ব্যাংকখাত ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করা হয়েছে: ড. ফাহমিদা

স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও দেশের ব্যাংকখাত ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের ব্যাংকখাত একটি জঞ্জালপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণ বাজেটের প্রায় ৮১ শতাংশ। ব্যাংক একীভূতকরণ ম্যাজিক কোনো সমাধান নয়। তবে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য দক্ষ ব্যাংকার ও নীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের

ব্যাংকখাত ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করা হয়েছে: ড. ফাহমিদা

স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও দেশের ব্যাংকখাত ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের ব্যাংকখাত একটি জঞ্জালপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণ বাজেটের প্রায় ৮১ শতাংশ। ব্যাংক একীভূতকরণ ম্যাজিক কোনো সমাধান নয়। তবে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য দক্ষ ব্যাংকার ও নীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে অর্থনীতিটা পেয়েছে, সেখানে তো আমরা দেখেছি—অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই দুর্বল অবস্থানে ছিল। এর মধ্যে ব্যাংকখাত অন্যতম। সেখান থেকে অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কার কর্মসূচি বলি কিংবা বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা—সেটা কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে শুধু আর্থিক খাতে।

আরও পড়ুন
ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে আংশিকভাবে সফল হয়েছি: গভর্নর

তিনি বলেন, মন্দ ঋণে ব্যাংকখাত খুব দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি দেশে মন্দ ঋণ ১১ থেকে ১২ শতাংশ ছিল। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা এসে দেখেছি যে, এটি ৩৫ থেকে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ৬ দশমিক ৪ লাখ কোটি টাকার মন্দ ঋণ রয়েছে; যেখানে দেশের মোট বাজেটের আকার ৭ দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মন্দ ঋণ বাজেটের প্রায় ৮১ শতাংশ। বাজেটের আকারের প্রায় সমপরিমাণ অর্থ আসলে আমাদের মন্দ ঋণ।

সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ঋণ বিতরণে চরম অপেশাদারত্বে রয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রভাবশালীদের সুপারিশে ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করায় মন্দ ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

ড. ফাহমিদা বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করা হলো। তাদের পুরো যে ঋণটা দেওয়া হয়েছে, তার সমানই প্রায় খেলাপির পরিমাণ। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোকে একত্র করা হয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, এই একীভূতকরণ কোনো সহজ বিষয় না। বাংলাদেশে আগে দু-একবার একীভূতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এটা হচ্ছে সবগুলো দুর্বল ব্যাংকের একত্রিতকরণ। সেজন্য একটা দুর্বলতার বিষয়ও রয়েছে।

‘যদিও আকার অনেক বড় আর এটির কোনো ম্যাজিক সলিউশনও হবে না, যদি কি না এর পূর্বশর্ত কিছু থাকে। পূর্বশর্তগুলো কিন্তু রয়েছে। প্রথম বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যেন এই যে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকে।’

ব্যাংক একীভূতকরণে শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা নয়, অভিজ্ঞ ও পেশাদার ব্যাংকার যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, খরচ কমানো ও ব্যাংককে লাভজনক করতে দক্ষ মানবসম্পদই মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রক ও তদারকিতে দক্ষ হলেও, ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা ও ঋণ আদায়ে অভিজ্ঞ ব্যাংকার প্রয়োজন। এজন্য ব্যক্তিখাতের দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপযুক্ত প্রণোদনা দিয়ে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।

প্রণোদনা শুধু আর্থিক নয়—কাজের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন ড. ফাহমিদা খাতুন।

ইএইচটি/এমকেআর/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow