বেসরকারি বীজে নির্ভরশীল পাবনার কৃষি
পাবনায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় ধানের। এরপর মোটা দাগে পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়। তবে এসব আবাদে বীজের ক্ষেত্রে কৃষকরা প্রায় পুরোপুরিই নির্ভরশীল সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর। পাবনায় ধান ব্যতীত এসব ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন না কৃষকরা। ফলে প্রতি মৌসুমে বীজ কিনে আবাদে যান তারা। এতে আবাদি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি ভেজাল বীজে প্রতারিত হয়ে ব্যাহত হয় উৎপাদনও। পাবনার ৯টি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সবুজ ডগা দোল খাচ্ছে। এক থেকে দেড়মাসের মধ্যেই এ পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। এদিকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে চারা বা হালি পেঁয়াজ রোপণের। বিশেষ করে জেলার সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলায় এ চিত্র জোরালো। এরই মধ্যেই অনেকেই বেড বা বীজতলা তৈরি করে পেঁয়াজের দানা বা বীজ বপন করেছেন। কারো বীজতলায় আবার চারা প্রস্তুতের পর শুরু হয়েছে জমি প্রস্তুত ও রোপণ। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ কিছু কৃষক সংরক্ষণ করলেও চারা পেঁয়াজের বীজের দানা এই অঞ্চলের কৃষকেরা ঘরে সংরক্ষণ করেন না। ফলে আবাদ মৌসুমে কৃষকরা নিকটস্থ দোকান বা ডিলারদের থেকে কেনেন। কেউ কেউ সংগ্রহ করেন কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। সুজানগর উপজেলার মথুরাপুরের
পাবনায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় ধানের। এরপর মোটা দাগে পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়। তবে এসব আবাদে বীজের ক্ষেত্রে কৃষকরা প্রায় পুরোপুরিই নির্ভরশীল সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর। পাবনায় ধান ব্যতীত এসব ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন না কৃষকরা। ফলে প্রতি মৌসুমে বীজ কিনে আবাদে যান তারা। এতে আবাদি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি ভেজাল বীজে প্রতারিত হয়ে ব্যাহত হয় উৎপাদনও।
পাবনার ৯টি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সবুজ ডগা দোল খাচ্ছে। এক থেকে দেড়মাসের মধ্যেই এ পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। এদিকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে চারা বা হালি পেঁয়াজ রোপণের। বিশেষ করে জেলার সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলায় এ চিত্র জোরালো। এরই মধ্যেই অনেকেই বেড বা বীজতলা তৈরি করে পেঁয়াজের দানা বা বীজ বপন করেছেন। কারো বীজতলায় আবার চারা প্রস্তুতের পর শুরু হয়েছে জমি প্রস্তুত ও রোপণ। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ কিছু কৃষক সংরক্ষণ করলেও চারা পেঁয়াজের বীজের দানা এই অঞ্চলের কৃষকেরা ঘরে সংরক্ষণ করেন না। ফলে আবাদ মৌসুমে কৃষকরা নিকটস্থ দোকান বা ডিলারদের থেকে কেনেন। কেউ কেউ সংগ্রহ করেন কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে।
সুজানগর উপজেলার মথুরাপুরের কৃষক স্বপন। বাবা ও বড়ভাই মিলে চাষ করেন। এ মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে চারা বা হালি পেঁয়াজের আবাদের প্রস্তুতি তাদের। ৩০ বিঘার জন্য ২৬ কেজি পেঁয়াজের দানা বপন করেছেন। কুষ্টিয়া থেকে এ দানা সংগ্রহ করেছেন। এরই মধ্যে জমিতে রোপণের জন্য প্রায় প্রস্তুত হয়েছে চারা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কম চারা এসেছে বীজ থেকে। এ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ স্বপনদের।
স্বপন বলেন, ধানের বীজ আমরা ঘরে রাখি। অন্যান্য কিছু কৃষক মুড়িকাটার বীজ রাখলেও আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় কোনো কৃষকই চারা পেঁয়াজের বীজ (দানা) সংরক্ষণ করে না। আবাদের সময় সরকারি বীজ ততোটা পাওয়া যায় না, তাই বিভিন্ন কোম্পানির বীজই নিয়ে থাকে। আমরা সাধারণত কোম্পানির বীজ নিই না। কয়েক বছর ধরে কুষ্টিয়ার এক কৃষকের থেকে নিই। কিন্তু এবার বীজ কিছুটা মাইর (নষ্ট) খাইছে।
তিনি বলেন, সাধারণত বিঘায় এক কেজি হিসেবে চারা দেওয়া হলেও এক কেজি দানায় ঠিকমতো চারা হলে এক বিঘার বেশি বা প্রায় দেড় বিঘার মতো জমিতে লাগানো যায়। কিন্তু আমাদের এবার সেটা হবে না। এক কেজির চারা হয়তো সর্বোচ্চ এক বিঘায় লাগানো যাবে।
শুধু চারা বা হালি পেঁয়াজের নয়, সবজির বীজও সংরক্ষণ করেন না পাবনার অধিকাংশ কৃষক। দু’একজন যা উৎপাদন করেন তা দিয়ে ন্যূনতম চাহিদাও মেটে না। তেমন হারে মেলে না সরকারি বীজও। ফলে সবজি আবাদে ভরসা বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থার বীজ। দু’একটি কোম্পানির বীজের ফলাফল ভালো হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ভেজাল বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা।
এদিকে বীজের নিয়ন্ত্রণ নেই কৃষকের হাতে। চাহিদা মেটাতে উচ্চ ফলনের আশায় দেশী জাতের সব ফসলের আবাদ একেবারেই কমেছে। হাইব্রিড জাতের ফসলের আবাদে সয়লাব। আর এসব জাতের আবিষ্কার ও বীজ সংরক্ষণে সংযুক্ত নয় কৃষক। ফলে বীজ থাকে না তাদের ঘরে। আবার কিছু ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা গেলেও নানা ভাবনায় ঘরে রাখেন না তারা।
সদর উপজেলার শুকচরের কৃষক নাসির বলেন, আমরা পেঁয়াজ আবাদটা বেশি করি। মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ চারা পেঁয়াজ থেকে রাখতে হয়। চাইলে রাখা যায়। তবে রাখা হয় না। আমাদের অধিকাংশেরই তেমন রাখার ভালো ব্যবস্থা নেই। এজন্য অনেক পেঁয়াজ পচে ও শুকিয়ে যাওয়াসহ নানাভাবে নষ্ট হয়। তাই রাখা হয় না।
গাজনার বিল এলাকার কৃষক রাকিব বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঋণ ও ধারদেনা করে আবাদে যাই। পেঁয়াজ ঘরে ওঠার সময় এসব ঋণের চাপ থাকে, ফলে বাধ্য হয়ে সব বিক্রি করে দিতে হয়। কখনো অল্প রাখা সম্ভব হয়। ফলে বেচার সময় অল্প দামে বেচলেও আবাদ মৌসুমে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়।
আরও পড়ুন-
ইটভাটার পেটে জমির টপ সয়েল, ঝুঁকিতে কৃষি
ল্যাবেই বন্দি উদ্ভাবন, প্রয়োগ নেই মাঠে
সোনালি আঁশে হতাশার ছাপ, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা
তবে কৃষকের ঘরে বীজ না থাকার বিষয়ে ঈশ্বরদীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক শাহীন আলম জানান মূল প্রতিবন্ধকতা। শাহীন বলেন, পাল্লা দিয়ে দেশে মানুষ বাড়ছে। ফলে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু জমি সেই একই। ফলে একই জমিতে এখন আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে ফসল আবাদ হচ্ছে। এর আওতায় উৎপাদন বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ফসলের আবাদ করতে হচ্ছে। যেগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে আবাদই প্রযুক্তি নির্ভর। আর বীজ সংরক্ষণ পুরোটাই আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। যেটি কৃষকের কাছে নেই। ফলে বাধ্য হয়েই বীজের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, জমির বহুবিধ ব্যবহার ও উচ্চ ফলনের ক্ষেত্রে এর বাইরে তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। ফলে সাধারণত কৃষকরা বীজ সংরক্ষণ করেন না। তবে একে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন না এ কৃষক। সার-কীটনাশক ও অন্যান্য উপকরণের সহজলভ্যতা তাদের মূল চিন্তার বিষয় বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলায় বোরো ধানের বীজের চাহিদা ছিল ১৯২৯ মেট্রিক টন। একইভাবে আমনের ১৯২০, মুড়িকাটা পেঁয়াজের ১৮০১৮, চারা পেঁয়াজের ৩৩২, গমের ৩৫৭৫, সরিষা ৩৪২ ও পাটের ৩২৮ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা ছিল। এর বিপরীতে বিএডিসি থেকে বোরো ধানের ২২৫১.৯, আমনের ১০১০.৪, মুড়িকাটা পেঁয়াজের ৫৮.৬৯, চারা পেঁয়াজের ১.৫, গমের ১৮৮৩, সরিষার ২২১.২ ও পাটের ৪৬.৫৩ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ এসব ফসলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ২৬ হাজার ৪৪৪ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা ছিল। এর বিপরীতে বিএডিসি থেকে মোট বিতরণ করা হয় ৫ হাজার ৪৭৩.২২ মেট্রিক টন বীজ। অর্থাৎ চাহিদার মাত্র ২০.৭০ শতাংশ বীজ বিএডিসি থেকে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে কৃষকের। বাকি প্রায় ৮০ শতাংশ বীজই বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাসহ নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
কৃষি বিভাগ পাবনায় সবজির বীজের চাহিদা নির্ধারণ করতে না পারলেও জেলাজুড়ে এর আবাদের পরিসর দেখে বোঝা যায় মোটা দাগে সবজি বীজের চাহিদা রয়েছে। এদিকে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন জাত, এসব জাতের বীজ সংরক্ষণে কৃষকের নেই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। ফলে হাইব্রিড জাতের ফসল আবাদের ক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন না কৃষকেরা। তেমন বীজ মেলে না সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও। এতে প্রতি আবাদ মৌসুমে তাদের দুশ্চিন্তা বীজ নিয়ে। এরসঙ্গে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে ওঠে সার ও কীটনাশকের সংকট।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, সরকারি বীজ শতভাগ কৃষকদের দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের হিসাব মতে ৭০ শতাংশ বীজ বেসরকারি সংস্থা বা উদ্যোক্তাদের থেকে সরবরাহ হয়। এক্ষত্রে আমরা তাদের বীজের কোয়ালিটি নিশ্চিতে কাজ করে থাকি। যেন কৃষক মানসম্পন্ন বীজ পান, প্রতারিত না হন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক কৃষকেরা মূলত আবাদ করেন নিজেদের চাহিদা মেটানোর জায়গা থেকে। তারা বীজ রাখতে চায় না। এর বাইরে যারা বীজ সংরক্ষণ করতে চান আমরা তাদের প্রযুক্তিগতসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। যেমন পেঁয়াজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে হাইফ্লো মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। পাবনার কৃষকরা তেমন ঘরে না রাখলেও বীজের কোনো সংকট নেই।
এফএ/এমএস
What's Your Reaction?