যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে ফের আলোচনায় সৌদি যুবরাজ
যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে ফের আলোচনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের পর অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঘটনার সাত বছর পর প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউজে গিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে ফিরছেন এমবিএস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার মঙ্গলবারের (১৮ নভেম্বর) বৈঠক প্রমাণ করে, বিতর্ক ও সমালোচনা পেছনে ফেলে দুই দেশের স্বার্থভিত্তিক সম্পর্ক এখনো অটুট। ২০১৮ সালে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি যুবরাজকে ‘একঘরে’ বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিজেকে একজন শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরছেন। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা এবং সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরানোর মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। একসময় ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য যাকে ‘উদাসীন ও বেপরোয়া’ নেতা বলা হয়েছিল, সেই এমবিএস এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম আলোচিত চরিত্র। কঠোর রক্ষণশীলতার পর্দা সরিয়ে সামাজিক মুক্তির ঢেউ মাত্র এক দশকের মধ্যে সৌদি সমাজে ঘটে গেছে নজিরবিহীন পরিবর্তন। ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব কমানো, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, কর্মক্ষ
যুক্তরাষ্ট্র সফর দিয়ে ফের আলোচনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের পর অনেকটা ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঘটনার সাত বছর পর প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউজে গিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে ফিরছেন এমবিএস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার মঙ্গলবারের (১৮ নভেম্বর) বৈঠক প্রমাণ করে, বিতর্ক ও সমালোচনা পেছনে ফেলে দুই দেশের স্বার্থভিত্তিক সম্পর্ক এখনো অটুট।
২০১৮ সালে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি যুবরাজকে ‘একঘরে’ বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিজেকে একজন শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরছেন। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা এবং সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরানোর মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। একসময় ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য যাকে ‘উদাসীন ও বেপরোয়া’ নেতা বলা হয়েছিল, সেই এমবিএস এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম আলোচিত চরিত্র।
কঠোর রক্ষণশীলতার পর্দা সরিয়ে সামাজিক মুক্তির ঢেউ
মাত্র এক দশকের মধ্যে সৌদি সমাজে ঘটে গেছে নজিরবিহীন পরিবর্তন। ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব কমানো, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও পুরুষদের সঙ্গে অবাধ সামাজিক মেলামেশার সুযোগ—এমন পরিবর্তন সৌদি ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন>>
সৌদিকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিতে পারেন ট্রাম্প
সৌদিতে কর্মীর পাসপোর্ট জব্দ-ফি নেওয়া নিষিদ্ধ, প্লেনভাড়া দেবেন নিয়োগদাতা
মদিনায় সবুজ নগর গড়তে সৌদি সরকারের নতুন উদ্যোগ
একসময় বাধ্যতামূলক কালো আবায়া ও হিজাবে ঢাকা সৌদি নারীরা আজ অংশ নিচ্ছেন ফ্যাশন শোতে; রিয়াদে আয়োজিত কনসার্টে জেনিফার লোপেজ, কামিলা ক্যাবেলোসহ বিশ্ব তারকারা অংশ নিচ্ছেন। হলিউড অভিনেত্রী হ্যালি বেরি ও মনিকা বেলুচ্চির মতো তারকাদের উপস্থিতি সৌদি আরবকে এক কঠোর রক্ষণশীলতা থেকে রূপান্তরিত করেছে আধুনিকতা ও বিনোদনের নতুন গন্তব্যে।
তবে এই মুক্তির পথ নির্মাতা যুবরাজ সালমান তার বিরোধীদের জন্য আরও কঠোর। বহু সমালোচক, কর্মী, এমনকি ক্ষমতাকেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কারাবন্দি বা নির্বাসিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বার্তা পরিষ্কার—সংস্কার হবে, কিন্তু তা কেবল যুবরাজের শর্তে, আর আনুগত্য হবে তার মূল্য।
ক্ষমতা, কূটনীতি ও রাজমুকুটের অপেক্ষা
খাশোগি হত্যা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমবিএসের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে দায়িত্ব স্বীকার করেন সৌদি শাসক হিসেবে।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছিলেন, সৌদি আরবকে ‘পরিত্যক্ত’ রাষ্ট্র বানাতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ফিরে যায় জ্বালানি, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত স্বার্থের বাস্তবতায়।
২০২৫ সালে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা সেই সম্পর্ককে আরও উষ্ণ করেছে। সৌদি থেকে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি, প্রতিরক্ষা চুক্তি আর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় তা স্পষ্ট।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক স্টিভ ক্লেমন্সের মতে, যুবরাজের এই সফর হলো ‘প্রি-করোনেশন মোমেন্ট’, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার অভিষেকের পূর্ব মুহূর্ত।
সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/
What's Your Reaction?