বড়দিনের রাতে থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ

সময়টা ১৯১৪। চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ মানেই রক্ত, গোলাগুলি আর শোক। পশ্চিম ফ্রন্ট জুড়ে জার্মান ও ব্রিটিশ সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাদা, কাঁটা তার আর ঠান্ডায় জমে থাকা ট্রেঞ্চের মধ্যে দিন কাটছিল তাদের। বড়দিন কাছে এসেও যেন আনন্দের কোনো ছোঁয়া ছিল না। মৃত্যুর ভয়ে যারা প্রতিদিন অস্থির, তাদের কাছে উৎসব মানেই ছিল দূরের কোনো স্মৃতি। কিন্তু বড়দিনের সেই রাতেই ঘটলো এক অলৌকিক ঘটনা, যা আজও মানবতার প্রতীক হয়ে আছে ‘ক্রিসমাস ট্রেস’ নামে। বলা হয়, ২৪ ডিসেম্বরের রাতে জার্মান ট্রেঞ্চের দিক থেকে ভেসে এল বড়দিনের গান ‘সাইলেন্ট নাইট’। ব্রিটিশ সৈন্যরা অবাক হয়ে শুনতে লাগল। তারাও নিজেদের ভাষায় গাইতে শুরু করল একই গান। কয়েক মুহূর্ত পরে কেউ একজন ট্রেঞ্চের ওপরে ছোট্ট একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে ধরল, কেউ তুলে ধরল সাদা কাপড়। ধীরে ধীরে দু’পক্ষই অস্ত্র নামিয়ে এগিয়ে এলো ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এর দিকে সে জায়গা যেখানে প্রতিদিন মৃত্যু ও রক্ত ঝরত। কিন্তু সেই রাতে সেখানে বাজল গান, বিনিময় হলো সিগারেট, চকলেট, এমনকি পরিবারের ছবিও। কেউ আবার ফুটবল নিয়ে আসে তৈরি হয়ে যায় এক অঘোষিত মাঠ। ইতিহাস বলে, সেদিন সত্যি সত্যি ফুটবল খেলেছ

বড়দিনের রাতে থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ

সময়টা ১৯১৪। চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ মানেই রক্ত, গোলাগুলি আর শোক। পশ্চিম ফ্রন্ট জুড়ে জার্মান ও ব্রিটিশ সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাদা, কাঁটা তার আর ঠান্ডায় জমে থাকা ট্রেঞ্চের মধ্যে দিন কাটছিল তাদের। বড়দিন কাছে এসেও যেন আনন্দের কোনো ছোঁয়া ছিল না। মৃত্যুর ভয়ে যারা প্রতিদিন অস্থির, তাদের কাছে উৎসব মানেই ছিল দূরের কোনো স্মৃতি। কিন্তু বড়দিনের সেই রাতেই ঘটলো এক অলৌকিক ঘটনা, যা আজও মানবতার প্রতীক হয়ে আছে ‘ক্রিসমাস ট্রেস’ নামে।

বলা হয়, ২৪ ডিসেম্বরের রাতে জার্মান ট্রেঞ্চের দিক থেকে ভেসে এল বড়দিনের গান ‘সাইলেন্ট নাইট’। ব্রিটিশ সৈন্যরা অবাক হয়ে শুনতে লাগল। তারাও নিজেদের ভাষায় গাইতে শুরু করল একই গান। কয়েক মুহূর্ত পরে কেউ একজন ট্রেঞ্চের ওপরে ছোট্ট একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে ধরল, কেউ তুলে ধরল সাদা কাপড়। ধীরে ধীরে দু’পক্ষই অস্ত্র নামিয়ে এগিয়ে এলো ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এর দিকে সে জায়গা যেখানে প্রতিদিন মৃত্যু ও রক্ত ঝরত। কিন্তু সেই রাতে সেখানে বাজল গান, বিনিময় হলো সিগারেট, চকলেট, এমনকি পরিবারের ছবিও। কেউ আবার ফুটবল নিয়ে আসে তৈরি হয়ে যায় এক অঘোষিত মাঠ। ইতিহাস বলে, সেদিন সত্যি সত্যি ফুটবল খেলেছিল দুই শত্রুপক্ষের সৈন্যরা।

বড়দিনের রাতে থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ

এটা কোনো সরকারি চুক্তি ছিল না, ছিল না কোনো রাজনৈতিক নির্দেশও। যুদ্ধবিরতি হয়েছিল সম্পূর্ণ মানবিক আবেগের টানে। সেনারা হাত মিলিয়েছিল, কথা বলেছিল, একে অপরের পরিবার ও দেশের কথা জানতে চেয়েছিল। কেউ কেউ একসঙ্গে প্রার্থনা করেছিল নিহত সহযোদ্ধাদের জন্য। সেই রাতে গুলির শব্দ থেমে গিয়ে শোনা গিয়েছিল শুধু মানুষের কণ্ঠ যেখানে শত্রু নয়, মানুষ মানুষকেই দেখেছিল।

তবে এই মানবিক মুহূর্ত খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরদিন আবার শুরু হয় যুদ্ধের নিষ্ঠুর বাস্তবতা। সামরিক কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর নির্দেশ জারি করে। তবুও ১৯১৪ সালের সেই বড়দিনের রাত ইতিহাসে থেকে যায় অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে যেখানে প্রমাণিত হয়েছিল, যুদ্ধের মাঝেও মানুষ আসলে শান্তিকেই ভালোবাসে।

বড়দিনের রাতে থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ

এই গল্প আমাদের শেখায় বড়দিন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভালোবাসা, ক্ষমা ও সহমর্মিতার প্রতীক। যে মানুষটি কয়েক ঘণ্টা আগেও শত্রু ছিল, সেই মানুষই হয়ে উঠতে পারে বন্ধুর মতো। বন্দুকের নলের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে একটি গান, একটি কেক, কিংবা একটি হাতমেলানি।

আজ যখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখনও যুদ্ধের শিখা জ্বলছে, তখন সেই বড়দিনের মানবিক ঘটনার স্মৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় শান্তি কোনো কল্পকথা নয়। মানুষ চাইলে ঘৃণার দেয়াল পেরিয়েও একদিন একসঙ্গে গান গাইতে পারে। আর হয়তো সেই আশার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবতার সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের আসল বার্তা।

বড়দিনের রাতে থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ

আরও পড়ুন
সন্ধ্যা নামলেই পুরোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের হাট বসে যেখানে
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন?

সূত্র: বিবিসি, ব্রিটানিকা

কেএসকে/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow