ভূমিকম্পের ক্ষতি নির্ভর করবে অবকাঠামো কীভাবে তৈরি করেছি তার ওপর
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পের কারণে শতাধিক আহত ও কয়েকজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবায়েত কবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো— জাগো নিউজ: নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি কেনো হলো? রুবায়েত কবীর: বাংলাদেশ সাধারণভাবেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। আমরা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে আছি। এখানে কম বেশি ভূমিকম্প বিভিন্ন সময়ে হচ্ছে। বড় ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিও আছে। আজকের ভূমিকম্পের মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। পুরো বাংলাদেশ ভূমিকম্পের হাই রিস্ক জোন, লো রিস্ক জোন ও মিডিয়াম রিস্ক জোনে আছে। নরসিংদীতে কেনো উৎপত্তি হলো সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পের কারণে শতাধিক আহত ও কয়েকজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবায়েত কবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা
হলো—
জাগো নিউজ: নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি কেনো হলো?
রুবায়েত কবীর: বাংলাদেশ সাধারণভাবেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। আমরা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে আছি। এখানে কম বেশি ভূমিকম্প বিভিন্ন সময়ে হচ্ছে। বড় ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিও আছে। আজকের ভূমিকম্পের মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। পুরো বাংলাদেশ ভূমিকম্পের হাই রিস্ক জোন, লো রিস্ক জোন ও মিডিয়াম রিস্ক জোনে আছে। নরসিংদীতে কেনো উৎপত্তি হলো সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
জাগো নিউজ: আজকে এত কম্পন কেনো অনুভূত হলো?
রুবায়েত কবীর: আজকের ভূমিকম্পটা ঢাকার কাছে হয়েছে। এর উৎপত্তি ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে। যেহেতু এর উৎপত্তিস্থল অনেক কাছে ছিল, যার কারণে ভূমিকম্প আজকে বেশি অনুভব করেছি।
বাংলাদেশের ভূমিকম্প প্রবণ বিভিন্ন এলাকা/ছবি: সংগৃহীত
জাগো নিউজ: এর আগে এমন ভূমিকম্প হয়েছে কী?
রুবায়েত কবীর: আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০০৭ সাল থেকে ডিজিটাল সিসমোমিটার নিয়ে ভূমিকম্প পরিমাপ করছে। এর মাঝে এত বড় ভূমিকম্প হয়নি। আজকে ৫.৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প হলো সেটি ঢাকার আশেপাশে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প।
জাগো নিউজ: আফটার শকটা কখন হতে পারে?
রুবায়েত কবীর: ভূমিকম্পের পর ক্ষেত্র বিশেষে ৫-১০ দিন, বা ১ মাস পর্যন্ত হতে পারে। এটা আসলে পূর্বানুমান করা যায় না। অনেক সময় ভূমিকম্প হওয়ার পর দুই তিন ঘণ্টা পরেও হয়ে যেতে পারে। আফটার শক কেবল মাত্র একটা হয় না, অনেকগুলো হয়। এমনও হয়েছে একটা ভূমিকম্পের পর হাজার হাজার আফটার শক হয়েছে। নরসিংদীতে যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটার আফটার শক নাও হতে পারে। আবার হয়তো আফটার শক হয়েছে, সেটা এমন এক মাত্রায় হয়েছে যেটা হয়তো ধরা পড়ছে না। ভূমিকম্প হলে সাধারণত এর আফটার শক হওয়ার এক ধরনের সম্ভাবনা থাকে। এখন পর্যন্ত আমাদের সেন্সর কিংবা নেটওয়ার্কে কোনো আফটার শক ধরা পড়েনি।
জাগো নিউজ: ভূমিকম্পের আগাম কোনো সতর্কতা পাওয়া সম্ভব কী?
রুবায়েত কবীর: ভূমিকম্পের বিষয়ে কোনো পূর্বানুমান করা যায় না। ভূমিকম্প হলে দুই ধরনের ওয়েভ জেনারেট হয়। একটাকে বলে প্রাইমারি ওয়েভ, এটি সাধারণত আগে আসে। উন্নত বিশ্বে কিংবা জাপানে এই প্রাইমারি ওয়েভকে কাজে লাগায়। ক্ষতিটা সেকেন্ডারি ওয়েভে সাধারণত হয়ে থাকে। সেকেন্ডারি ওয়েভ জেনারেট হলে আরও দুটি ওয়েভ হয়, সেগুলো হলো লাভ ওয়েভ এবং রেলেই ওয়েভ। ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক ক্ষতিটা এই দুইটি ওয়েভের কারণে হয়ে থাকে।
একটা ভূমিকম্প হলে তার আগেই প্রাইমারি ওয়েভ হয়। সেটিকে জাপান বা উন্নত বিশ্ব কাজে লাগায়। তারা বিদ্যুৎ গ্যাস কিংবা অন্যান্য স্থাপনার সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই স্থাপনাগুলোর মেইন সুইচ তারা শাটডাউন করে। এভাবে তারা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়। এটাই আসলে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের ক্ষতি কমানোর একমাত্র ব্যবস্থা। আমরা এখনো ভূমিকম্পের তথ্য নিয়ে কাজ করছি। জাপানের এই প্রযুক্তি আমরা দেশে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। প্রাইমারি ওয়েভের তথ্যগুলো যেন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বা অন্যান্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে দিতে পারি-সেটা নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে হয়তো এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দেব। পুরো সিস্টেমটিকে আমাদের আরও বেশি আধুনিক করতে হবে। একটা প্রজেক্ট আমরা পরিকল্পনা করছি; আশা করছি শিগগিরই সেটি জমা দেব।
ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকার ঝুঁকি নিয়েও কথা বলেন মো. রুবায়েত কবীর/ছবি: জাগো নিউজ
জাগো নিউজ: ঢাকার ঝুঁকিটাকে কীভাবে বিবেচনা করবেন?
রুবায়েত কবীর: ঢাকার ঝুঁকির সঙ্গে অনেক কিছুই সম্পৃক্ত। একটা বড় ভূমিকম্প হলেই যে ঢাকার অনেক ক্ষতি হবে বিষয়টি এমন নয়। ঢাকা ভার্টিক্যালি এক্সপ্যান্ড হয়েছে (ঢাকার আওতা বেড়েছে)। জলাশয়, নিচু ভূমি ভরাট করে দালান কোঠা উঠেছে, এইভাবে ঢাকার ব্যপ্তি বেড়েছে। অনেক জনসংখ্যার কারণে ঢাকায় প্রচুর ভবন তৈরি করতে হয়েছে। ঢাকায় বিদ্যুতের লাইন, পানির লাইন, গ্যাসের লাইন যত্রতত্রভাবে হয়েছে। ভূমিকম্প হলে যে ক্ষতি হবে সেটা কেবলমাত্র ভূমিকম্পের ক্ষতি নয়; এর সঙ্গে আলাদা ফাংশনগুলো জড়িত। এই জিনিসগুলো বিবেচনা করলে ঢাকা নিয়ে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত। একটা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার অনেক ক্ষতি হবে বিষয়টা এমন নয়। ঢাকায় কতগুলো ভবন আছে যেগুলো আসলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়? ৫.৭ ছোট ভূমিকম্প নয়, ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করবে অবকাঠামো আমরা কীভাবে তৈরি করেছি তার ওপর। ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্পের আগে করণীয়, ভূমিকম্পকালীন করণীয় আর ভূমিকম্প হওয়ার পর করণীয়—এই জিনিসগুলো যদি আমরা পরিকল্পনা মাফিক করি ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেই তাহলে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারব। জাপানে অনেক বেশি ভূমিকম্প হয়; কিন্তু তাদের অনেক বেশি মানুষ মারা যায় না। কারণ তারা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে সব সময়।
জাগো নিউজ: সাধারণ মানুষের প্রতি কী বার্তা দেবেন?
রুবায়েত কবীর: যে অবকাঠামোগুলো করবো আমরা যেন সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করি। সরকার আমাদের বিল্ডিং কোড দিয়েছে সেটা যেন সবাই মেনে চলি। এছাড়া ভূমিকম্পে কি করতে হবে সেই বিষয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়, সেগুলো মেনে চলতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ
রুবায়েত কবীর: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ
এসএম/এমএমকে/এএসএম
What's Your Reaction?