জলবায়ু ঋণ বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁদে ফেলছে

জলবায়ু ঋণ দ্রুত বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো গভীর ফাঁদে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে ক্লাইমেট ডেট্ রিস্ক ইনডেক্স-২০২৫ (সিডিআরআই)। রোববার (১৬ নভেম্বর) ব্রাজিলের বেলেমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকা-ভিত্তিক চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং ইয়ুথ পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ওয়াইপিএসএ)-যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে ৫৫টি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি দেশ ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’, ৩৪টি ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ এবং মাত্র দুটি দেশ ‘নিম্ন ঝুঁকিতে’ রয়েছে। প্রতিবেদনে, বাংলাদেশকে সেই দেশগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এ দশকের মধ্যেই জলবায়ু ঋণে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকি’ গ্রুপে নেমে যেতে পারে—যদি বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন গ্রান্ট, ঋণমুক্তি ও ঋণ-বিনিময় সংস্কারে না যায়। বাংলাদেশের জলবায়ু অর্থায়নের অবস্থা বিশ্বে সবচেয়ে অসম ঋণগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির ঋণ-টু-গ্রান্ট অনুপাত ২.৭০, যেখানে প্রতিবেশী নেপালের অনুপাত মাত্র ০.

জলবায়ু ঋণ বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁদে ফেলছে

জলবায়ু ঋণ দ্রুত বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো গভীর ফাঁদে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে ক্লাইমেট ডেট্ রিস্ক ইনডেক্স-২০২৫ (সিডিআরআই)।

রোববার (১৬ নভেম্বর) ব্রাজিলের বেলেমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকা-ভিত্তিক চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং ইয়ুথ পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ওয়াইপিএসএ)-যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে ৫৫টি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি দেশ ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’, ৩৪টি ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ এবং মাত্র দুটি দেশ ‘নিম্ন ঝুঁকিতে’ রয়েছে।

প্রতিবেদনে, বাংলাদেশকে সেই দেশগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এ দশকের মধ্যেই জলবায়ু ঋণে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকি’ গ্রুপে নেমে যেতে পারে—যদি বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন গ্রান্ট, ঋণমুক্তি ও ঋণ-বিনিময় সংস্কারে না যায়। বাংলাদেশের জলবায়ু অর্থায়নের অবস্থা বিশ্বে সবচেয়ে অসম ঋণগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির ঋণ-টু-গ্রান্ট অনুপাত ২.৭০, যেখানে প্রতিবেশী নেপালের অনুপাত মাত্র ০.১০।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রায় ৩২% বড় আকারের জ্বালানি প্রকল্পে যাচ্ছে—যার অধিকাংশই ঋণ-নির্ভর—কিন্তু মানুষের টিকে থাকার জন্য জরুরি খাতগুলো চরমভাবে উপেক্ষিত। স্বাস্থ্য খাতে যাচ্ছে ১% এরও কম, জনসংখ্যা-সম্পর্কিত কর্মসূচিতে আরও কম, আর দুর্যোগ প্রতিরোধে বরাদ্দ মাত্র ১% এর মতো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য আরও উদ্বেগজনক। অথচ বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ঘূর্ণিঝড় প্রতিরক্ষা, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি ও উপকূলীয় অবকাঠামো সম্প্রসারণ এখন অতি জরুরি।

অতি কম-নিঃসরণকারী দেশ যেমন নাইজার, রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশের—প্রতি টন কার্বন নিঃসরণে জলবায়ু ঋণের পরিমাণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এই ঋণনির্ভরতা বাংলাদেশের অভিযোজন সক্ষমতা হ্রাস করছে বিশেষত ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও তাপপ্রবাহ আরও খারাপ হওয়ার মধ্যে রয়েছে। জলবায় ঋণের ক্ষেত্রে জিবুতি ও গিনি ইতোমধ্যে ‘উচ্চ’ থেকে ‘অত্যন্ত উচ্চ’ ঝুঁকিতে চলে গেছে, আর পূর্ব তিমুর ‘মধ্যম’ থেকে ‘উচ্চ’ ঝুঁকিতে প্রবেশ করেছে।

গবেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোয় ঝুঁকি সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে— যেখানে জলবায়ু-ঝুঁকির সঙ্গে ঋণনির্ভর অর্থায়ন মিলিত হয়ে কাঠামোগত সংকট তৈরি করছে। যা ভয়াবহ চিত্র বহন করে। ২০২৩ সালে ৫৫ দেশ ঋণ পরিশোধে দিয়েছে ৪৭.১৭ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু জলবায়ু অর্থায়ন পেয়েছে মাত্র ৩৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ এখন ২৩.১২ ডলার— যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি, মাথাপিছু ২৯.৮৭ ডলার। এই উচ্চ চাপের মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত।

অনুষ্ঠানে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান গবেষক এম জাকির হোসেন খান বলেন, যেখানে প্রচুর অর্থ সহায়তা প্রয়োজন, সেখানে জলবায়ুর টাকা আসে অনেক দেরিতে— আর যা আসে তা ঋণ হিসেবে। এতে আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে এবং মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমরা এমন এক সংকট মোকাবিলায় ঋণ নিচ্ছি যে সংকট আমরা তৈরি করিনি বলেন, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা বিশ্লেষক সামীরা বসির রোজা। তার মতে, বাংলাদেশসহ বহু দেশের জন্য জরুরি হলো গ্রান্ট-বেজড অর্থায়ন ও দ্রুত অর্থ ছাড়।

আরএএস/কেএইচকে

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow