ব্যস্ততম সড়ক-ফুটপাত দখল করে সিটি করপোরেশনের স্থাপনা
নগরবাসীর চলাচল নিরাপদ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ফুটপাত। প্রশস্ত সড়ক যানবাহন চলাচল গতিশীল রাখে, যানজট কমায়। এই দুই জায়গায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সেটা দূর করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। অথচ উল্টো ব্যস্ততম সড়ক ও ফুটপাত দখল করে স্থাপনা তৈরি করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে স্থাপনা তৈরি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। এমন আইনের তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে নদ্দার মাঝামাঝি অংশে ফুটপাত-সড়ক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে ডিএনসিসি। পাশেই রয়েছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে ফুটপাতে পথচারী চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ব্যাহত হচ্ছে সড়কে যান চলাচল। সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। তাদের অভিযোগ, ওই স্থাপনা নির্মাণের আগে যানবাহন ও পথচারী চলাচলের ওপর ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব মূল্যায়ন করেনি ডিএনসিসি। স্থাপনাটির কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। পথচারীদের চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ছে। তাই স্থাপনাটির নির্মাণকাজ বন্ধ ও দ্রুত সময়ের মধ্য
নগরবাসীর চলাচল নিরাপদ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ফুটপাত। প্রশস্ত সড়ক যানবাহন চলাচল গতিশীল রাখে, যানজট কমায়। এই দুই জায়গায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সেটা দূর করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। অথচ উল্টো ব্যস্ততম সড়ক ও ফুটপাত দখল করে স্থাপনা তৈরি করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
সড়ক ও ফুটপাত দখল করে স্থাপনা তৈরি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। এমন আইনের তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে নদ্দার মাঝামাঝি অংশে ফুটপাত-সড়ক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে ডিএনসিসি। পাশেই রয়েছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে ফুটপাতে পথচারী চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ব্যাহত হচ্ছে সড়কে যান চলাচল।
সিটি করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। তাদের অভিযোগ, ওই স্থাপনা নির্মাণের আগে যানবাহন ও পথচারী চলাচলের ওপর ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব মূল্যায়ন করেনি ডিএনসিসি। স্থাপনাটির কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। পথচারীদের চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ছে। তাই স্থাপনাটির নির্মাণকাজ বন্ধ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএনসিসি ওই স্থানে একটি আবর্জনা ডিপো (ময়লা রাখার ঘর) স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। নির্মাণকাজ শুরুর কিছুদিন পর বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন ময়লার ঘরের পরিবর্তে সেখানে একই নকশায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের অফিস করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএনসিসি। কিন্তু তারপরও এ কাজ বন্ধে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই স্থাপনা অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। তাই আপাতত ওই স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ডিএনসিসি। কিন্তু তা অপসারণে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন
ঢাকা এখন ‘পোস্টার-ব্যানারের নগরী’
এনা পরিবহনের বাস নিয়ে যা ঘটছে
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন/অধিকাংশ কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ-দখলে, চালুগুলো ‘মানহীন’
শরতের বৃষ্টিতেও ঢাকায় জলাবদ্ধতা, কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগ
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, নতুনবাজার থেকে নদ্দা-বসুন্ধরার দিকে যাওয়ার রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে কোকাকোলার ঠিক আগে প্রায় এক হাজার বর্গফুট ফুট জায়গা নিয়ে ডিএনসিসি একটি স্থাপনা নির্মাণ করছে। পুরো ফুটপাত এবং ফুটপাত থেকে প্রায় ১৫ ফুট রাস্তা সিটি করপোরেশনের দখলে। স্থাপনার ভেতর ফ্লোর কংক্রিট ঢালাই হয়েছে। পিলারের জন্য লোহার রড স্থাপন করা হচ্ছে। একপাশে একটি সাইনবোর্ড টানানো। সেখানে এটিকে ডিএনসিসির নির্মাণ প্রকল্প বলা হয়েছে। যদিও সেখানে ডিএনসিসির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্মাণকর্মীকে দেখা যায়নি। সাইনবোর্ডে মার্কার কলম দিয়ে কেউ একজন লিখেছেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে অফিস তৈরি করা যাবে না’ এবং ‘এখানে ছয়টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে’।
নগরের সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন। অথচ এখন তারাই অপরিকল্পিতভাবে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে স্থাপনা তৈরি করছেন। ডিএনসিসিই যদি এমন অপরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়, তাহলে সাধারণ নাগরিকরা ন্যায়বিচারের জন্য কোথায় যাবে।-পথচারী মনির হোসেন
এই ফুটপাত ধরে হেঁটে নদ্দার দিকে যাচ্ছিলেন পথচারী মনির হোসেন। কিন্তু নির্মাণাধীন স্থাপনার সামনে গিয়ে তিনি ফুটপাত থেকে নেমে যান। সড়কের প্রায় মাঝ বরাবর হেঁটে তিন আবার ফুটপাতে ওঠেন। আলাপকালে মনির বলেন, ‘নগরের সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন। অথচ এখন তারাই অপরিকল্পিতভাবে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে স্থাপনা তৈরি করছেন। ডিএনসিসিই যদি এমন অপরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়, তাহলে সাধারণ নাগরিকরা ন্যায়বিচারের জন্য কোথায় যাবে। অবিলম্বে এই নির্মাণকাজ বন্ধ করা দরকার। যাতে পথচারীরা নিরাপদে হাঁটতে পারে।’
যে স্থানে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার ঠিক বিপরীত পাশে ডি মাজনোড চার্চ এবং সেন্ট ইউজিন স্কুল। গত ২১ অক্টোবর ওই স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধে মানববন্ধন করেছেন স্কুলটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গির্জার একটু পিছনে সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই সড়কটি প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী-অভিভাবক ব্যবহার করেন। তাছাড়া ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক এটি।
বারিধারার জে ব্লকের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান। তার সাত বছরের ছেলে সেন্ট ইউজিন স্কুলে পড়ে। আলাপকালে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখন যে স্থানে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, আগে সেখানে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বাসা-বাড়ির বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হতো। বর্জ্য গড়িয়ে সড়কে ছড়িয়ে যেত। দুর্গন্ধে এ এলাকার সড়ক ও ফুটপাতে হাঁটা যেত না। পরে তারা ময়লার ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। যদিও একটু দূরে একটি ময়লার ঘর আছে। স্থানীয়রা বাধা দিলে তারা তখন বলে, সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অফিস বানাবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে কেন সেখানে অফিস বানাতে হবে।’
ঢাকা শহরের মধ্যে যে কয়টি সড়কে তীব্র যানজট থাকে তার মধ্যে একটি প্রগতি সরণি। এর মধ্যে ৬ নভেম্বর প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে রামপুরা ব্রিজ ও নতুনবাজার থেকে কাকলি অংশে ঢাকা ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-৩.১ এর (ডিস্ট্রিবিউশন রিইনফোর্সমেন্ট পাইপলাইন) কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ব্যস্ত এ সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
এই সড়কে বহু রুট ও ওভারল্যাপ থাকায় যানবাহনের সংখ্যা ও গতি দুটোই বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তার একটি অংশ দখল মানে গোটা এলাকায় অব্যবস্থাপনা, যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা। অবিলম্বে এই অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে স্থাপনাটি অপসারণ করতে হবে।- নিসআর সভাপতি আবদুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত
প্রগতি সরণিতে ডিএনসিসির ওই স্থাপনাটি যানবাহন চলাচলে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান ট্রাফিক বিভাগের এক পুলিশ সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন পর প্রগতি সরণি ও গুলশানে আলাদা দুটি ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এর অংশ হিসেবে প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে রামপুরা ব্রিজ ও নতুনবাজার থেকে কাকলি অংশে পানির পাইপলাইন সরিয়ে নিচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। যখন মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হবে, তখন প্রগতি সরণিতে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ডিএনসিসির এ ধরনের স্থাপনা নাগরিক ভোগান্তি আরও বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘সড়ক ও ফুটপাতের মালিক ডিএনসিসি। তাই বলে তারা অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে না। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।’
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী প্রগতি সরণির ওই স্থানে ময়লা রাখার ঘর তৈরি করতেই দেড় মাস আগে স্থাপনাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখন স্থানীয়দের আপত্তির কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সড়ক ও ফুটপাত থেকে স্থাপনা সরানোর দাবি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ)
গত ২৬ অক্টোবর প্রগতি সরণির রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ওয়ার্ড অফিস নির্মাণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ)। সংগঠনটির অভিযোগ, এই নির্মাণকাজের ফলে যাত্রী ও যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। ওই এলাকায় বাড়বে যানজট, আর ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের নিরাপদ চলাচল ব্যাহত হয়ে জনজীবন ঝুঁকিতে পড়বে। তাই রাস্তা ও ফুটপাতে নির্মাণকাজ বন্ধ এবং দখল প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিষয়টি জানার পর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে কোনো স্থাপনার অনুমতি দেবো না।-ডিএসসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ
জানতে চাইলে নিসআর সভাপতি আবদুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই সড়কে বহু রুট ও ওভারল্যাপ থাকায় যানবাহনের সংখ্যা ও গতি দুটোই বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তার একটি অংশ দখল মানে গোটা এলাকায় অব্যবস্থাপনা, যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা। আমরা ডিএনসিসিকে জনকল্যাণমুখী, নৈতিক ও আইনসম্মত কাজ পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে স্থাপনাটি অপসারণ করতে হবে।’
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি তিনি দাপ্তরিক কাজে বিদেশে গিয়েছিলেন। এ সুযোগে প্রগতি সরণিতে স্থাপনাটি নির্মাণ শুরু করে ডিএনসিসি।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে কোনো স্থাপনার অনুমতি দেবো না।’
তবে তিনি এ স্থাপনার কারণে সড়কে যানবাহন এবং পথচারীদের হাঁটাচলায় সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
এমএমএ/এএসএ/এমএস
What's Your Reaction?