যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী আরচণ-বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন ভারতীয়রা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের প্রতি প্রকাশ্য বর্ণবাদী আচরণ বা বিদ্বেষ ক্রমেই যেন বাড়ছে। দীপাবলির শুভেচ্ছাবার্তা কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিদ্বেষ তরঙ্গে ভেসে উঠছে দেশজুড়ে বাড়তে থাকা সংস্কারবাদী ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী মনোভাবের নতুন রূপ। গত মাসে এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্সে (টুইটার) দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতেই চরম বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে ভেসে যান। এক পাদ্রী লিখে বসেন, নিজ দেশে ফিরে গিয়ে তোমাদের বালু দিয়ে বানানো দানবদের পূজা করো। আরেকজন মন্তব্য করেন, আমার দেশ থেকে বের হয়ে যাও। কেউ কেউ আবার লেখেন, এটা যুক্তরাষ্ট্র, আমরা এসব করি না। এসব প্রতিক্রিয়ার অনেকগুলো ১০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে এবং এগুলো ছিল তুলনামূলক ‘সহনীয়’ ধরনের মন্তব্য। একই ধরনের আক্রমণের মুখে পড়েন সাবেক জাতিসংঘ দূত নিকি হ্যালি, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামস্বামী, সিভিল রাইটস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল হর্মিত ঢিল্লন। এমনকি হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট ও আরকানসাসের গভর্নর সারা হাকাবি স্যান্ডার্সের শুভেচ্ছাবার্তাগুলোকেও একই ধরনের মন্তব্য দেখা যায়। কিছু ভারতীয়

যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী আরচণ-বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন ভারতীয়রা

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের প্রতি প্রকাশ্য বর্ণবাদী আচরণ বা বিদ্বেষ ক্রমেই যেন বাড়ছে। দীপাবলির শুভেচ্ছাবার্তা কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিদ্বেষ তরঙ্গে ভেসে উঠছে দেশজুড়ে বাড়তে থাকা সংস্কারবাদী ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী মনোভাবের নতুন রূপ।

গত মাসে এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্সে (টুইটার) দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতেই চরম বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে ভেসে যান। এক পাদ্রী লিখে বসেন, নিজ দেশে ফিরে গিয়ে তোমাদের বালু দিয়ে বানানো দানবদের পূজা করো। আরেকজন মন্তব্য করেন, আমার দেশ থেকে বের হয়ে যাও। কেউ কেউ আবার লেখেন, এটা যুক্তরাষ্ট্র, আমরা এসব করি না। এসব প্রতিক্রিয়ার অনেকগুলো ১০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে এবং এগুলো ছিল তুলনামূলক ‘সহনীয়’ ধরনের মন্তব্য।

একই ধরনের আক্রমণের মুখে পড়েন সাবেক জাতিসংঘ দূত নিকি হ্যালি, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামস্বামী, সিভিল রাইটস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল হর্মিত ঢিল্লন। এমনকি হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট ও আরকানসাসের গভর্নর সারা হাকাবি স্যান্ডার্সের শুভেচ্ছাবার্তাগুলোকেও একই ধরনের মন্তব্য দেখা যায়।

কিছু ভারতীয়-আমেরিকান রক্ষণশীল এ ধরনের বিদ্বেষ দেখে বিস্মিত। ডেমোক্র্যাটদের বড় সাফল্যের পর রামস্বামী রিপাবলিকানদের উদ্দেশে বলেন, ‘জাতীয়তা নিয়ে রাজনীতি’ বাদ দিতে হবে। এমনকি, চরম ডানপন্থি মন্তব্যের জন্য পরিচিত দিনেশ ডি’সুজাও প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের ডানপন্থিদের মধ্যে এমন ভাষা আগে কখনো শুনিনি।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিদ্বেষ নতুন নয়; শুধু আরও বেশি প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ ভেঙ্কটরামাকৃষ্ণন বলেন, ডানপন্থি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বহুদিন ধরেই বাড়ছিল। কিন্তু ডাকটা এখন ঘরের ভেতর থেকেই অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসছে।

গবেষণা বলছে, অভিবাসনবিরোধী মনোভাব থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ক্ষোভ, সবকিছুর কেন্দ্রে এখন ভারতীয় অভিবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। সংগঠিত ঘৃণা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধু অক্টোবরে এক্সে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও বিদেশিবিদ্বেষ ছড়ানো প্রায় ২৭০০ পোস্ট পাওয়া গেছে। ইলন মাস্ক প্ল্যাটফর্মটি নেওয়ার পর এমন কনটেন্ট আরও অবারিতভাবে ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকরা।

সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে এইচ-১বি ভিসা ইস্যুতে। ভারতীয়রাই এই ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হওয়ায় ডানপন্থিদের একাংশ তাদের ‘চাকরি ছিনিয়ে নেওয়া প্রতারক’ হিসেবে দেখাচ্ছে। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারও ভারতকে অভিবাসননীতি ‘চিটিং’-এর অভিযোগে আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি এ ভিসার আবেদনে এক লাখ ডলারের ফি যুক্ত করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

ডানপন্থিরা এখন ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নানা বর্ণবাদী গালি ব্যবহার করছে, যেমন: ‘দূষিত’, ‘গন্ধে ভরা’, ‘হাতে খাওয়া বর্বর’- এসব কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বাস্তবেও ছড়াচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের সময় অ্যান্ড্রু কুয়োমোর প্রচারণা দল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও পরবর্তীতে মেয়র নির্বাচিত হওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে এআই নির্ভর বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। যদিও পরে তারা সেটি মুছে ফেলতে বাধ্য হয়।

গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের সাফল্য ও দৃশ্যমান উপস্থিতিও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। প্রযুক্তি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা- প্রায় সবক্ষেত্রেই তাদের উপস্থিতি থাকায় ডানপন্থি চক্রের একাংশ এটিকে ‘হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরছে।

এই অনলাইন বিদ্বেষ বাস্তবেও সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফ্লোরিডার এক সিটি কাউন্সিল সদস্য ভারতীয়দের গণবহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। আবার টেক্সাসের আরভিংয়ে তিন মুখোশধারী ব্যক্তি প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ করে।

স্টপ এএপিআই হেইট সংগঠনের বরাতে জানা যায়, রেস্টুরেন্ট, কর্মস্থল এমনকি হিন্দু মন্দিরের সামনেও ভারতীয়রা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভার্জিনিয়ার এক ভারতীয় জানান, তাকে রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যে গালি দেওয়া হয় ও সহিংসতার হুমকি দেওয়া হয়।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেন, প্রেসিডেন্ট ধর্মীয় স্বাধীনতার দৃঢ় সমর্থক এবং ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। কিন্তু ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটির পক্ষ থেকে এই বিদ্বেষ থামানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্স ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও, ভারতীয়দের প্রতি এমন বিদ্বেষী মন্তব্যকে ‘তরুণ বয়সের ভুল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আবার ক্লেয়ারমন্ট ইনস্টিটিউটে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, কেবল আমেরিকান আদর্শকে গ্রহণ করাই যথেষ্ট নয়, বরং যাদের পূর্বপুরুষ গৃহযুদ্ধে লড়েছেন, তাদেরও আমেরিকায় অধিক দাবি রয়েছে। তার মতে, অনেক বেশি অভিবাসী এলে দেশের ‘সামাজিক সংহতি’ নষ্ট হয়। বলা হচ্ছে, উষার এমনসব মন্তব্য অভিবাসীদের প্রতি আরও বৈরিতা উসকে দিতে পারে।

হোয়াইট হাউজের দীপাবলি অনুষ্ঠানে কাশ প্যাটেল জোর দিয়ে বলেন, আমি একজন প্রথম প্রজন্মের ভারতীয়-আমেরিকান, যার মা-বাবা বৈধভাবে এই দেশে এসেছেন। কিন্তু অনলাইনে অনেকের কাছে তাতেও গুরুত্ব ছিল না। মন্তব্যে বলা হয়, ভারতে ফিরে গিয়ে তোমার দেবতাদের পূজা করো।

বিশেষজ্ঞ রোহিত চোপড়া বলেন, ভারতীয়-আমেরিকানদের অনেকেই এক ধরনের ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধে ছিলেন। এখন এটা তাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা। বর্ণবাদ ও ধর্মবিদ্বেষের যে ঢেউ অন্যদের টার্গেট করত, তার বাইরে তারা কেউই নন। এখনই অন্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নে নতুন করে ভাবার সময়।

সূত্র: সিএনএন

এসএএইচ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow