ভূমিকম্পে পুরান ঢাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

সম্প্রতি কয়েক দফায় ভূমিকম্পে বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছে ঢাকাবাসী। এখনও অনেকে স্বাভাবিক হতে পারেননি। অনেকে আবার ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে চান আতঙ্কে। তবে ঢাকার কোন অংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও পার্থক্য একটাই পুরান ঢাকার সরু রাস্তা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় দুর্যোগের সময় মানুষকে দ্রুত সরানো কঠিন হতে পারে। তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে পুরোনো কিছু ভবন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে। কোনো ভূমিকম্পেও ভেঙে পড়েনি। তাই কাঠামোর মানই বেশি গুরুত্ব পায়। ঢাকার বিপদ ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’ ঢাকার ভেতরে কোনো ফল্ট লাইন নেই। তবে বাংলাদেশের ফল্ট লাইন বা চ্যুতি রেখার জন্য পাঁচটি জায়গা পরিচিত। বার্মা বা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী, যাকে বলে প্লেট বাউন্ডারি ১। সেখানে ১৭৬২ সালে ৮ দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। আরেকটা আছে প্লেট বাউন্ডারি ২ যেটা নরসিংদীর ওপর দিয়ে চলে গেছে, অতীতে এখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এরপরে প্লেট বাউন্ডারি ৩, যেটা সিলেট থেকে ইন্ড

ভূমিকম্পে পুরান ঢাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

সম্প্রতি কয়েক দফায় ভূমিকম্পে বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছে ঢাকাবাসী। এখনও অনেকে স্বাভাবিক হতে পারেননি। অনেকে আবার ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে চান আতঙ্কে। তবে ঢাকার কোন অংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও পার্থক্য একটাই পুরান ঢাকার সরু রাস্তা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় দুর্যোগের সময় মানুষকে দ্রুত সরানো কঠিন হতে পারে। তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে পুরোনো কিছু ভবন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে। কোনো ভূমিকম্পেও ভেঙে পড়েনি। তাই কাঠামোর মানই বেশি গুরুত্ব পায়।

ঢাকার বিপদ ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’

ঢাকার ভেতরে কোনো ফল্ট লাইন নেই। তবে বাংলাদেশের ফল্ট লাইন বা চ্যুতি রেখার জন্য পাঁচটি জায়গা পরিচিত। বার্মা বা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী, যাকে বলে প্লেট বাউন্ডারি ১। সেখানে ১৭৬২ সালে ৮ দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। আরেকটা আছে প্লেট বাউন্ডারি ২ যেটা নরসিংদীর ওপর দিয়ে চলে গেছে, অতীতে এখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এরপরে প্লেট বাউন্ডারি ৩, যেটা সিলেট থেকে ইন্ডিয়ার দিকে চলে গেছে, এখানে ১৯১৮ এবং ১৯৬৯ সালে ৭ দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।

আর আছে ডাউকি ফল্ট যেখানে ১৮৯৭ সালে আট দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। সবশেষ আছে মধুপুর ফল্ট যেখানে ১৮৮৫ সালে সাত দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এগুলোর কিছু জায়গায় ৩৫০ বছর, আবার কিছু জায়গায় ৯০০ বছরের মতো সময় পরে বড় ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পে পুরান ঢাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

তবে এর বাইরেও কিছু ফল্ট লাইন আছে, যেগুলোকে বলে ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’। ব্লাউন্ড ফল্ট হলো এমন ধরনের ফল্ট যা ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই ভূ-পৃষ্ঠে কোনো চিহ্ন না থাকায় সাধারণ ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রে এটি দেখা যায় না বা শনাক্ত করা কঠিন হয়। এই ধরনের ফল্ট বিপজ্জনক।

বাংলাদেশে দুটো চিহ্নিত ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’ আছে। একটি ময়মনসিংহে, অন্যটি রংপুরে। যেহেতু এই ফল্ট লাইনগুলো শনাক্ত করা কঠিন তাই কোনো সতর্কবার্তাও পাওয়া যায় না। ঢাকার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এই ব্লাইন্ড ফল্টগুলো।

আরও পড়ুন:

ভূমিকম্পে কম ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকার উত্তরাঞ্চল, বেশি ঝুঁকিতে দক্ষিণ
ভূমিকম্পে ঢাকার কোন এলাকা নিরাপদ?

ঢাকাকে কি নতুন করে গোছানো সম্ভব?

ঢাকা শহরকে একটা ‘সুশীল’ বা সুশৃঙ্খলা জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না এ বিষয়ে দ্বিমত আছে বিশেষজ্ঞদের ভেতরেও। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রেট্রোফিকেশন, পরিমার্জন, পরিশীলিতকরণ, ব্যবহার পরিবর্তন, এই চারটি কাজের মধ্য দিয়ে ঢাকাকে নতুনভাবে সাজানো সম্ভব। শতভাগ না হলেও কিছু অংশে সম্ভব।

কিছু শর্তের কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়, যেমন নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়ার সময় সব নিয়ম মেনেছে কি না যাচাই করা; ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি ভবন যাচাই করে নিরাপদ ভবনগুলোকে গ্রিন জোন, কিছু সংস্কার কাজ করে যেগুলোকে নিরাপদ বানানো সম্ভব সেগুলোকে ইয়েলো জোন এবং অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে রেড জোন হিসেবে মার্ক করে সিলগালা করার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করার কথাও বলেন তিনি। তারমতে, নির্দয় না হলে এই শহরকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

ভূতত্ত্ববিদ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ঢাকা শহরে যেভাবে একটা ভবনের সঙ্গে আরেকটা ভবন লাগোয়া, একটি ভবন হেলে পড়লে অপরটির অটোমেটিক ক্ষতি হবে। এমন অবস্থায় কীভাবে রেট্রোফিট করা সম্ভব? এগুলো অনুমোদন দেওয়ার সময় যাচাই করার বিষয়।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ভূমিকম্পের বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। বর্তমান ভবনগুলোর অবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করতে হবে ও ক্ষতিকর ভবনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটি ভাঙতে হবে, কোনটি সংস্কার প্রয়োজন আর কোনটি ক্ষতিকর নয় এগুলো আলাদা করা। একটি অরাজনৈতিক প্রেসার গ্রুপ থাকা উচিত, যারা সচেতনতামূলক কাজ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলা, যারা দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কাজ করতে পারবেন।

এসএনআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow