পাহাড়-বনের সৌন্দর্য ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’
>> গজনী অবকাশকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে >> রাইড নিরাপত্তা বিষয়ক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে>> নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পর্যটনকেন্দ্রটি খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঝিরি, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। এবারের শীতে গজনী অবকাশ কেন্দ্র হাতছানি দিয়ে ঢাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। জানা যায়, গজনী অবকাশ কেন্দ্র ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে সুপরিচিত। জেলা শহর থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে গজনী অবকাশ কেন্দ্র। বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক, বাইকসহ যে কোনো যানবাহনে আসা যায় এখানে। ভ্রমণ আনন্দময় করতে ১৯৯৩ সালে প্রায় ২৭০ বিঘা এলাকাজুড়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা অবকাশ কেন্দ্র ঘেঁষা উত্তরে মেঘালয় রাজ্যের পোড়াকাশিয়া গ্রাম। চারদিকেই ছোট-বড় অসংখ্য টিলা। প্রতিটি টিলা যেন সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে জীবনের ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে এখানে ছুটে আসেন লক্ষাধিক
>> গজনী অবকাশকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে
>> রাইড নিরাপত্তা বিষয়ক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে
>> নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে
ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। পর্যটনকেন্দ্রটি খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঝিরি, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। এবারের শীতে গজনী অবকাশ কেন্দ্র হাতছানি দিয়ে ঢাকছে ভ্রমণপিপাসুদের।
জানা যায়, গজনী অবকাশ কেন্দ্র ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে সুপরিচিত। জেলা শহর থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে গজনী অবকাশ কেন্দ্র। বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক, বাইকসহ যে কোনো যানবাহনে আসা যায় এখানে। ভ্রমণ আনন্দময় করতে ১৯৯৩ সালে প্রায় ২৭০ বিঘা এলাকাজুড়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা অবকাশ কেন্দ্র ঘেঁষা উত্তরে মেঘালয় রাজ্যের পোড়াকাশিয়া গ্রাম। চারদিকেই ছোট-বড় অসংখ্য টিলা। প্রতিটি টিলা যেন সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে জীবনের ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে এখানে ছুটে আসেন লক্ষাধিক পর্যটক।
অবকাশ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়
স্থানীয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘোরার জন্য আছে বিশাল লেক। লেকের ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেলফি ব্রিজ। সেলফি ব্রিজের একপ্রান্তে আছে লাভ সেলফি জোন। যেখানে প্রিয়জনকে নিয়ে নিজেকে সেলফিবন্দি করে রাখা যায়। লেকের বুকে নৌকায় বেড়ানোর জন্য আছে বোট গার্ডেন। রয়েছে মুক্তমঞ্চ; যেখানে গান, আড্ডা, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করা হয়। আবার মুক্তমঞ্চ থেকে প্রায় ৩০ ফিট নিচে খোলা মাঠে নেমে আসার জন্য আছে পদ্মব্রিজ। সেই মাঠে রান্নাবান্না, খেলাধুলা করার জন্য আছে সুব্যবস্থা। আছে গারো মা ভিলেজ। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বসে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্ত জোড়া ফসলের ক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যাবে খুব সহজেই। নতুন করে চালু করা হয়েছে দুটি ক্যান্টিন, কফি হাউজ। শিশু দর্শনার্থীদের জন্য আছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, যেখানে শিশুরা ট্রেনে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। নতুন করে সাজানো হয়েছে শিশু কর্নার, যেখানে শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য আছে প্রায় অর্ধশতাধিক সরঞ্জামাদি।
দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম স্থাপনা ও ভাস্কর্য
এখানকার কৃত্রিম স্থাপনা ও ভাস্কর্যগুলো সাজানো হয়েছে প্রকৃতির সাথে মিল রেখে। মৎস্যকন্যা বা জলপরী, ডাইনোসর, ড্রাগন টানেল, দণ্ডায়মান জিরাফ, হাতির প্রতিকৃতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, লেক ভিউ পেন্টাগন, স্মৃতিসৌধ, ওয়াচ টাওয়ার আছে। আছে ক্রিসেন্ট লেক। লেকের ওপর রংধনু ব্রিজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, শাপলা কলি, কবি নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক। এ ছাড়া আছে মাটির নিচ দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ড্রাগন টানেল। এর মুখে পাতালপুরী, লাভলেইন আর কবিতাবাগ। অবকাশের অন্যতম আকর্ষণ ৮০ ফুট উঁচু সাইট ভিউ টাওয়ার। এর ওপর থেকে দেখা যায় মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থাপনা, লোকজন আর পাহাড়ি টিলার বৈচিত্র্যময় অপরূপ দৃশ্য। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ এখন ক্যাবল কার, জিপলাইনিং, ওয়াটার কিংডম, প্যারাট্রবা আর দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু। ক্যাবল কারে এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়।
নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য
নৈসর্গিক গজনীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে শেরপুর’ স্লোগানে জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নার। জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নারে থাকছে শেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বলিত ছবি, বই ও ভিডিওচিত্র। জেলা ব্র্যান্ডিং তুলশীমালা চালের নির্দিষ্ট স্থান। এখান থেকে সরাসরি কেনা যায় পাহাড়ে উৎপাদিত জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত তুলশীমালা চালের প্যাক। নৃগোষ্ঠীদের হাতে বোনা বিভিন্ন গহনা, পোশাক ও আসবাবপত্র।
আরও পড়ুন
ভোলার তারুয়া সমুদ্রসৈকতে যেভাবে যাবেন
ফেনীতে ৪১০ বছরের প্রাচীন গাছ ‘মেঘ শিরিষ’
হোটেল-মোটেল ব্যবস্থার দাবি
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রাতযাপনের জন্য সরকারি কোনো হোটেল-মোটেল নেই। গজনীর অদূরে বনরানী রিসোর্ট নামে একটি হোটেল থাকলেও সেটিতে নেই পর্যাপ্ত কক্ষ। তাই দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের থাকতে হয় ২৮ কিলোমিটার দূরে শেরপুর শহরে। তাই সরকারিভাবে হোটেল-মোটেলের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পর্যটকদের।
চলতি মৌসুমে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা
পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘শীত মৌসুম উপলক্ষে নতুন নতুন মালামাল দোকানগুলোয় তুলেছি। এবার যেহেতু নতুন নতুন রাইড সংযোজন করা হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব কঠোর। তাই আশা করছি পর্যটক বাড়বে।
রাইড নিরাপত্তা বিষয়ক মনিটরিং কমিটি
বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের ও উত্তরাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রটিতে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ‘রাইড নিরাপত্তা বিষয়ক মনিটরিং কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাইডগুলোর নিরাপত্তা ও মৌসুম উপলক্ষে নতুন করে সাজানোসহ পর্যটকদের আকৃষ্ট ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে মনিটরিং কমিটি। কমিটির সভাপতি ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম রাসেল। এ ছাড়া সদস্য ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী, পিআইও কর্মকর্তা। শেখ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যটনকেন্দ্র ও আশেপাশে ৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।’
নিরাপত্তা নিয়ে যা বলছে জেলা পুলিশ
শেরপুরের পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সেজন্য এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলা ব্র্যান্ডিং স্লোগানকে সামনে রেখে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় গজনী অবকাশকে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে আরও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই প্রতি সপ্তাহে একজন ম্যাজিস্ট্রেট কাজের অগ্রগতি দেখতে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পরিদর্শনে যাচ্ছেন। পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য মোটেল তৈরি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’
এসইউ/জেআইএম
What's Your Reaction?