ফড়িং-জীবনের কাব্য

লন্ডনে বেড়ানোর স্মৃতিময় ছবিগুলো একে একে ফিরে আসছে ফেসবুকে! স্ক্রিনে ঝলমল করছে। চোখের আলো উপেক্ষা করে, মনের আলো দিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। হঠাৎ মনে হলো ছবিগুলো কাঁপছে। ওদের চোখের পাপড়িও। ঠোঁটের নড়াচড়াও দেখতে পেলাম। কিছু যেন বলতে চায়। কী বলতে চায়? নিজের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটা শুনে ফেলল প্রাণহীন ছবির গভীরে লুকিয়ে থাকা সজীব প্রাণ। ধমক দিয়ে বলল, \'সবকিছু কি মুখ ফুটে বলতে হয়? বলা যায়?\' ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলেও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ধমকের মধ্য দিয়ে যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেতে পারে, এই প্রথম টের পেলাম। \'না-বলা কথার ভেতরও কথা থাকে। আনন্দময় অধ্যায় লুকিয়ে থাকতে পারে বুকের গহীনে। লুকোনো আনন্দটা খুঁজে নিতে হয়, অনুভব করতে হয়। অনুভবহীন মনের কোনো মূল্য আছে? মূল্যবান ঐশ্বর্যকে মূল্যহীন করে রেখেছো মস্তিষ্কে, অযোগ্য আর নিষ্ক্রিয় করে রেখেছো?\' এক যোগে বলে উঠল সব ছবি। আবারও প্রশ্নবাণে আক্রান্ত হলাম। প্রশ্নের ভেতর থেকে লুকানো তিরটা আঘাত হানল মাথায়। তবে অপমান আর অভিমানে আহত হলাম না। সত্য উচ্চারণ বুক পেতে নিলাম। নিভৃতে অনুভব করতে লাগলাম পুরোনো স্মৃতিখুঁড়ে পাওয়া নতুন আনন্দময় ঐশ্বর্য

ফড়িং-জীবনের কাব্য

লন্ডনে বেড়ানোর স্মৃতিময় ছবিগুলো একে একে ফিরে আসছে ফেসবুকে! স্ক্রিনে ঝলমল করছে। চোখের আলো উপেক্ষা করে, মনের আলো দিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে।

হঠাৎ মনে হলো ছবিগুলো কাঁপছে। ওদের চোখের পাপড়িও। ঠোঁটের নড়াচড়াও দেখতে পেলাম। কিছু যেন বলতে চায়। কী বলতে চায়?
নিজের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটা শুনে ফেলল প্রাণহীন ছবির গভীরে লুকিয়ে থাকা সজীব প্রাণ।

ধমক দিয়ে বলল, 'সবকিছু কি মুখ ফুটে বলতে হয়? বলা যায়?'

ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলেও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

ধমকের মধ্য দিয়ে যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেতে পারে, এই প্রথম টের পেলাম।

'না-বলা কথার ভেতরও কথা থাকে। আনন্দময় অধ্যায় লুকিয়ে থাকতে পারে বুকের গহীনে। লুকোনো আনন্দটা খুঁজে নিতে হয়, অনুভব করতে হয়। অনুভবহীন মনের কোনো মূল্য আছে? মূল্যবান ঐশ্বর্যকে মূল্যহীন করে রেখেছো মস্তিষ্কে, অযোগ্য আর নিষ্ক্রিয় করে রেখেছো?'

এক যোগে বলে উঠল সব ছবি।

আবারও প্রশ্নবাণে আক্রান্ত হলাম।

প্রশ্নের ভেতর থেকে লুকানো তিরটা আঘাত হানল মাথায়। তবে অপমান আর অভিমানে আহত হলাম না। সত্য উচ্চারণ বুক পেতে নিলাম। নিভৃতে অনুভব করতে লাগলাম পুরোনো স্মৃতিখুঁড়ে পাওয়া নতুন আনন্দময় ঐশ্বর্য।

'ভেরি গুড। সত্য মেনে নিয়েছো। নির্মম-নিষ্ঠুর আর হিংস্র হলেও সত্যকে মেনে নেওয়া বড় গুণ। সেই গুণ পুরোপুরি অর্জন করতে না-

পারলেও পরীক্ষার প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হয়েছো। ভালো। বাকি ধাপগুলো উতরে যেতে হলে কী করতে হবে, জানো?
মাথা নত করে তাকিয়ে রইলাম।

ছবিগুলোর ভেতর টগবগ করতে থাকা তারুণ্যময় প্রাণের আলো ছড়িয়ে যেতে লাগল আমার চোখের ভেতর।

এবার শান্ত অথচ গভীর কণ্ঠ শুনলাম, 'মুখোমুখি হতে হবে, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। পালিয়ে যাওয়া বা লুকিয়ে থাকার নাম জীবন নয়, মাথা উঁচিয়ে সামনে চলার নামই জীবন, জীবনকাব্য।'

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। দেখলাম ঘাসফড়িংয়ের দল মগ্ন আছে খাবার জোগাড়ে। এটা ওদের আনন্দময় যাপিত জীবনেরই অংশ।
পাশের আমগাছের ডালে বসে থাকা একটা চড়ুই পাখি উড়ে এসে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে চট করে একটা ঘাসফড়িং নিয়ে চলে গেল।

প্রচন্ড একটা ঝাঁকি খেলাম। মনের মধ্যে তৎক্ষণাৎ নতুন প্রশ্ন মোচড় দিয়ে উঠল-- এটাই কি নির্মম আর হিংস্র বাস্তবতা? আমরা প্রত্যেকেই কি প্রত্যেকের খাবার, এই প্রকৃতিতে? এটাই কি ফড়িং-জীবনের নতুন সংজ্ঞা, আসল কাব্য?

লেখক: কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমি ফেলো।

এইচআর/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow