রাজনৈতিক দলগুলো কেন আলাদা নারী শাখা রাখবে?

অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে নারীদের নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আলাদা ‘নারী শাখা’ রাখবে? নারীরা তো মূলধারার রাজনীতিতেই সমানভাবে কাজ করতে পারবেন- এটি স্বীকার করার মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি। বুধবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকার গুলশানের লেকশোর গ্র্যান্ডে বিশ্বব্যাপী জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাবিরোধী ১৬ দিনের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংলাপের এ কথা বলেন তিনি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে কার্যক্রম থেমে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শারমীন মুরিশদ বলেন, আমাদের মনে যে স্বৈরাচারী মূল্যবোধ ও বৈষম্যমূলক ধারণা রয়ে গেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ সমাজে দেখা যায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা এই মানসিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা ঘটলে মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া

রাজনৈতিক দলগুলো কেন আলাদা নারী শাখা রাখবে?

অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে নারীদের নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আলাদা ‘নারী শাখা’ রাখবে? নারীরা তো মূলধারার রাজনীতিতেই সমানভাবে কাজ করতে পারবেন- এটি স্বীকার করার মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকার গুলশানের লেকশোর গ্র্যান্ডে বিশ্বব্যাপী জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাবিরোধী ১৬ দিনের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংলাপের এ কথা বলেন তিনি।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে কার্যক্রম থেমে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শারমীন মুরিশদ বলেন, আমাদের মনে যে স্বৈরাচারী মূল্যবোধ ও বৈষম্যমূলক ধারণা রয়ে গেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ সমাজে দেখা যায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা এই মানসিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি।

নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা ঘটলে মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়।

তিনি এনজিওগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এনজিওগুলোর নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে আমরা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সহায়তা পৌঁছাতে পারবো।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি এনজিওগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম।

সাইবার সহিংসতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শারমিন মুরশিদ বলেন, ডিজিটাল স্পেসেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। কারণ সেখানেও সহিংসতা ব্যাপক। তরুণ-তরুণী উভয়ের মধ্যেই একটি পশ্চাৎপদতার ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে- এটি ভেঙে নতুন সচেতনতা, সমতা ও সম্মানের ন্যারেটিভ গড়ে তুলতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনের আগে জানতে হবে নারী অধিকার, নিরাপত্তা ও সমতা বিষয়ে তাদের অবস্থান কী। কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া বড় কোনো রূপান্তর সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমষ্টিগত পদক্ষেপ ও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। আমরা বাংলাদেশ সরকার, সিভিল সোসাইটি ও যুবসমাজের সঙ্গে মিলিতভাব মর্যাদা, সমতা এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে কাজ করে যাবো।

ইউএন উইমেন, বাংলাদেশ- এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে বিনিয়োগ করতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলতে থাকা সামাজিকীকরণের ধরণ ও নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যেসব উদাহরণ নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করি, সেগুলোই তাদের জেন্ডার, সম্মান এবং মানবাধিকার সম্পর্কে চিন্তাভাবনাকে গঠন করে।

কানাডিয়ান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেভেলপমেন্ট–জেন্ডার ইকুয়ালিটি) স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা শুধু নারী বা কন্যাশিশুর সমস্যা নয়; পুরুষ ও ছেলেদেরও সমাধানের অংশ হতে হবে। আমাদের প্রতিশ্রুতি ১৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, বরং সারা বছর, প্রতিদিন এই ইস্যুকে মোকাবিলা করতে হবে।

সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এবং ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন প্রধান ইভা স্মেডবার্গ বলেন, আজ আমরা দেখছি প্রযুক্তিনির্ভর নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি দ্রুত বর্ধনশীল নির্যাতনের এক রূপে পরিণত হয়েছে। আমাদের দৃঢ়ভাবে একসাথে দাঁড়াতে হবে, কারণ নারীর প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতাই কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।

ব্রিটিশ হাইকমিশন ঢাকার ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মি. মার্টিন ডসন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে নারীর সহিংসতা রোধে গৃহীত কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান।

নারী-পুরুষ সমতায় অগ্রগতির পরও বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন বক্তারা।

জেপিআই/এমআইএইচএস/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow