দ্য মেটামরফোসিস: বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি
তাহমিনা আক্তার মীম ফ্রানৎস কাফকা (৩ জুলাই ১৮৮৩–৩ জুন ১৯২৪) ছিলেন প্রাগের একজন অস্ট্রিয়ান-চেক ঔপন্যাসিক। তিনি বিংশ শতকের সাহিত্য জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। কাফকা জার্মান ভাষায় লেখালেখি করতেন। তাঁর কাজ বাস্তবতা ও কল্পনার মিশ্রণ হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখায় সাধারণত বিচ্ছিন্ন নায়করা অদ্ভুত বা অতিপ্রাকৃত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। জটিল সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মোকাবিলা করেন। তাঁর সাহিত্য বিচ্ছিন্নতা, অস্তিত্বমূলক উদ্বেগ, অপরাধবোধ এবং অযৌক্তিকতার মতো বিষয় নিয়ে কাজ করে। তাঁর সবচেয়ে পরিচিত রচনাগুলোর একটি হলো ‘দ্য মেটামরফোসিস’ (নভেলা)। এটি মূলত একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ উপন্যাসিকা। গল্পটি যেমন উদ্ভট; তেমনই বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। কাফকার জীবনদর্শনের আলোকে বলা যায়—এ রচনা তাঁর প্রতিনিধিত্বমূলক সৃষ্টি। যেখানে মানুষের অস্তিত্ববোধ, পরিবার, দায়িত্ব, সামাজিক প্রত্যাশা ও বিচ্ছিন্নতার ট্র্যাজেডিকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পে যুবক গ্রেগর সামসা একজন মধ্যবিত্ত ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান; সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে। কঠিন চাকরি, পরিবারের চাপ, অ
তাহমিনা আক্তার মীম
ফ্রানৎস কাফকা (৩ জুলাই ১৮৮৩–৩ জুন ১৯২৪) ছিলেন প্রাগের একজন অস্ট্রিয়ান-চেক ঔপন্যাসিক। তিনি বিংশ শতকের সাহিত্য জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। কাফকা জার্মান ভাষায় লেখালেখি করতেন। তাঁর কাজ বাস্তবতা ও কল্পনার মিশ্রণ হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখায় সাধারণত বিচ্ছিন্ন নায়করা অদ্ভুত বা অতিপ্রাকৃত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। জটিল সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মোকাবিলা করেন।
তাঁর সাহিত্য বিচ্ছিন্নতা, অস্তিত্বমূলক উদ্বেগ, অপরাধবোধ এবং অযৌক্তিকতার মতো বিষয় নিয়ে কাজ করে। তাঁর সবচেয়ে পরিচিত রচনাগুলোর একটি হলো ‘দ্য মেটামরফোসিস’ (নভেলা)। এটি মূলত একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ উপন্যাসিকা। গল্পটি যেমন উদ্ভট; তেমনই বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি।
কাফকার জীবনদর্শনের আলোকে বলা যায়—এ রচনা তাঁর প্রতিনিধিত্বমূলক সৃষ্টি। যেখানে মানুষের অস্তিত্ববোধ, পরিবার, দায়িত্ব, সামাজিক প্রত্যাশা ও বিচ্ছিন্নতার ট্র্যাজেডিকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পে যুবক গ্রেগর সামসা একজন মধ্যবিত্ত ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান; সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে। কঠিন চাকরি, পরিবারের চাপ, অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে সে বিপর্যস্ত হলেও এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পায় এই ভেবে যে, সে পরিবারের উপকার করছে। বিশেষ করে তার বোনের স্বপ্নপূরণে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গল্পের শুরুতেই পাঠক বুঝতে পারেন, এ বাস্তবতা আসলে আরও গভীর ও জটিল। গ্রেগর সামসা এক সকালে দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে ওঠে এবং দেখে বিশাল একটি পতঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে। বাস্তবে এমন ঘটনা অসম্ভব হলেও কাফকা এই অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে মানুষের মানসিক বিপর্যয়, চাপ এবং অক্ষমতার নির্মম সত্য তুলে ধরেছেন। পতঙ্গে রূপান্তরের পর গ্রেগরের পরিবারের বিস্ময়, আতঙ্ক এবং দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকট স্পষ্ট হতে থাকে।
প্রথমদিকে গ্রেগর ভাবে, হয়তো আবার ঘুমালে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু দ্রুতই সে বুঝতে পারে, এটাই এখন তার নতুন বাস্তবতা। এরপর শুরু হয় নিজের অদ্ভুত শরীর, চলাফেরা, খাবার গ্রহণ এবং ঘরের বন্দিত্বকে বোঝার ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা—যা বাস্তব জীবনে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মানসিক যুদ্ধে মানুষের প্রতীক।
আরও পড়ুন
চেয়ারের মুখোমুখি: আত্মঘাতী বিমূর্ত উদযাপন
শেষের কবিতা: কাব্যধর্মী রোমান্টিক উপন্যাস
গল্প যত এগোয়, গ্রেগর সামসা তার পরিচিত জগত, পরিবার এবং মানবিক যোগাযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তার অনুভূতি ও ভাবনা অপরিবর্তিত থাকলেও সে পরিবারের কাছে নিজের কথা প্রকাশে ব্যর্থ—এ ব্যর্থতাই ট্র্যাজেডিকে আরও তীব্র করে।
গ্রেগরের মা, বাবা, বোন এবং গৃহপরিচারিকার আচরণ ক্রমে বদলে যায়। বিশেষ করে বোন গ্রেটের পরিবর্তন লক্ষণীয়—যে প্রথমে তাকে যত্ন করতো, সে-ও ধীরে ধীরে বিরক্ত ও উদাসীন হয়ে পড়ে। পরিবারের কাছে গ্রেগর পরিণত হয় বোঝায়, একটি অসহনীয় উপস্থিতিতে।
শেষপর্যন্ত গ্রেগরের মৃত্যু তাদের বিস্মিত করলেও পরক্ষণেই পরিবার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নতুন উদ্যমে তারা জীবনের নতুন পথ খুঁজে নেয়। গ্রেগরের মৃত্যু যেন তাদের মুক্তি এনে দেয়।
‘দ্য মেটামরফোসিস’ বাস্তবতাবিরোধী গল্প হলেও এর ভেতরে আমরা মানুষের অস্তিত্ব সংকটের নির্মম বাস্তবতা খুঁজে পাই। মানুষ সত্যিই পতঙ্গে রূপান্তরিত হয় না, কিন্তু সে সামাজিকভাবে, মানসিকভাবে, সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতায়, দায়ভার বহনে বা যোগাযোগ ব্যর্থতায় এমন অবস্থায় পৌঁছে—যেখানে সে নিজ পরিবার ও সমাজের কাছে অপরিচিত হয়ে পড়ে।
গল্পটি দেখায়, কীভাবে একজন মানুষের অস্তিত্ব অনেক সময় অন্যদের কাছে বোঝা হয়ে ওঠে। তার শেষপর্যন্ত মৃত্যু অন্যদের মুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। উদ্ভটতার মধ্যেও গল্পটি সমাজের অমানবিকতা, ব্যর্থ যোগাযোগ, নিঃসঙ্গতা ও মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/
What's Your Reaction?