ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নির্ভর করে বিচারকদের নিরপেক্ষতা-সাহসিকতায়

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ন্যায়বিচারের সর্বোত্তম নিশ্চয়তা নির্ভর করে বিচারকদের ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা, সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার ওপর। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: গুম বিষয়ে বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক চতুর্থ আইনি কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ কথা বলেন। দিনব্যাপী কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের উদ্যোগে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ঢাকা কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ ও শেষ এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। বিচারপতি মইনুল ইসলাম জানান, একজন বিচারককে প্রতিটি মামলা সমান উদ্যম, কঠোরতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচার করতে হবে। প্রতিদিন সকালে যখন বিচারকরা তাদের পোশাক পরিধান করবেন তখন তাদের সংবিধানের কথাগুলো স্মরণ করা উচিত। প্রজাতন্ত্র হবে এমন এক গণতন্ত্র যেখানে সব মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে, যোগ করেন তিনি। বিচারকদের উদ্দেশে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘আসুন আমরা এমন একটি বিচারব্যবস্থা গ

ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নির্ভর করে বিচারকদের নিরপেক্ষতা-সাহসিকতায়

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ন্যায়বিচারের সর্বোত্তম নিশ্চয়তা নির্ভর করে বিচারকদের ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা, সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার ওপর।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: গুম বিষয়ে বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক চতুর্থ আইনি কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

দিনব্যাপী কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের উদ্যোগে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ঢাকা কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ ও শেষ এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম জানান, একজন বিচারককে প্রতিটি মামলা সমান উদ্যম, কঠোরতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচার করতে হবে। প্রতিদিন সকালে যখন বিচারকরা তাদের পোশাক পরিধান করবেন তখন তাদের সংবিধানের কথাগুলো স্মরণ করা উচিত।

ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নির্ভর করে বিচারকদের নিরপেক্ষতা-সাহসিকতায়

প্রজাতন্ত্র হবে এমন এক গণতন্ত্র যেখানে সব মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে, যোগ করেন তিনি।

বিচারকদের উদ্দেশে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘আসুন আমরা এমন একটি বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলি, যেখানে ঢাকার একজন ফেরিওয়ালা বা খুলনার একজন পোশাকশ্রমিক বা সিলেটের একজন রিকশাচালকও বলতে পারেন, “আমরা আদালতের প্রতি আস্থা রাখি, আমরা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখি।”’

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের চিফ অব মিশন হুমা খান উল্লেখ করেন, বিচারকদের নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। গুমের ভুক্তভোগীদের করুণ পরিণতি এবং তাদের পরিবারের দীর্ঘ অনিশ্চয়তা সমাজকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে।

তিনি বলেন, ‘আমি যেসব ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অধিকাংশই সামাজিক চাপ ও মানসিক কষ্টে ভুগছে। মামলা পরিচালনায় ভয়ভীতি, তদন্ত জটিলতা ও প্রভাবশালী মহলের চাপ ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।’

আরও পড়ুন
জিয়াউল আহসান শত শত মানুষকে পেট কেটে নদীতে ফেলে দিয়েছেন
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ১২০ দিনের মধ্যে করতে হবে গুমের বিচার
গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কাজ পরিচালনার জন্য কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি কমিশনের সভাপতি ও সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এসময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।

কর্মশালায় কমিশনের আরেক সদস্য মো. নূর খান বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ভুক্তভোগীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সেশন পরিচালনা করেন।

কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিসের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা।

আলোচনায় গুম প্রতিরোধে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম-সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভুক্তভোগীদের মানসিক ও আইনি সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।

এছাড়া, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভুক্তভোগীদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা দেওয়া এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের সুপারিশ জানানো হয়।

টিটি/একিউএফ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow