বিশ্ব দর্শন দিবস: দর্শন হোক আলোর দিশা

মোঃ রাহুল শেখ দর্শন শব্দটি শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের কথা। তাকে পশ্চিমি দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। প্রাচীন গ্রিক এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া যায় কেবল তার শিষ্য প্লেটোর ডায়ালগ এবং সৈনিক জেনোফনের রচনা থেকে। তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে তাকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাক সেসব কথা, অন্য কোনোদিন এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে কথা বলা যাবে। আজ বলব দর্শন দিবস নিয়ে। অনেকেই হয়তো জানেন না, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব দর্শন দিবস’। এই দিনটি কেবল দর্শন চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মানব চিন্তার বিকাশ, সমালোচনামূলক ও স্বাধীন চিন্তাভাবনার প্রসার এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দর্শনের স্থায়ী মূল্যকে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। সেইসঙ্গে দর্শন যে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সেটাও বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা হয়। ইংরেজি ফিলোসফি শব্দের

বিশ্ব দর্শন দিবস: দর্শন হোক আলোর দিশা

মোঃ রাহুল শেখ

দর্শন শব্দটি শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের কথা। তাকে পশ্চিমি দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। প্রাচীন গ্রিক এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া যায় কেবল তার শিষ্য প্লেটোর ডায়ালগ এবং সৈনিক জেনোফনের রচনা থেকে। তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে তাকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

যাক সেসব কথা, অন্য কোনোদিন এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে কথা বলা যাবে। আজ বলব দর্শন দিবস নিয়ে। অনেকেই হয়তো জানেন না, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব দর্শন দিবস’। এই দিনটি কেবল দর্শন চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মানব চিন্তার বিকাশ, সমালোচনামূলক ও স্বাধীন চিন্তাভাবনার প্রসার এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দর্শনের স্থায়ী মূল্যকে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। সেইসঙ্গে দর্শন যে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সেটাও বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা হয়।

ইংরেজি ফিলোসফি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ দর্শন। ফিলোসফি শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ ‘ফিলো’ এবং ‘সোফিয়া’ থেকে, যার অর্থ ‘লাভ অব উইশডম’(জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা)। মূলত এই মহান শৃঙ্খলাকে সম্মান জানাতে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো এই দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। ইউনেস্কো সর্বপ্রথম ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর বিশ্ব দর্শন দিবস পালন করে।

পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব দর্শন দিবস’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

বিশ্ব দর্শন দিবস প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমালোচনামূলক চিন্তা ও স্বাধীন মননের বিকাশের মাধ্যমে মানুষকে যুক্তিসঙ্গত ও স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করা। বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে দার্শনিক আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। বৈশ্বিক সমস্যার দার্শনিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র্য, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র, ন্যায়-নীতি এবং পরিবেশগত সংকটের মতো সমকালীন বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। এজন্য দিবসটি দর্শনের শিক্ষাকে প্রবল উৎসাহ যোগাতে এবং তরুণ সমাজের মধ্যে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রসর হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড ও যুদ্ধবিগ্রহ যেন পিছু ছাড়ছে না। এর মূলে রয়েছে দর্শন শিক্ষার অভাব। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতির যুগে তথ্যের সত্যতা যাচাই, যুক্তিনির্ভর বিচার ও নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি করতে দর্শনের জ্ঞান অপরিহার্য। এটি মানুষকে সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা দেয়; ফলে ভুয়া তথ্য, অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়। গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে দর্শন চর্চা অত্যন্ত কার্যকর। একই সঙ্গে বিশ্বায়ন, পরিবেশ সংকট ও বৈষম্যের মতো জটিল ইস্যু বোঝাতে দর্শন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। তাই টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য দর্শন শিক্ষা অপরিহার্য।

একটি বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছর বিশ্ব দর্শন দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে, যা সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও মানবিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। এবারের বিশ্ব দর্শন দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘দ্য ভ্যালুস অব সোসাইটিস অব দ্য ফিউচার’ বা ভবিষ্যতের সমাজের মূল্যবোধ। এই প্রতিপাদ্যটি বর্তমান বিশ্বে ফুটে ওঠা অসমতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষয় এবং জলবায়ু সংকটের মুখে আমাদের সমাজগুলোর নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পুনর্বিবেচনার জন্য জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করে।

আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস কেন এত মলিন
বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৭ পেশা

লেখক: শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

কেএসকে/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow