‘পানিচুক্তি’ লঙ্ঘন করে চেনাব নদীতে ভারতের নতুন প্রকল্প!

সিন্ধু পানিচুক্তি (আইডব্লিউটি) লঙ্ঘন করে ভারত চেনাব নদীর ওপর দুলহস্তি স্টেজ–টু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ভারতীয় রুপি। আগামী বছরের শুরুতেই কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনএইচপিসি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। দুলহস্তি স্টেজ–টু থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। পহেলগাম ঘটনার পর ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত রাখার যে অবস্থান নিয়েছে, তার প্রেক্ষাপটেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। আরও পড়ুন>>পানি আটকানো যুদ্ধ ঘোষণার শামিল: ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি পাকিস্তানেরভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হলেও স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানিচুক্তিভারতের পক্ষে কি পাকিস্তানে সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ আটকানো সম্ভব? এর আগে, গত আগস্টে স্থায়ী সালিশি আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন) রায় দিয়ে বলেছিল, পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর পানি পাকি

‘পানিচুক্তি’ লঙ্ঘন করে চেনাব নদীতে ভারতের নতুন প্রকল্প!

সিন্ধু পানিচুক্তি (আইডব্লিউটি) লঙ্ঘন করে ভারত চেনাব নদীর ওপর দুলহস্তি স্টেজ–টু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ভারতীয় রুপি। আগামী বছরের শুরুতেই কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনএইচপিসি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। দুলহস্তি স্টেজ–টু থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

পহেলগাম ঘটনার পর ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত রাখার যে অবস্থান নিয়েছে, তার প্রেক্ষাপটেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন>>
পানি আটকানো যুদ্ধ ঘোষণার শামিল: ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হলেও স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানিচুক্তি
ভারতের পক্ষে কি পাকিস্তানে সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ আটকানো সম্ভব?

এর আগে, গত আগস্টে স্থায়ী সালিশি আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন) রায় দিয়ে বলেছিল, পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর পানি পাকিস্তানের অবাধ ব্যবহারের জন্য ‘প্রবাহিত হতে দিতে হবে’।

ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তির আওতায় চেনাব নদীর পানি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে আসছে। তবে দুলহস্তি স্টেজ–টু প্রকল্প চুক্তির একাধিক বিধান লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান।

সিন্ধু পানিচুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের হাতে, আর রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু ভারতের নিয়ন্ত্রণে। এই চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার কোনো বিধান নেই; বরং বিরোধ নিষ্পত্তির সুস্পষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।

পাকিস্তান বলছে, সিন্ধু পানিচুক্তি অবৈধভাবে স্থগিত রাখার পর ভারত সিন্ধু অববাহিকায় একাধিক বিতর্কিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে সাওয়ালকোট, রাতলে, বুরসার, পাকাল দুল, কওয়ার, কিরু এবং কির্থাই–এক ও দুই রয়েছে। দুলহস্তি স্টেজ–টু এই কৌশলেরই অংশ হিসেবে বিবেচিত।

আরও পড়ুন>>
পাকিস্তানে চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ তলানিতে নামালো ভারত
সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানের হাতে চার বিকল্প

প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রকল্পটি পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইসলামাবাদ।

দুলহস্তি স্টেজ–টু প্রকল্পে দুলহস্তি স্টেজ–ওয়ান-এর বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে। উল্লেখ্য, ৩৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুলহস্তি স্টেজ–ওয়ান রান–অব–দ্য–রিভার প্রকল্পটি ২০০৭ সালে চালু হয়। নতুন পর্যায়ে মারুসুদার নদী থেকে পানি এনে পাকাল দুল প্রকল্পের মাধ্যমে দুলহস্তি বাঁধে পৌঁছানো হবে, যাতে বিদ্যমান পানি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

তবে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পানির প্রবাহে এই পরিবর্তন নদীর স্বাভাবিক রূপ ও পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে। পাকাল দুল প্রকল্পের নিম্নপ্রবাহে মারুসুদার নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় উল্লেখযোগ্য জলবিদ্যুৎ ও পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটতে পারে।

সিন্ধু পানিচুক্তি কী?

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নদীর পানি ব্যবহারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি ব্যবহারের বিষয়ে ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় সিন্ধু পানিচুক্তি। চুক্তিতে নদীগুলো ভাগ করে দেওয়া হয় এবং পানি বণ্টনের কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, শতদ্রু, বিয়াস ও রাভি—এই তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পায় ভারত; আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব—এই তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অধিকার পায় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের কৃষি সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এই নদী ব্যবস্থার পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। পাকিস্তানের অভিযোগ, উজানে ব্যারাজ ও বাঁধ নির্মাণ করে ভারত অন্যায্যভাবে পানি প্রবাহে প্রভাব ফেলছে। তবে ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

সাম্প্রতিক দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তান নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ও সালিশি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। ভারত পাল্টা অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে এবং কিশানগঙ্গা ও রাতলে প্রকল্প চুক্তির আওতাতেই বৈধ।

সূত্র: জিও নিউজ, দ্য হিন্দু
কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow