পুরুষরা কেন তাদের ডিপ্রেশন লুকিয়ে রাখেন
বর্তমানে সারা পৃথিবীর মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। কিন্তু আমাদের সমাজের পুরুষরা এখনও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেন, যা তাদের মানসিক চাপ প্রতিদিন বাড়িয়ে তোলে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, অনেক সময় পুরুষরা নিজেও বুঝতে পারেন না যে, তারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। কারণ তাদের বিষণ্নতা অনেক সময় সাধারণ উপসর্গে বোঝা যায় না — বরং রাগী আচরণ, অতি-ব্যস্ততা বা নেশার দিকে ঝুঁকে থাকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। মনোবিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে বলেন ‘মাস্কড ডিপ্রেশন’ — অর্থাৎ এমন বিষণ্নতা যা ব্যক্তি নিজেই অনুভব করেন না বা স্বীকার করেন না। কিন্তু কেন? ১. সামাজিক প্রত্যাশা: পুরুষ মানেই শক্ত, অটল, নির্ভীক ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় যে, ‘ছেলেরা কাঁদে না’, ‘কাউকে নিজের দুর্বলতা দেখাবে না’, ‘নিজের সমস্যা নিজেই সামলাবে।’ পুরুষের বিষণ্নতা অনেক সময় সাধারণ উপসর্গে বোঝা যায় না। ছবি/প্রতীকী আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পুরুষত্বের এই সামাজিক চাপ একটি বড় ঝুঁকির কারণ। এসবের কারণে তারা আবেগ চেপে রাখে, কথা না বলে সব কিছু ভেতরে জমিয়ে রাখে। সমস্যা
বর্তমানে সারা পৃথিবীর মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। কিন্তু আমাদের সমাজের পুরুষরা এখনও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেন, যা তাদের মানসিক চাপ প্রতিদিন বাড়িয়ে তোলে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, অনেক সময় পুরুষরা নিজেও বুঝতে পারেন না যে, তারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। কারণ তাদের বিষণ্নতা অনেক সময় সাধারণ উপসর্গে বোঝা যায় না — বরং রাগী আচরণ, অতি-ব্যস্ততা বা নেশার দিকে ঝুঁকে থাকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
মনোবিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে বলেন ‘মাস্কড ডিপ্রেশন’ — অর্থাৎ এমন বিষণ্নতা যা ব্যক্তি নিজেই অনুভব করেন না বা স্বীকার করেন না। কিন্তু কেন?
১. সামাজিক প্রত্যাশা: পুরুষ মানেই শক্ত, অটল, নির্ভীক
ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় যে, ‘ছেলেরা কাঁদে না’, ‘কাউকে নিজের দুর্বলতা দেখাবে না’, ‘নিজের সমস্যা নিজেই সামলাবে।’
পুরুষের বিষণ্নতা অনেক সময় সাধারণ উপসর্গে বোঝা যায় না। ছবি/প্রতীকী
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পুরুষত্বের এই সামাজিক চাপ একটি বড় ঝুঁকির কারণ। এসবের কারণে তারা আবেগ চেপে রাখে, কথা না বলে সব কিছু ভেতরে জমিয়ে রাখে।
সমস্যা হলো, এই চেপে রাখা আবেগই পরে রূপ নেয় স্ট্রেস, অনিদ্রা, আতঙ্ক বা হঠাৎ রাগের বিস্ফোরণে। এমনকি কেউ কেউ চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক সিদ্ধান্তের দিকেও ঝুঁকে পড়েন।
২. ডিপ্রেশনের অচেনা উপসর্গ
এটা সত্যি যে, পুরুষদের ডিপ্রেশন অনেক সময় চিন্তা বা দুঃখ হিসেবে প্রকাশ পায় না। বরং তারা অকারণে রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ নেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়া, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং মাদকাসক্তির মাধ্যমে তাদের চাপ প্রকাশ করেন।
বিখ্যাত ব্যান্ড লিংকিন পার্ক-এর গায়ক চেস্টার বেনিংটন শৈশব থেকেই ডিপ্রেশন এবং মাদকাশক্তির সঙ্গে লড়াই করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে তাকে নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ছবি/সংগৃহীত
অর্থাৎ ডিপ্রেশন থাকলেও তারা নিজের মনে ভাবেন - আমি ঠিক আছি, শুধু একটু বিরক্ত লাগছে। আর এভাবেই সমস্যা গভীরে জমতে থাকে।
৩. দায়িত্বের চাপ
গবেষণা দেখা যায় যে, অনেক পুরুষ আত্মনির্ভরতার শক্তিশালী পুরাতন পুরুষত্বের ধারণার কারণে মানসিক সাহায্য চাইতে দ্বিধাগ্রস্ত হন।
মেনস্ মেন্টাল হেলথ ম্যাটার্স-এর একটি সাম্প্রতিক সিস্টেমেটিক রিভিউতে বলা হয়েছে যে, চিরাচরিত এসব পুরুষতান্ত্রিক ধারণা পুরুষদের মধ্যে সাহায্য নেওয়ার প্রবণতা কমায় এবং লজ্জা ও সংকোচ বাড়ায়।
সবাইকে হাসালেও জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’-এর ‘চ্যান্ডলার বিং’ চরিত্রের জন্য বিখ্যাত অভিনেতা ম্যাথিউ পেরি নিজে দীর্ঘদিন ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটির সঙ্গে লড়াই করেছেন। ছবি/সংগৃহীত
আবার স্প্রিংগার নেচার লিংকে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, পুরুষদের মধ্যে ‘নিজে সামলে নেওয়ার’ ধারণাটির সঙ্গে আত্মহত্যা প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তারা মানসিক সমস্যাগুলোর জন্য পেশাদার সহায়তা নিতে চায় না।
এর থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে?
স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নীরবতা কখনও শক্তি নয়, বরং ঝুঁকি। তাই পুরুষদের মানসিক সুস্থতার জন্য তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। যা করবেন -
১. মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত আবেগ প্রকাশ করুন। সবাইকে সব কথা বলবেন, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে আপনার কাছের কাউকে মনের কথা শেয়ার করুন।
ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো বা জনি ডেপ তীব্র অ্যাংজাইটিতে ভোগেন। এটি তার ডিপ্রেশনের একটি অন্যতম কারণ। ছবি/সংগৃহীত
২. ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে খোলামেলা কথা বলার অভ্যাস করুন। আপনাকে কেউ দুর্বল ভাবলো কিনা - এই ভয় কাটিয়ে উঠতে খোলামেলা কথা বলার বিকল্প নেই। একবার কথা বলতে শুরু করলে দেখবেন, সবার জীবনেই এমন অনেক কষ্ট আছে যা তাদের ভেতর ভেতর কুরে খাচ্ছে।
৩. স্ট্রেস কমানোর রুটিন তৈরি করুন। প্রযুক্তি আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত স্ট্রেস তৈরি করার জন্য অনেকটাই দায়ী। ডিজিটাল ডিটক্স করুন। কারণ আপনার সঙ্গী, পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যেই হয়তো আছে আপনার ডিপ্রেশনের ওষুধ।
৪. এসবের পরেও উন্নতি না হলে পেশাদারের সাহায্য নিতে সংকোচ করবেন না।
তবে একজন ব্যক্তি নিজে যতই চেষ্টা করুক, এই সমস্যার সমাধানে পরিবার, বন্ধু ও সমাজকেও সচেতন হতে হবে। পুরুষদের আবেগ প্রকাশকে উপহাস নয়, সমর্থন দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
পুরুষের মানসিক সমস্যাকে দুর্বলতা ভাবা তাদের ঠেলে দেয় হতাশার দিকে। ছবি/প্রতীকী
বর্তমানে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। কিন্তু ‘দুর্বলতা দেখালে মান-সম্মান কমে যায়’ - সবার আগে এই ধারণা বদলানো জরুরি।
তাই আজ (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস থেকেই আপনার বাসার ছেলে শিশুটিকে শেখাতে শুরু করুন যে, কান্না করা বা আবেগ প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়, বরং স্বাভাবিক একটি মানবিক বৈশিষ্ট্য।
সূত্র: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, হার্ভার্ড হিউম্যান ফ্লরিশিং প্রোগ্রাম, স্প্রিংগার নেচার লিংক, পাবমেড
এএমপি/এএসএম
What's Your Reaction?