যানজটে এক-চতুর্থাংশ আয় কমেছে পরিবহন শ্রমিকদের
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের নিত্য যানজট ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা। এতে মেহেনতি মানুষের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ছে অ্যাম্বুলেন্স, দমকল বাহিনীর গাড়িও। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এই সড়কে চলাচলকারীরা। রাজধানীর উপকণ্ঠে শিল্প-বাণিজ্য ও আবাসন সমৃদ্ধ উপজেলা রূপগঞ্জ। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার ছোট বড় শিল্প-কারখানা। ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৮ জন মানুষের বাস এখানে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকেও হাজার হাজার লোক বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসেন। ফলে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। এই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও যানজট নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশও যানজট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, যানজট নিরসনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশের যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে ৪৮ জন আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোথাও কোথাও দু’একজন আনসারকে দেখা গেলেও সড়কের পাশে আর চায়ের দোকানে আড্ডায় মশগুল থাকেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের নিত্য যানজট ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা। এতে মেহেনতি মানুষের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ছে অ্যাম্বুলেন্স, দমকল বাহিনীর গাড়িও। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এই সড়কে চলাচলকারীরা।
রাজধানীর উপকণ্ঠে শিল্প-বাণিজ্য ও আবাসন সমৃদ্ধ উপজেলা রূপগঞ্জ। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার ছোট বড় শিল্প-কারখানা। ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৮ জন মানুষের বাস এখানে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকেও হাজার হাজার লোক বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসেন। ফলে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। এই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও যানজট নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশও যানজট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের দাবি, যানজট নিরসনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশের যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে ৪৮ জন আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোথাও কোথাও দু’একজন আনসারকে দেখা গেলেও সড়কের পাশে আর চায়ের দোকানে আড্ডায় মশগুল থাকেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১২-১৩টি জেলার মানুষ এ সড়কে যাতায়াত করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। এর ভেতর ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক যানজটপ্রবণ।
সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও গর্তে গাড়ি আটকে যাওয়া, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামাসহ বিভিন্ন কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ১২ কিলোমিটার সড়কের এই অংশে পাঁচটি চিহ্নিত স্পট থেকে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে যানজট। হরহামেশাই বিস্তৃত হচ্ছে মাইলের পর মাইল। দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতেই কখনো কখনো সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
এই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে কেন্দ্র করে উপজেলার অভ্যন্তরে সিএনজি, লেগুনা, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপভ্যান, কার এবং মাইক্রোবাসসহ ৫ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ১২ কিলোমিটার সড়কে প্রতিটি লেগুনা, সিএনজি ও অটোরিকশার যেখানে যাত্রী নিয়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪টি ট্রিপ মারার কথা, যানজটে সেখানে তারা মাত্র ৮ থেকে ১০টি ট্রিপ মারতে পারছেন। এতে তাদের প্রতিদিনের স্বাভাবিক আয়ের এক চতুর্থাংশ কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-
৮ ঘণ্টা পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট
যানজটে আটকা উপদেষ্টা গেলেন মোটরসাইকেলে চড়ে
নকশা জটিলতায় থমকে আছে ছয় লেনের কাজ
মহাসড়ক দিয়ে ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাঁচপুরে চলাচলকারী লেগুনাচালক হেলাল মিয়া বলেন, ‘ভুলতা থেকে কাঁচপুর ২০ মিনিটের পথ। যানজটবিহীন সড়কে স্ট্যান্ডের সিরিয়াল ক্রমে প্রতিটি লেগুনা ১৪ থেকে ১৬টি ট্রিপ মারতে পারে। কিন্তু যানজটের কারণে সারা দিনে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ মারাই কষ্টকর হয়ে যায়। শুনছি সড়ক যানজটমুক্ত করতে উপজেলা থেকে আনসার দিছে। কোথাও কোথাও দু-একজন আনসারকে দেখা গেলেও তারা চায়ের দোকানে আড্ডায় মশগুল থাকে বেশি।’
ভুলতা গাউছিয়া থেকে স্টাফ কোয়ার্টার চলাচলকারী লেগুনাচালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাঁচপুর ও স্টাফ কোয়ার্টার রোডে প্রায় ৩০০ লেগুনা চলাচল করে। একটি গাড়িতে ১৪টি সিট আছে। প্রতি সিটের ভাড়া ৩০ টাকা। এক ট্রিপে আমদানি আসে ৪২০ টাকা। যানজটের কারণে তিন থেকে চারটি ট্রিপ কম হয়। এতে প্রতিদিন আমাদের লোকসান গুনতে হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।’
সিএনজি চালক কবির হোসেন বলেন, ‘বরপা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিজার্ভ ও লোকাল খ্যাপ মারেন তিনি। স্বাভাবিক সড়কের তুলনায় যানজটে খ্যাপ কমার কারণে চার ভাগের একভাগ আমদানি ছুটে যায়। কোনো কোনো দিনতো মালিকের জমার টাকাই ওঠাইতে পারি না। প্রায় দিনই মালিকের কাছে ঋণ থাকে। এই যানজট আমাগো আয় রোজগার খাইয়া দিছে।’
অটোচালক বাবুল মিয়া বলেন, ‘সড়কে যানজটের কারণে যাত্রী পরিবহনে তো আমাদের আয় রোজগার কমছেই। যানজটের কারণে মহাসড়কের লিংক রোড থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও যানজট লেগে যাচ্ছে। এতে উপজেলায় চলাচলকারী প্রায় ৫ হাজার অটোরিকশার আয়-রোজগারে ভাটা পড়ছে।’
শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে বরাব বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কে কিছু খানাখন্দ রয়েছে। যানবাহনের চাপের তুলনায় সড়কের প্রস্থও তুলনামূলক কম। এখানে এসে যানবাহনের গতিবেগ কমিয়ে ফেলতে হয়। এর ওপর মাঝেমধ্যেই সড়কে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘলাইন লেগে যায়। তবে কাঁচপুরের কাছ থেকে তারাবো বিশ্বরোড পর্যন্ত মূল রাস্তার পশ্চিমে মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের একটি লেন চালু করা হয়েছে। এখন তারাবো বিশ্বরোড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত দুই লেনে গাড়ি চলাচল করার কারণে যানজট কিছুটা কমেছে। তবে মহাসড়ককে স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট বিভিন্ন কারণে হচ্ছে। খানাখন্দ তেমন কোনো সমস্যা না। যানজট হচ্ছে মূলত সড়ক কম প্রশস্ত হওয়ার কারণে। আমরা প্রস্থ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছি। সড়কটি চওড়া হয়ে গেলে আর যানজট সৃষ্টি হবে না বলে আশাবাদী।’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে ৩৬ জন এবং একইসঙ্গে তারাবো পৌরসভার পক্ষ থেকে ১২ জনসহ মোট ৪৮ জন আনসার নিয়োগ দিয়েছি। তারা বিশেষ করে ভুলতা গাউছিয়া থেকে তারাবো বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কাজ করছে। আনসার নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে যানজটের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে।’
এফএ/এএসএম
What's Your Reaction?