‘খোলা তালাক’ কাকে বলে, এর হুকুম কী 

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। তবে দাম্পত্য জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন স্ত্রী স্বামীর সাথে থাকতে না চাইলে নির্দিষ্ট বিধান অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের পথ খোলা থাকে। এ ধরনের বিচ্ছেদকে শরিয়তের পরিভাষায় বলা হয় ‘খোলা’ বা খোলা তালাক। খোলার কারণ, শর্ত, বৈধতা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে মুসলিম সমাজে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত। নিচে বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।  খোলা তালাক পরিচিতি স্ত্রী যদি নিজের কোনো কারণে স্বামীর কাছে থাকতে না চায় তথা বিবাহ বিচ্ছেদ চায়, কিন্তু স্বামী তালাক দিতে না চায়, তাহলে স্ত্রী অর্থের বিনিময়ে বা অন্য কোনো সম্পদের বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য স্ত্রী সাধারণত মোহর মাফ করে থাকেন। আর মোহর আদায় করে থাকলে তা ফেরত দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, স্ত্রী মোহর আদায় করে থাকলে পূর্ণ মোহর ফেরত দিয়ে অথবা আংশিক মোহর ফেরত দিয়ে এর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। আর যদি মোহর আদায় করা না হয়ে থাকে, তাহলে পূর্ণ মহর ক্ষমা করে দিয়ে অথবা আংশিক মোহর ক্ষমা করে দিয়ে এর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। তালাকের এই সিস্টেমকে ইসলামি আই

‘খোলা তালাক’ কাকে বলে, এর হুকুম কী 

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। তবে দাম্পত্য জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন স্ত্রী স্বামীর সাথে থাকতে না চাইলে নির্দিষ্ট বিধান অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের পথ খোলা থাকে। এ ধরনের বিচ্ছেদকে শরিয়তের পরিভাষায় বলা হয় ‘খোলা’ বা খোলা তালাক। খোলার কারণ, শর্ত, বৈধতা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে মুসলিম সমাজে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত। নিচে বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। 

খোলা তালাক পরিচিতি

স্ত্রী যদি নিজের কোনো কারণে স্বামীর কাছে থাকতে না চায় তথা বিবাহ বিচ্ছেদ চায়, কিন্তু স্বামী তালাক দিতে না চায়, তাহলে স্ত্রী অর্থের বিনিময়ে বা অন্য কোনো সম্পদের বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য স্ত্রী সাধারণত মোহর মাফ করে থাকেন। আর মোহর আদায় করে থাকলে তা ফেরত দিয়ে থাকেন।

উদাহরণস্বরূপ, স্ত্রী মোহর আদায় করে থাকলে পূর্ণ মোহর ফেরত দিয়ে অথবা আংশিক মোহর ফেরত দিয়ে এর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। আর যদি মোহর আদায় করা না হয়ে থাকে, তাহলে পূর্ণ মহর ক্ষমা করে দিয়ে অথবা আংশিক মোহর ক্ষমা করে দিয়ে এর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেবে। তালাকের এই সিস্টেমকে ইসলামি আইনের পরিভাষায় ‘খোলা’ বলা হয়।

খোলা তালাকের বিনিময় নেওয়া

১. সব ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ একমত যে, যদি স্বামীর দোষ-ত্রুটি বা অত্যাচারের কারণে স্ত্রী খোলা করতে বাধ্য হয়, তাহলে এই অবস্থায় স্বামীর জন্য বিনিময় নেওয়া নাজায়েজ। যদি এই অবস্থায় স্বামী বিনিময় গ্রহণ করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে।

২. অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং সে নিজে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চায়, তাহলে এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য বিনিময় নেওয়া বৈধ। তবে এই অবস্থায়ও উত্তম হলো, মোহরের পরিমাণ থেকে বেশি বিনিময় গ্রহণ না করা। হ্যাঁ যদি তারা পরস্পরের সম্মতিতে মোহরের পরিমাণ থেকে বেশি বিনিময় নির্ধারণ করে, তাহলেও খোলা শুদ্ধ হবে এবং স্ত্রী পূর্ণ বিনিময় প্রদান করতে হবে।

খোলা তালাকের বিধান

খোলা তালাকের মাধ্যমে স্ত্রীর ওপর ১ তালাকে বায়েন কার্যকর হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলাকে ১ তালাকে বায়েন সাব্যস্ত করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ : ১৮৪৪৮)

এজন্য যদি একবার খোলা তালাক দেওয়া হয়, তাহলে স্ত্রীর ওপর ১ তালাকে বায়েন কার্যকর হবে। ১ তালাকে বায়েন কার্যকর হওয়ার পর স্বামী যদি উক্ত স্ত্রীর সাথে পুনরায় ঘর-সংসার করতে চায়, তাহলে এর একমাত্র পদ্ধতি হলো, স্ত্রীর সম্মতিতে মোহর ধার্য করে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে পুনরায় নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া পুনরায় ঘর-সংসার করার কোনো সুযোগ নেই।

যদি পুনরায় নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে স্বামী কেবল ২ তালাকের মালিক থাকবে। কারণ ১ তালাক ইতোপূর্বে কার্যকর হয়ে গেছে। 

খোলার মাধ্যমে ১ বা ২ তালাক তালাক কার্যকর হওয়ার পর যদি স্বামী-স্ত্রী পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর ইদ্দত পালন করা লাগবে না, বরং ইদ্দত চলাকালীন খোলা প্রদানকারী স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে এবং ইদ্দতের পরও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। 

খোলা তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে করা ছাড়া পূর্বের স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া

আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ মনে করে থাকেন যে, খোলা তালাকের পর স্ত্রী অন্য কোনো পুরুষের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সেখান থেকে তালাকপ্রাপ্ত হওয়া ছাড়া খোলা প্রদানকারী স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। কিন্তু তাদের এই ধারণা সঠিক নয়। বরং এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, খোলার মাধ্যমে ১ বা ২ তালাক কার্যকর হওয়ার পর এই নারী অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়াই খোলা প্রদানকারী স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। খোলা তালাক প্রদানকারী স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোনো দরকার নেই। তবে কখনো ৩ তালাক কার্যকর হয়ে গেলে তখন আর এই সুযোগ বহাল থাকবে না।

খোলা তালাক পরবর্তী অন্যত্র বিবাহ করা 

খোলার মাধ্যমে তালাক কার্যকর হওয়ার পর এই নারী যদি খোলা প্রদানকারী স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তাহলে এক্ষেত্রে সাধারণ তালাক পরবর্তী ইদ্দত পালনের মতো খোলা তালাকের পরও ইদ্দত পালন করা আবশ্যক।

ইদ্দত পরিচিতি

মহিলা যদি ঋতুমতি হয়, তাহলে ইদ্দত হলো ৩ ঋতুস্রাব। যদি ঋতুমতি না হয়, তাহলে ইদ্দত হলো ৩ মাস। আর মহিলা যদি অন্তঃসত্ত্বা হয়, তাহলে ইদ্দত হলো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।

মহান আল্লাহ বলেন, যে নারীদের তালাক দেওয়া হয়েছে, তারা ৩ বার ঋতুস্রাব আসা পর্যন্ত নিজেদের প্রতিক্ষায় রাখবে (তথা তিন ঋতুস্রাব আসা পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে)। (সুরা বাকারা : ২২৮)

অন্য আয়াতে এসেছে, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতু আসার কোনো আশা নেই, তোমাদের যদি (তাদের ইদ্দত সম্পর্কে) সন্দেহ হয়, তবে (জেনে রাখো) তাদের ইদ্দত হলো ৩ মাস। আর এখন পর্যন্ত যারা ঋতুমতিই হয়নি, তাদেরও (ইদ্দত এটাই)। যারা গর্ভবতী, তাদের (ইদ্দতের) মেয়াদ হলো, তাদের সন্তান প্রসব। (সুরা আত তালাক : ৪) 

উল্লেখ্য, বিবাহের পর যদি স্ত্রীর সাথে সহবাস না হয় এবং নির্জনবাসও (খালওয়াত) না হয়, আর এই অবস্থায় খোলা তালাক দেওয়া হয়, তাহলে ইদ্দত পালন করা লাগবে না।

মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন নারীদের বিবাহ করার পর তাদের স্পর্শ করার আগেই তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাদের ওপর কোনো ইদ্দত ওয়াজিব নয়, যা তোমাদের গণনা করতে হবে। (সুরা আহজাব : ৪৯)

লেখক : ফতোয়া বিভাগীয় প্রধান, জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালাম, মিরপুর (১২), ঢাকা

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow