কোথাও প্রার্থী বাতিলের দাবিতে উত্তাল, কোথাও নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা
সিরাজগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দুটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনুসারীরা। বাকি ২টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে এখনো ভোটের মাঠে নামেননি মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতাদের অনুসারীরা। তবে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে আছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলার চারটি আসনে মনোনয়ন ফরম নিলেও মাঠে তাদের দৃশ্যমান তেমন তৎপরতা নেই। এছাড়া বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৩ ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির জেলা শাখার আহ্বায়ক নবকুমার। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো তৎপরতা চালায়নি জাতীয় পার্টি (জাপা)। কেন্দ্র থেকে এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর ও সদরের একাংশ) আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থ
সিরাজগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দুটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনুসারীরা। বাকি ২টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে এখনো ভোটের মাঠে নামেননি মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতাদের অনুসারীরা। তবে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অপরদিকে আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে আছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলার চারটি আসনে মনোনয়ন ফরম নিলেও মাঠে তাদের দৃশ্যমান তেমন তৎপরতা নেই।
এছাড়া বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৩ ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির জেলা শাখার আহ্বায়ক নবকুমার। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো তৎপরতা চালায়নি জাতীয় পার্টি (জাপা)। কেন্দ্র থেকে এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর ও সদরের একাংশ)
আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী দেয়নি। এতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রে দৌড়-ঝাঁপ জারি রেখেছেন। আসনটিতে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা।
আরও পড়ুন-
তরুণ নেতৃত্বে ভরসা বিএনপির, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জামায়াত
ফুয়াদের জন্য আসন ছাড়লে কপাল পুড়বে সেলিমা-জয়নুলের
বিএনপি-জামায়াতের চিন্তার কারণ হতে পারেন অভি
রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, ‘কাজীপুর আমার জন্মভূমি। দীর্ঘদিন দিন ধরে যমুনা পাড়ের মানুষের জন্য কাজ করছি। তারা আমাকে অনেকটাই আপন করে নিয়েছেন। আসনটিতে দল এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আমি আশাবাদী, দল অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে। তারপরও দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবো।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা শাহীনুর আলম। তিনি ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ মনোনীত নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাকিব আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর সরকার মাঠে কিছুটা সক্রিয় আছেন। এসব দলের প্রার্থীরা মাঠে একটু নড়াচড়া করলেও মূল আলোচনা বিএনপি আর জামায়াতকে ঘিরেই।
সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ সদর ও কমারখন্দ)
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তাঁতি বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। এই আসনে কোনো বিভেদ না থাকলেও প্রার্থীর পক্ষে তেমন প্রচারণা এখনো চোখে পড়েনি। নিজের নেতাকর্মীদের নিয়েই এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এ আসনে বিএনপি সবসময় ঐক্যবদ্ধ ছিল। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এখনও সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে।’
আসনটিতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামকে মনোনীত করেছে জামায়াত। তিনি নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি ভোট চাইতে মানুষের কাছে যাচ্ছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতী মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কৃষি ও শ্রম বিষয়ক উপ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ)
দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে আসনটিতে বিএনপির মধ্যে একাংশের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি আয়নুল হক।
তবে এ আসনে চারবারের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রয়াত আব্দুল মান্নান তালুকদারের ছেলে রাহিদ মান্নান লেনিন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রাকিবুল করিম খান পাপ্পুসহ দেড় ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
ভিপি আয়নুল হকের নাম ঘোষণা করার পর রাহিদ মান্নান লেনিন ও তার কর্মী-সমর্থকেরা রিভিউ চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে প্রার্থীর প্রচারণা তেমন নেই বরং প্রার্থিতা রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন মনোনীত প্রার্থী।
রাহিদ মান্নান লেনিন বলেন, ‘আমার বাবা এ আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। আমি দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এতে বেশ সাড়াও পেয়েছি। আসনটির সিংহভাগ মানুষ চায় আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হোক।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য প্রফেসর ড. শায়খ মাওলানা আব্দুস সামাদ। তিনি বেশ জোরেশোরেই নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আয়নুল হক। এছাড়া এনসিপি থেকে আল-আরাফাহ্ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম উজ্জ্বল মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া)
একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম. আকবর আলী। কিন্তু এ মনোনয়ন বাতিল চেয়ে মশাল মিছিল, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে দলের একাংশ নেতাকর্মীরা। ফলে এখানেও প্রার্থীর পক্ষে তেমন কোনো প্রচার প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। প্রার্থী নিজের কর্মীদের নিয়ে কিছু কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এ আসনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আজাদ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার কমিটির সদস্য সচিব খান সাঈদ হাসান জ্যোতি, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কে. এম শরফুদ্দিন মঞ্জু, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাব ও জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়ামুল হাকিম সাজু মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই আজাদ হোসেন ও তার অনুসারীরা রিভিউ চাচ্ছেন।
আজাদ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ও তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম। অথচ যিনি এলাকায় ছিলেন না তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
এই আসনে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে লড়বেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি ভোটের মাঠে বেশ সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতী আব্দুর রহমান কাসেমী ও নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী লড়বেন।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী)
তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ ও যমুনার ভাঙন কবলিত এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। তার মনোনয়নে আসনটিতে কোনো কোন্দল নেই। ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তবে আসনটিতে বিএনপির প্রচার প্রচারণা এখনো জমজমাট হয়নি।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত মুফতী শেখ মোহাম্মদ নুরুন নবী ও এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর)
১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বাদ দিলে এ আসনটি বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের ছেলে ডা. এম এ মুহিত। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ধানের শীর্ষের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় বেশ এগিয়ে রয়েছেন তিনি। জেলার মধ্যে এ আসনটিতেই সবচেয়ে বেশি নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করেছে। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা মিজানুর রহমান। তিনিও আসনটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাঈদ মোস্তাফিজ ও ইসলামী আন্দোলনের মিসবাহ উদ্দিন নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
এফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?