জুট মিলস করপোরেশনের হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটের অভিযোগ
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল। বুধবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। পাট শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজার সঞ্চালনায় এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আল নোমান। তিনি বলেন, সরকারের সবচেয়ে পুরোনো মন্ত্রণালয় হচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বিজেএমসির আওতায় ২৫টি মিল চালু ছিল। কিন্তু পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বের পাটজাত পণ্যের বাজার ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিজেএমসি পরিচালিত ২৫টি জুট মিল ২০২০ সালের ১ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মিলগুলোতে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেই সঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, দোকানদারসহ লাখ লাখ লোক কর্মসংস্থান হারিয়ে পথে বসেছেন। এছাড়া, দেশকে প্রতি বছ
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। পাট শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজার সঞ্চালনায় এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আল নোমান।
তিনি বলেন, সরকারের সবচেয়ে পুরোনো মন্ত্রণালয় হচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বিজেএমসির আওতায় ২৫টি মিল চালু ছিল। কিন্তু পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বের পাটজাত পণ্যের বাজার ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিজেএমসি পরিচালিত ২৫টি জুট মিল ২০২০ সালের ১ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মিলগুলোতে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেই সঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, দোকানদারসহ লাখ লাখ লোক কর্মসংস্থান হারিয়ে পথে বসেছেন। এছাড়া, দেশকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সাঈদ আল নোমান বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পতিত সরকার ও তাদের দোসররা মনগড়া পলিসি তৈরি করে বন্ধ ১৩ থেকে ১৪টি পাটকল নামমাত্র মূল্যে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজ দিয়েছে। জানা যায় খুলনা, যশোর, নরসিংদী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি মিলের লিজে মারাত্মক দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। কোনো কোনো মিলের প্রথমবার টেন্ডারে লিজ মানি বেশি দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে সে প্রতিষ্ঠানকে লিজ না দিয়ে পরবর্তীতে অনেক কম লিজ মানিতে অন্য প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে করে একদিকে সরকারি সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে, অন্যদিকে কম লিজ মানির কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখানে শেষ নয়, প্রথমে লিজকৃত মিলগুলোর গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারণ করা হয় ৯ মাস। পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতাদের সঙ্গে যোগসাজস করে গ্রেস পিরিয়ড বৃদ্ধি করে ৩০ মাস করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। উৎপাদন চালু মিলে কেন এক মাসের পরিবর্তে ৩০ মাস গ্রেস পিরিয়ড করা হলো তা বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই এখানে অনিয়ম করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এসব কার্যক্রমের বড় হোতা ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং বিদায়ী পাট সচিব আব্দুর রউফ। বন্ধ মিলগুলো পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে চালু করে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের ঢোল বাজানো হলেও লিজ দেওয়া দু-তিনটি মিলে নামমাত্র উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু মিলগুলোতে স্থাপিত যুক্তরাজ্যের বেলফাস্টের জেমস মেকি অ্যান্ড সন্স কোম্পানির যন্ত্রপাতিগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে কেজি দরে নূন্যতম মূল্যে বিক্রি করে একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে মিলের মূল্যবান জায়গা-জমি দখল ও গাছ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য কায়েম করা হয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রমিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল আট দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন ও লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। তাই বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বিজেএমসির মূল্যবান সম্পদের ওপর অশুভ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর আহ্বান জানানো হয়।
এসময় শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে বস্ত্র ও পাট কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সোনালি আঁশের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা এই পাটকে হারিয়ে যেতে দেব না। এটা নিয়ে বড় টাস্কফোর্স হওয়া প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/একিউএফ
What's Your Reaction?