নারীরা কোনো পরিসরেই পুরোপুরি নিরাপদ নন: অ্যাকশনএইড

অনলাইন হোক বা অফলাইন, নারীরা কোনো পরিসরেই পুরোপুরি নিরাপদ নন। অনলাইনে সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে গণপরিবহন ও পাবলিক স্পেসেও নারীর ভয়ের মাত্রা কমছে না। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছ। নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার জোরালো দাবিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ১৬ দিনব্যাপী জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ অভিযানের উদ্বোধন করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। উদ্বোধনীতে শিল্পকলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টোরিজ অব কারেজ’ শীর্ষক আউটডোর পারফরম্যান্স ও ইনস্টলেশন সিরিজ। যেখানে নারীর সাহস, প্রতিকূলতা ও লড়াইয়ের গল্পগুলো ফুটে ওঠে। এরপর চিত্রশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘একোজ অব হার লাইফ’—গণপরিবহন, পাবলিক স্পেস ও সেবাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতিদিনকার হয়রানি নিয়ে নির্মিত শক্তিশালী নাটক। অনলাইন ও অফলাইনে নারীর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটির মরিয়ম নেছা। নাটকের বিরতিতে ইন্টারেক্টিভ আলোচনায় বক্তারা বলেন, সহিংসতা কমাতে শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ নয়—জেন্ডার সংবেদনশীল

নারীরা কোনো পরিসরেই পুরোপুরি নিরাপদ নন: অ্যাকশনএইড

অনলাইন হোক বা অফলাইন, নারীরা কোনো পরিসরেই পুরোপুরি নিরাপদ নন। অনলাইনে সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে গণপরিবহন ও পাবলিক স্পেসেও নারীর ভয়ের মাত্রা কমছে না। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছ।

নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার জোরালো দাবিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ১৬ দিনব্যাপী জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ অভিযানের উদ্বোধন করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

উদ্বোধনীতে শিল্পকলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টোরিজ অব কারেজ’ শীর্ষক আউটডোর পারফরম্যান্স ও ইনস্টলেশন সিরিজ। যেখানে নারীর সাহস, প্রতিকূলতা ও লড়াইয়ের গল্পগুলো ফুটে ওঠে। এরপর চিত্রশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘একোজ অব হার লাইফ’—গণপরিবহন, পাবলিক স্পেস ও সেবাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতিদিনকার হয়রানি নিয়ে নির্মিত শক্তিশালী নাটক।

অনলাইন ও অফলাইনে নারীর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটির মরিয়ম নেছা।

নাটকের বিরতিতে ইন্টারেক্টিভ আলোচনায় বক্তারা বলেন, সহিংসতা কমাতে শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ নয়—জেন্ডার সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা, সামাজিক নৈতিকতার উন্নয়ন ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব বদল জরুরি। তারা শিক্ষাক্রমে জেন্ডার সচেতনতা যুক্ত করা এবং নিরাপদ পাবলিক স্পেস তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ছিল ৬৩ শতাংশ। এর ফলে ৪২ শতাংশ নারী অনলাইনে উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছেন।

নারীরা কোনো পরিসরেই পুরোপুরি নিরাপদ নন: অ্যাকশনএইড

‘এছাড়া ৬৩ শতাংশ নারী ভয়ের অনুভূতি নিয়ে বাইরে বের হন এবং ২২ শতাংশ নারী গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। তথ্যগুলো স্পষ্ট করে যে, অনলাইন বা অফলাইন নারীরা কোথাওই পুরোপুরি নিরাপদ নন’—বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকার প্রধান কারণ প্রশ্রয় ও জবাবদিহির অভাব। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, সমাজে ‘কালচারাল ভায়োলেন্স’ এবং এর নীরব গ্রহণযোগ্যতা সহিংসতা বাড়াচ্ছে। তিনি নগরবাসীকে নীরব দর্শক না হয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, পুরুষ ও ছেলেদের ইতিবাচক পরিবর্তনের অংশীদার না করলে সহিংসতা কমবে না। সরকার ও নাগরিক সমাজকে যৌথভাবে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

ডিএনসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এস এম শফিকুর রহমান নগর নকশায় জেন্ডার-সংবেদনশীল পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ফারহানা ইয়াসমিন দ্রুত অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, থানায় নারী পুলিশ সদস্য বৃদ্ধি ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিড শারমিন ইসলাম গণপরিসরে সিসিটিভি নজরদারি জোরদার, জেন্ডার বাজেট বৃদ্ধি এবং পাঠ্যক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সহিংসতা বাড়ছে; তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে এখনই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা ফখরুল আরেফিন খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আরাসহ সরকারের নীতিনির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বৈশ্বিক ১৬ দিনের প্রচারাভিযান। দেশের বিভিন্ন নগরে স্থানীয় পর্যায়েও নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা সহিংসতা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি জনআন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

জেপিআই/এমকেআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow