ডেটলের নামে ভয়ংকর প্রতারণা, গোপন কারখানার সন্ধান

গায়ে লেখা ‘অরিজিনাল’ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই নকল। সাধারণ সাবানের মতোই লেখা, রঙ ও মোড়ক। বাহ্যিকভাবে নামকরা ব্র্যান্ড ডেটলের মতো মনে হলেও ভেতরে ছিল মানহীন ও ক্ষতিকর উপাদান। দীর্ঘদিন ধরে এমন নকল সাবান চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র, যা নীরবে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছিল। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানাধীন মজ্জারটেক শিকলবাহা এলাকায় এমনই একটি নকল সাবান তৈরির গোপন কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম, র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। র‌্যাব-৭ সূত্র জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকায় অবৈধভাবে নকল সাবান উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলে শিকলবাহা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের একটি স্থাপনায় কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। বাইরে থেকে এটি অটোরিকশা গ্যারেজ মনে হলেও

ডেটলের নামে ভয়ংকর প্রতারণা, গোপন কারখানার সন্ধান
গায়ে লেখা ‘অরিজিনাল’ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই নকল। সাধারণ সাবানের মতোই লেখা, রঙ ও মোড়ক। বাহ্যিকভাবে নামকরা ব্র্যান্ড ডেটলের মতো মনে হলেও ভেতরে ছিল মানহীন ও ক্ষতিকর উপাদান। দীর্ঘদিন ধরে এমন নকল সাবান চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র, যা নীরবে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছিল। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানাধীন মজ্জারটেক শিকলবাহা এলাকায় এমনই একটি নকল সাবান তৈরির গোপন কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম, র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। র‌্যাব-৭ সূত্র জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকায় অবৈধভাবে নকল সাবান উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলে শিকলবাহা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের একটি স্থাপনায় কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। বাইরে থেকে এটি অটোরিকশা গ্যারেজ মনে হলেও ভেতরে ঢুকে দেখা যায় আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নকল সাবান উৎপাদনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। অভিযানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল নকল সাবান, কাঁচামাল ও সাবান তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে পরিচালিত কারখানাটি তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করা হয় এবং উদ্ধারকৃত মালামাল জব্দ করা হয়। বিএসটিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, কারখানাটি ‘সলিড করপোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছিল। তবে লাইসেন্সে সাধারণ সলিড সাবান উৎপাদনের অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে এখানে ডেটল সাবান ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ‘লিফোর্ড’-এর আদলে নকল সাবান তৈরি করা হচ্ছিল, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। তিনি বলেন, কারখানাটির কোনো বিএসটিআই অনুমোদন বা মান নিয়ন্ত্রণ সনদ ছিল না। ব্যবহৃত কাঁচামাল ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ছিল নিম্নমানের। এসব সাবানে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে, যা ত্বকের এলার্জি, চুলকানি, র‍্যাশ ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু ও সংবেদনশীল ত্বকের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। র‌্যাব–৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নামকরা ব্র্যান্ডের আদলে নকল সাবান তৈরি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। এটি শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধেও একটি গুরুতর অপরাধ। ভোক্তাদের সুরক্ষায় এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে র‌্যাব–৭-এর অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানকালে কারখানায় কর্মরত দুজন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। উদ্ধারকৃত নকল সাবান ও উৎপাদন সরঞ্জামাদির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ওই স্থাপনায় রাতের বেলায় অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা যেত। এক স্থানীয় হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জানতাম এটা অটোরিকশা গ্যারেজ। কিন্তু গভীর রাতে ভেতরে কাজ চলত। বুঝতে পারিনি এখানে নকল সাবান তৈরি হচ্ছে।’ ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে এসব নকল সাবান ব্যবহারের ফলে অনেকেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। নকল ও আসল পণ্যের পার্থক্য সহজে বোঝার উপায় না থাকায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে তারা জানান। নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow