দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই, বেকারত্ব বেড়েছে

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই। বেকারত্ব বেড়েছে। দারিদ্রসীমার নিচের মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য মুক্ত আলোচনা: তরুণদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংলাপ হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবশক্তি, কিন্তু তার মধ্যে শিক্ষিত বেকার অনেক। কর্মসংস্থান তেমনভাবে তৈরি হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উচ্চস্বরেই বলছে যে পৃথিবীর কোনো শক্তিই এই নির্বাচন থামাতে পারবে না। জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি, যে তরুণেরা এই দেশের পরিবর্তন এবং সংস্কার দেখার জন্য অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তারাই আজকে হতাশ। তারুণ্যের অংশগ্রহণ মানে এই না যে তাকে আমরা মন্ত্রিত্বে বসিয়ে দিলাম বা সংসদে বসিয়ে দিলাম। তাতে করে দেশের খুব লাভ হয় বলে মনে করি না। সবারই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়

দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই, বেকারত্ব বেড়েছে

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই। বেকারত্ব বেড়েছে। দারিদ্রসীমার নিচের মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য মুক্ত আলোচনা: তরুণদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংলাপ হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবশক্তি, কিন্তু তার মধ্যে শিক্ষিত বেকার অনেক। কর্মসংস্থান তেমনভাবে তৈরি হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেন, ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উচ্চস্বরেই বলছে যে পৃথিবীর কোনো শক্তিই এই নির্বাচন থামাতে পারবে না।

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি, যে তরুণেরা এই দেশের পরিবর্তন এবং সংস্কার দেখার জন্য অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তারাই আজকে হতাশ। তারুণ্যের অংশগ্রহণ মানে এই না যে তাকে আমরা মন্ত্রিত্বে বসিয়ে দিলাম বা সংসদে বসিয়ে দিলাম। তাতে করে দেশের খুব লাভ হয় বলে মনে করি না। সবারই একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তরুণদেরও সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী উল্লেখ করেন, চাকরির বাজারে বৈষম্যের বিরুদ্ধেই দেশে এই বিপ্লব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে তিনটা সংখ্যার ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে সেই তিনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়লে আমরা কী করবো আমি জানি না। বিশ্বব্যাংক বলছে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে এবং দারিদ্রসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো কিন্তু কোনো ভালো লক্ষণ নয়। অন্যান্য সূচকগুলো দেখেও আমরা ভালো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। যা দেখা যাচ্ছে সেটা খুবই উদ্বেগজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘মব এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। জ্বালানি সংকট নিয়ে আমাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নাই। শিল্পকারখানা বলছে আমাদের এখন দক্ষ জনশক্তি নাই। এলডিসি গ্রাজুয়েশনকে (স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণ) সরকার খুবই ইতিবাচকভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু আমরা এটাকে সেভাবে দেখি না। পৃথিবী এখন একক মেরু থেকে বহু মেরুর অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। পোশাকের বাজার এখনো আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় একটি বাজার এবং সেটাকে সুযোগ হিসেবে দেখা যায়।’

ডিজিটাল অবকাঠামোতে বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘কিন্তু সেই সুযোগ আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। সব দেশ ৩০ বছর পরই পোশাক শিল্প থেকে সরে আসে, ইউরোপ বলেন বা জাপান বলেন। কিন্তু আমরা ৪৫ বছর পরও এখান থেকে সরে তো আসছি-ই না, বরং সেটার ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও এর বাস্তব চিত্র অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি ৪.৩৬ শতাংশ বেকারত্বের হারকে খুব বড় কোনো সংকট হিসেবে দেখেন না। তার ভাষ্য, কেবল শতাংশের ভিত্তিতে পরিস্থিতির পূর্ণ বাস্তবতা বোঝা যায় না।

বিএনপি নেতার মতে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ ধরনের পরিসংখ্যান অনেক সময় বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে, সেগুলোর ক্ষেত্রে তথ্যের যথার্থতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া কার্যকর নীতি প্রণয়ন সম্ভব নয়।

আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব ও জীবিকার মধ্যে স্পষ্ট কোনো পার্থক্য অনেক সময় দেখা যায় না। কারণ সেখানে মানুষের একাধিক আয়ের উৎস থাকে। ফলে বেকারত্বের পরিণতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো ততটা গুরুতর আকার ধারণ করেনি। অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক আয়ের মাধ্যমে বেকারত্বের অবস্থাও দূর হয়ে যায়।

অর্থনীতির পরিভাষায় একে ‘ছদ্ম বেকারত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরুণদের বিভিন্ন উৎস থেকে আয় থাকায় তাদের মৌলিক চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা চাকরি অনুসন্ধানে ততটা আন্তরিক বা সক্রিয় থাকে না। এর পরিণতিতে তরুণরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও সরকারি প্রেক্ষাপটে এ বাস্তবতাই আগামী দিনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. সায়েমা হক বিদিশা, অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষার, বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য মাহমুদা হাবিবা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কো-অর্ডিনেটর দিদারুল আলম ভূঁইয়া, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।

পারভেজ করিম আব্বাসী জানান, ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৮.১৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ২৯ থেকে ৩০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বেকার। প্রতি বছর প্রায় সাত লাখ গ্র্যাজুয়েট হচ্ছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র এক লাখ তরুণই চাকরির সুযোগ পান।

তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে পারছে না। এর ফলে ডিগ্রির যথাযথ মূল্যায়ন এবং কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। এ কাঠামোগত সমস্যার প্রেক্ষাপটেই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।

পারভেজ করিম আব্বাসী উল্লেখ করেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। তরুণদের পুঁজির জোগান, দক্ষতা উন্নয়ন ও টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে।

এসএম/একিউএফ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow