যাশনাল জুট মিল গণহত্যা দিবস: শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
আজ ১ ডিসেম্বর। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় ও শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে এই দিনে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত ন্যাশনাল জুট মিলে সংঘটিত হয়েছিল এক বর্বরোচিত গণহত্যা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিল মিলের ১৩৬ জন নিরীহ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মুক্তিযোদ্ধার সহযোগীকে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় স্থানীয়দের। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও শোকাবহ পরিবেশে সেই শহীদদের স্মরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনতা। এদিন সকালে শহীদদের গণকবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের উপজেলাবাসী। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণদের বয়ানে উঠে আসে সেদিনের লোমহর্ষক চিত্র। তাঁরা জানান, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকালবেলা মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীরা যখন কেবল সকালের নাস্তা খেতে বসেছিলেন, ঠি
আজ ১ ডিসেম্বর। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় ও শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে এই দিনে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামে অবস্থিত ন্যাশনাল জুট মিলে সংঘটিত হয়েছিল এক বর্বরোচিত গণহত্যা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিল মিলের ১৩৬ জন নিরীহ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মুক্তিযোদ্ধার সহযোগীকে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় স্থানীয়দের।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও শোকাবহ পরিবেশে সেই শহীদদের স্মরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনতা। এদিন সকালে শহীদদের গণকবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের উপজেলাবাসী। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণদের বয়ানে উঠে আসে সেদিনের লোমহর্ষক চিত্র। তাঁরা জানান, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর সকালবেলা মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীরা যখন কেবল সকালের নাস্তা খেতে বসেছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই শীতলক্ষ্যা নদীর ওপার থেকে ঘোড়াশাল ক্যাম্পের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নদী পার হয়ে মিলের ভেতর অতর্কিত হানা দেয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করা। মিলের ভেতর ঢুকে তারা নিরীহ বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আটক করে। এরপর সকাল থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে তাদের পৈশাচিক তান্ডব। নিরস্ত্র বাঙালিদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় মিল চত্বর।
নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। কিন্তু পাক বাহিনীর ভয়ে এলাকাবাসী এতটাই আতঙ্কিত ছিল যে, ঘটনার পর ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত কেউ মিলের ভেতরে প্রবেশের সাহস পায়নি। ফলে শহীদদের লাশগুলো মিলের ভেতরের সুপারি বাগানে অনাদরে পড়ে থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলাকাবাসী যখন মিলের ভেতরে প্রবেশ করে, তখন তারা ১৩৬ জনের মৃতদেহ বিকৃত ও গলিত অবস্থায় দেখতে পায়। স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করতেও হিমশিম খেয়েছিলেন। পরে এই বিকৃত দেহাবশেষগুলো মিলের দক্ষিণ পাশে একটি বড় গর্ত করে গণকবরে সমাহিত করা হয়।
পরবর্তীতে মিল কর্তৃপক্ষ এই শহীদদের আত্মত্যাগ ও স্মৃতি রক্ষার্থে গণকবরের স্থানে “শহীদের স্মরণে ১৯৭১” নামক একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এছাড়া শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় গণকবরের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি পাকা মসজিদ। প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর ফিরে এলেই কালীগঞ্জবাসী অশ্রুসজল নয়নে স্মরণ করে সেই ১৩৬ জন সূর্যসন্তানকে। এই গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ও রক্তাক্ত দলিল হয়ে আছে।
What's Your Reaction?