জাপানের বাজারে ৭ হাজার ৩৭৯ পণ্যে পাওয়া যাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট–ইপিএ) সংক্রান্ত আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোতেগি তোশিমিৎসুর সঙ্গে টেলিফোন আলাপের সময় তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ-জাপান ইপিএর প্রধান আলোচক আয়েশা আক্তার, উপপ্রধান আলোচক মো. ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ এবং ফোকাল পয়েন্ট মাহবুবা খাতুন মিনু উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে এই প্রথম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের সঙ্গে ইপিএ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে ৭ হাজার ৩৭৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৩৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তান

জাপানের বাজারে ৭ হাজার ৩৭৯ পণ্যে পাওয়া যাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট–ইপিএ) সংক্রান্ত আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোতেগি তোশিমিৎসুর সঙ্গে টেলিফোন আলাপের সময় তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ-জাপান ইপিএর প্রধান আলোচক আয়েশা আক্তার, উপপ্রধান আলোচক মো. ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ এবং ফোকাল পয়েন্ট মাহবুবা খাতুন মিনু উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে এই প্রথম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের সঙ্গে ইপিএ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে ৭ হাজার ৩৭৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৩৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক (আরএমজি) চুক্তির প্রথম দিন থেকেই জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। পাশাপাশি আরএমজি খাতে ‘সিঙ্গেল স্টেজ ট্রান্সফরমেশন’ সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সেবা খাতের বাণিজ্যেও উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশ জাপানের জন্য ৯৭টি উপখাত উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে, আর জাপান বাংলাদেশের জন্য চারটি সরবরাহ পদ্ধতিতে ১২০টি উপখাত উন্মুক্ত করবে। এর ফলে জাপানি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তর বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, ইপিএ আলোচনার প্রথম ধাপে একটি যৌথ সমীক্ষা দল গঠন করা হয়। দলটি ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ১৭টি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত ও বিস্তৃত কাঠামোর আওতায় আলোচনা পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।

সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইপিএ আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দফা আলোচনা ওই বছরের ১৯ থেকে ২৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলেও কিছু অনিবার্য কারণে আলোচনা সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের স্বার্থে ইপিএর গুরুত্ব বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে নতুন করে আলোচনায় গতি আনে। এক বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দ্রুততর আলোচনা প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় দফা আলোচনা ২০২৪ সালের ১০ থেকে ১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তৃতীয় দফা আলোচনা ১৯ থেকে ২০ ডিসেম্বর টোকিওতে, চতুর্থ দফা ২০২৫ সালের ২ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়, পঞ্চম দফা ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল টোকিওতে এবং ষষ্ঠ দফা ২১ থেকে ২৬ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সপ্তম ও চূড়ান্ত দফা আলোচনা ৩ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়। এসব দফার মধ্য দিয়েই ইপিএর পূর্ণাঙ্গ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

আলোচনার দ্রুত অগ্রগতির পেছনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সরাসরি সম্পৃক্ততাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। তারা একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এবং জাপানে উচ্চপর্যায়ের সফরের মাধ্যমে মন্ত্রীপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেন, যা চুক্তি চূড়ান্তকরণে বড় ভূমিকা রাখে।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এই প্রথম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের সঙ্গে ইপিএ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আলোচক পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। পরবর্তী ধাপে উভয় পক্ষের আইনি যাচাই (লিগ্যাল স্ক্রাবিং) এবং উপদেষ্টা পরিষদ বা মন্ত্রিসভার প্রয়োজনীয় অনুমোদন গ্রহণ করা হবে।

এমইউ/বিএ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow