বাম চোখ লাফালে কী হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

আমাদের সমাজে কিছু বিশ্বাস এমনভাবে গেঁথে বসে আছে, যেন এগুলো ‘ধর্মেরই অংশ’। বিশেষ করে কোনো নারীর বাম চোখ লাফালে অনেকেই বলে থাকেন, এটা অশুভ বা স্বামীর আয়-রোজগার কমে যাওয়ার লক্ষণ। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ দাবি করেন, বাম চোখ লাফানো নাকি প্রিয়জনের মৃত্যু বা বিপদ সংকেত। অথচ ইসলাম কোনোদিন এমন দাবি করেনি। বরং এসব মনগড়া ধারণা ইসলাম স্পষ্টভাবে নাকচ করেছে। ধর্মে কোথাও বলা হয়নি, বাম চোখ লাফালে কারো রিজিকে টান পড়বে কিংবা কারো জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এসব নিছক সমাজের বানানো কুসংস্কার, যার কোনো ভিত্তি কোরআন-হাদিসে নেই। ইসলাম বরাবরই বাস্তবসম্মত ও সরল জীবনব্যবস্থার ওপর জোর দেয়। চলুন, এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের ভাষ্য জেনে নিই— শরিয়তের ভাষ্য ‘বাম চোখ লাফালে আয়-রোজগার কমে যায় বা প্রিয়জনের বিপদ সংকেত’- ইসলামের দৃষ্টিতে এ রকম ধারণা ভ্রান্ত, মনগড়া কুসংস্কার। কারও এ রকম বিশ্বাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের হায়াত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কারও মৃত্যু হবে না। রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না, তা নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে। আর যে

বাম চোখ লাফালে কী হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

আমাদের সমাজে কিছু বিশ্বাস এমনভাবে গেঁথে বসে আছে, যেন এগুলো ‘ধর্মেরই অংশ’। বিশেষ করে কোনো নারীর বাম চোখ লাফালে অনেকেই বলে থাকেন, এটা অশুভ বা স্বামীর আয়-রোজগার কমে যাওয়ার লক্ষণ। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ দাবি করেন, বাম চোখ লাফানো নাকি প্রিয়জনের মৃত্যু বা বিপদ সংকেত। অথচ ইসলাম কোনোদিন এমন দাবি করেনি। বরং এসব মনগড়া ধারণা ইসলাম স্পষ্টভাবে নাকচ করেছে।

ধর্মে কোথাও বলা হয়নি, বাম চোখ লাফালে কারো রিজিকে টান পড়বে কিংবা কারো জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এসব নিছক সমাজের বানানো কুসংস্কার, যার কোনো ভিত্তি কোরআন-হাদিসে নেই। ইসলাম বরাবরই বাস্তবসম্মত ও সরল জীবনব্যবস্থার ওপর জোর দেয়।

চলুন, এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসের ভাষ্য জেনে নিই—

শরিয়তের ভাষ্য

‘বাম চোখ লাফালে আয়-রোজগার কমে যায় বা প্রিয়জনের বিপদ সংকেত’- ইসলামের দৃষ্টিতে এ রকম ধারণা ভ্রান্ত, মনগড়া কুসংস্কার। কারও এ রকম বিশ্বাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের হায়াত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কারও মৃত্যু হবে না। রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না, তা নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে। আর যে দুনিয়ার প্রতিদান চায়, আমি তা থেকে তাকে দিয়ে দিই, আর যে আখিরাতের বিনিময় চায়, আমি তা থেকে তাকেও দিই এবং আমি অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেব।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৪৫)

এ ছাড়া রিজিক বা আয়ুতে বরকত কমে যাওয়ারও কোনো কারণ নেই। কারণ, রিজিক কমানো-বাড়ানো একমাত্র আল্লাহর হাতে। কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই (উল্লেখ) এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) রয়েছে।’( সুরা হুদ : ৬)

বিশেষজ্ঞ আলেমের ভাষ্য

জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মাওলানা হেলাল আসহাব কাসেমি কালবেলাকে বলেন, ‘বাম চোখে লাফনো অশুভ লক্ষণ। এমনটা হলে কারও মৃত্যু হতে পারে বা আয়-রোজগার কমে যেতে পারে’- কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে এ ধরনের কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। সুতরাং এমন ভুল ধারণা পরিহার করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল (বিশ্বাস পোষণ) করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (মুসলিম : ১৭১৮)

কাফির সম্প্রদায় সালিহ (আ.) ও ঈমানদার সঙ্গীদের অশুভ লক্ষণ বলে মনে করত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা বলল, তোমাকে ও‌ তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালিহ বললেন, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ (সুরা নমল : ৪৭)

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনার মঙ্গল ছাড়া আর কোনো মঙ্গল নেই, আপনার পক্ষ থেকে সাব্যস্ত দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কোনো দুর্ভাগ্য হতে পারে না এবং আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।’ (মুসনাদে আহমদ : ৭০৪৫)

আসহাব কাসেমি বলেন, উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস প্রমাণ করে, মঙ্গল-অমঙ্গল কেবল আল্লাহ তায়ালাইর হাতে। তাই ইসলামে কোনো কুসংস্কারের স্থান নেই। অতএব যারা মনে করেন বাম চোখ লাফানো অশুভ লক্ষণ বা কারও হায়াত কমে যেতে পারে, তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোনো নারী বা পুরুষের যদি বাম চোখ বেশি লাফায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পাশাপাশি আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির দোয়া করুন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow