শিশুযত্ন কেন্দ্রে রক্ষা পাচ্ছে শিশুদের জীবন, মায়েদের কাজে গতি
প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই হার বেশি কাজের ব্যস্ততায় শিশুদের নজর রাখা কঠিন মায়েদের জন্য শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপরও গুরুত্ব দেয় শিশুযত্ন কেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে ৬-৯ বছর বয়সীদের সাঁতারও শেখানো হয় ‘বাচ্চার বাবা কৃষি কাজ করেন। সকালে বের হয়ে ফেরেন সন্ধ্যায়। আমাকে রান্না-বান্নাসহ ঘরের সব কাজই করতে হয়। সন্তান দেখলে কাজ হয় না। আবার কাজ করতে গিয়ে সন্তানের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় না। দেখা গেলো, আমি একটা কাজে ব্যস্ত, এরমধ্যে সে চলে যাবে পানিতে বা দা-বঁটি ধরবে। কখন কী হয়, ঠিক নেই। সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হতো। শিশুযত্ন কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে তাকে রেখে এখন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি। ছেলেও খেলাধুলা করে ফুরফুরা থাকে। অনেক কিছু শেখে।’ কথাগুলো বলছিলেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামের তাসলিমা বেগম। তার গ্রামেই গড়ে উঠেছে সরকারি, বেসরকারি ও কমিউনিটির যৌথ উদ্যোগে শিশুযত্ন কেন্দ্র। শিশুযত্ন কেন্দ্রের অধীনে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে/ছবি: জাগো নিউজ সম্প্রতি ওই শিশুযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে যেন শিশুদের
- প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়
- এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই হার বেশি
- কাজের ব্যস্ততায় শিশুদের নজর রাখা কঠিন মায়েদের জন্য
- শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপরও গুরুত্ব দেয় শিশুযত্ন কেন্দ্র
- প্রকল্পের অধীনে ৬-৯ বছর বয়সীদের সাঁতারও শেখানো হয়
‘বাচ্চার বাবা কৃষি কাজ করেন। সকালে বের হয়ে ফেরেন সন্ধ্যায়। আমাকে রান্না-বান্নাসহ ঘরের সব কাজই করতে হয়। সন্তান দেখলে কাজ হয় না। আবার কাজ করতে গিয়ে সন্তানের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় না। দেখা গেলো, আমি একটা কাজে ব্যস্ত, এরমধ্যে সে চলে যাবে পানিতে বা দা-বঁটি ধরবে। কখন কী হয়, ঠিক নেই। সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হতো। শিশুযত্ন কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে তাকে রেখে এখন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি। ছেলেও খেলাধুলা করে ফুরফুরা থাকে। অনেক কিছু শেখে।’
কথাগুলো বলছিলেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামের তাসলিমা বেগম। তার গ্রামেই গড়ে উঠেছে সরকারি, বেসরকারি ও কমিউনিটির যৌথ উদ্যোগে শিশুযত্ন কেন্দ্র।
শিশুযত্ন কেন্দ্রের অধীনে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে/ছবি: জাগো নিউজ
সম্প্রতি ওই শিশুযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে যেন শিশুদের হাসি-খুশির রং ছড়ানো। কেউ ব্ল্যাকবোর্ডে অক্ষর সাজাচ্ছে, কেউ শারীরিক কসরতে ব্যস্ত, আবার অনেকে দলবেঁধে খেলায় মগ্ন। আর এই প্রাণবন্ত দৃশ্যের ঠিক পাশেই একটি জলমহাল। কয়েক বছর আগেও এটি শিশু মৃত্যুরকূপ হিসেবে পরিচিত ছিল স্থানীয়দের কাছে। পানিতে ডুবে প্রায়ই ঘটতো শিশুদের প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু বিপদসংকুল সেই জলমহালের পাশেই এখন ফুটেছে জীবনের আলো।
পানিতে ডুবে শিশুর অকাল মৃত্যুর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করে ৩২ মিলিয়ন ডলারের ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি-বেইজড চাইল্ড কেয়ার (আইসিবিসি) প্রকল্প। প্রকল্পের লক্ষ্য ১ থেকে ৫ বছর বয়সী দুই লাখ শিশুর জন্য ৮ হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র এবং ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুর জন্য ‘সাঁতার-সুরক্ষা’ প্রশিক্ষণ। প্রকল্পটি শুধু প্রাণহানি রোধ নয়, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপরও গুরুত্ব দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। দিনের হিসাবে প্রতিদিন মারা যায় ৪০ জন শিশু। বিশেষ করে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। গ্রামাঞ্চলে সমস্যা আরও গভীর, কারণ কাজের ব্যস্ততায় শিশুদের নজর রাখা কঠিন মায়েদের জন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুর অকাল মৃত্যুর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করে ৩২ মিলিয়ন ডলারের ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি-বেইজড চাইল্ড কেয়ার (আইসিবিসি) প্রকল্প। এটি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজ, সিআইপিআরবি ও সাইনারগসের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের লক্ষ্য এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী দুই লাখ শিশুর জন্য আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র এবং ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুর জন্য ‘সাঁতার-সুরক্ষা’ প্রশিক্ষণ। প্রকল্পটি শুধু প্রাণহানি রোধ নয়, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপরও গুরুত্ব দেয়।
আরও পড়ুন
৮ হাজার শিশুর যত্নকেন্দ্রে কর্মসংস্থান হবে ১৬ হাজার নারীর
ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ-প্রারম্ভিক বিকাশে প্রকল্পের যাত্রা শুরু
শিশুদের নিরাপদ-উন্নত জীবন গঠনে কাজ করছে সরকার
এই প্রকল্পেরই একটি মনোহরদীর এই চন্দনবাড়ি শিশুযত্ন কেন্দ্র। এখানে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুদের রাখা হয়। থাকেন একজন কেয়ারগিভার (যত্নকারী) ও আরেকজন সহকারী কেয়ারগিভার।
‘এমনও হতো কাপড়চোপড় ধুইতে গেছি পুকুরে, এসে দেখি ছেলে দা/বঁটি ধরে হাত কেটে ফেলেছে বা ময়লা খেয়ে ফেলছে। কখনো কখনো পড়ে ব্যথা পাচ্ছে। অনেক সমস্যা হতো। কিন্তু আমাদের এখানে শিশুযত্ন কেন্দ্র হওয়ায় এখন টেনশনমুক্ত হয়েছি। এখানে ছেলেকে দিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি।’ —তাসলিমা বেগম, চার বছরের শিশু সাফওয়ানের মা
কেয়ারগিভার (যত্নকারী) নুরুন্নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের রুটিন আছে। প্রথমে স্বাগত জানানো, এরপর কুশলবিনিময়। এক থেকে তিন বছরের বাচ্চাদের এক ধরনের ছড়া, ৩ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের ভিন্ন ধরনের ছড়া শেখানো হয়। গান করা, খেলা, টিফিন ও বিশ্রামেরও সুযোগ আছে। এখানে একটা ঘরের মধ্যে আমরা পাঁচটি ভুবন তৈরি করেছি। এরমধ্যে আপন ভুবন ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত। রুটিন কাজের মধ্যে কারও ঘুম চলে এলে তাকে আলাদা করে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। স্বপ্নের ভুবনে শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি নতুন কিছু তৈরি করে। গল্পের ভুবনে শিশুরা একে অপরের সঙ্গে গল্প করে। রঙের ভুবনে তারা আঁকাআঁকি করে। বাইরের ভুবনে শিশুরা দোলনায় দোলে, কাদা দিয়ে খেলনা তৈরি করে। এ ছাড়াও শিশুযত্ন কেন্দ্রে রয়েছে আরও অনেক কার্যক্রম, যা শিশুদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শিশুযত্ন কেন্দ্রের উঠানে খেলায় মগ্ন দুই শিশু/ছবি: জাগো নিউজ
কেয়ারগিভার নুরুন্নাহার আরও বলেন, ‘আমার বাড়িতে থাকা অতিরিক্ত ঘরের মধ্যেই এই আয়োজন করেছি। আমাদের মাসিক একটা ভাতা দেওয়া হয়। মূলত, এটা করি তাদের (শিশু) সঙ্গে আমার সময়টাও কেটে যায়। নিজের সন্তানকে লালনপালন করি, সবগুলো সন্তানকে একসঙ্গে লালনের আনন্দটাই বেশি। এখানে বাচ্চারা একসঙ্গে থাকায় মানসিক বিকাশ ভালো হয়। কোনো বিষয়ে শিশুদের ঘাটতি থাকলে বা সমস্যা মনে হলে তাদের অভিভাবকদের দিকনির্দেশনা দেই।’
মনোহরদী উপজেলা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মাকসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মনোহরদীতে আমাদের ৫০০ কেন্দ্রে ১২ হাজার শিশু আছে। শৈশবকালীন দুর্ঘটনা বা ইনজুরি প্রতিরোধ করার জন্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয় এসব কেন্দ্রে। একটা কেন্দ্রে কমবেশি ২৫ জন শিশু রাখা হয়। সেখানে শিশুদের প্রারম্ভিক আবেগিক, বুদ্ধিগত ও ভাষাগত বিকাশ নিশ্চিত করা হয়। শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে মা-বাবার জন্য সচেতনতা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। এছাড়া টিকা ও জন্মনিবন্ধন সনদ করাসহ নানা বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করা হয়।
‘আগে শিশুযত্ন কেন্দ্রের এ ধারণা শহরে ছিল। এখন গ্রামেও জীবনরক্ষাকারী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বাস্তব হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা ও যত্নের ওপর জোর দিয়ে কেন্দ্রগুলো সুস্থ ও সক্ষম প্রজন্ম গঠনে কাজ করছে। প্রকল্পটি আরও ১৫ জেলায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যেসব এলাকার শিশুরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, দরিদ্র ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি—সেসব এলাকায় আমরা কাজ করতে চাই যাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শিশুরা নিরাপদে বেড়ে ওঠে চাই।’ —আব্দুল কাদির, প্রকল্প পরিচালক, আইসিবিসি
মাকসুদুর রহমান আরও বলেন, পাশাপাশি ছয় থেকে নয় বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে এ প্রকল্পটির মাধ্যমে। ছেলেদের জন্য পুরুষ এবং মেয়েদের জন্য নারী প্রশিক্ষকের মাধ্যমে গ্রামের পুকুরেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মনোহরদীর এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাঁতার প্রশিক্ষক সাব্বির আহমেদ পাভেল। নরসিংদী সরকারি কলেজে স্নাতকে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ছেলেদের সাঁতার শেখান। এরই মধ্যে ১১টি ব্যাচকে সাঁতার শিখিয়েছেন। এখন ১২তম ব্যাচ চলছে।
কেয়ারগিভারের উপস্থিতিতে পুকুর পাড়ে খেলছে শিশুর দল/ছবি: জাগো নিউজ
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘নিরাপদে পানিতে নামানো, নিরাপদে পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা, নিজেকে উদ্ধার ও অন্যকে উদ্ধার করাসহ ২১ ধাপে বাচ্চাদের শেখাই। এটি মূলত, সাহসের বিষয়। এই শিক্ষাটা তাদের মধ্যে তৈরি করে দেই।’
শুধু নরসিংদী নয়, দেশের ১৬ জেলার ৪৬ উপজেলায় আট হাজার ২০টি শিশুযত্ন কেন্দ্র চালু হয়েছে। এতে দুই লাখ পাঁচ হাজার শিশুকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৬ হাজার কেয়ারগিভারের।
‘এ প্রকল্প গ্রামবাসীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে অনুপ্রেরণার বিষয় হলো— জনগণই এর মূল্য বুঝতে পেরেছে এবং সেখানে স্বেচ্ছায় ভূমিকা রাখছে। এই প্রকল্পে প্রায় দুই লাখ শিশু সরাসরি উপকৃত হচ্ছে, আর তাদের পরিবারের মাধ্যমে আরও ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশু পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে—মোট হিসাবে যা প্রায় পাঁচ লাখ।’ —ঈশা হোসেন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, সাইনারগস বাংলাদেশ
প্রকল্পটির গবেষণায় পাওয়া গেছে, কেন্দ্রগুলোতে শিশু থাকলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার ৮৮ শতাংশ কমে যায়। মায়েরা নির্বিঘ্নে কাজে যেতে পারছেন, এতে পরিবারের আয়ও বাড়ছে।
একবার এলে আর যেতে চায় না শিশুরা
চার বছরের শিশু সাফওয়ানের মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘এমনও হতো কাপড়চোপড় ধুইতে গেছি পুকুরে এসে দেখি ছেলে দা/বঁটি ধরে হাত কেটে ফেলেছে বা ময়লা খেয়ে ফেলছে। কখনো কখনো পড়ে ব্যথা পাচ্ছে। অনেক সমস্যা হতো। কিন্তু আমাদের এখানে শিশুযত্ন কেন্দ্র হওয়ায় এখন টেনশনমুক্ত হয়েছি। এখানে ছেলেকে দিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি।’
তাসলিমা বলেন, ‘এখানে অনেক বাচ্চার সঙ্গে থাকার কারণে সাফওয়ান বাড়িতে থাকা বাচ্চাদের চেয়ে বেশি অগ্রসর। সবার সঙ্গে পড়ে, অনেক কিছু শেখে। বাসায় গিয়ে আবার আমাদের কাছে সেগুলো বলে।’
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি শিশুযত্ন কেন্দ্র/ছবি: জাগো নিউজ
সাড়ে তিন বছরের শিশু সামিয়া জেরিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা বাসায় থাকলে আগুনে যায়, নাকি পানিতে পড়ে ঠিক নেই। অনেক সময় সাবান পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। কাঁচি বটি দিয়ে খেলে, এতে কখন হাত-পা কেটে যায় তার ঠিক নেই। কাজে থাকলে তো সব খেয়াল রাখা যায় না। এখানে (শিশুযত্ন কেন্দ্র) এলে এসব থেকে দূরে থাকে। এখানে অনেক কিছু শিখে, বাড়ি গিয়ে বলে। খেলাধুলা করে, নিরাপদ থাকে।’
আরও পড়ুন
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে অনন্য ভূমিকায় ‘আঁচল’
উপকূলের শিশু সুরক্ষায় প্রধান বাধা দারিদ্র্য
শিশু সুরক্ষায় ‘শিশু আইন ২০১৩’ সংশোধন করা উচিত: উপদেষ্টা শারমীন
শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: বিচারহীনতায় বাড়ছে সহিংসতা
সাড়ে চার বছর বয়সী শিশু রাব্বির মা মাসুদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ভালোর জন্য দিছি। বাসায় তো নানা ঝামেলা করে। খেলতে গেলে সমস্যা করে ফেলে। এখানে দেখাশোনার লোক আছে। অনেক কিছু শেখে। খুশি থাকে। তার মানসিক বিকাশ ভালো হয়।’
মাসুদা বেগম বলেন, ‘এখানে দায়িত্বে থাকা যত্নকারী মায়ের মতো শিশুদের যত্ন করে। যার কারণে ওখানে থাকতে চায় শিশুরা। বাচ্চা স্কুল (শিশুযত্ন কেন্দ্র) থেকে আসতে চায় না। ওখানে বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে চায়।’
সুস্থ সক্ষম প্রজন্মের ভিত্তি স্থাপনে শিশুযত্ন কেন্দ্রের ভূমিকা
শিশুযত্ন নিয়ে কাজ করা সাইনারগস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ঈশা হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এ প্রকল্প গ্রামবাসীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে অনুপ্রেরণার বিষয় হলো— জনগণই এর মূল্য বুঝতে পেরেছে এবং সেখানে স্বেচ্ছায় ভূমিকা রাখছে। এই প্রকল্পে প্রায় দুই লাখ শিশু সরাসরি উপকৃত হচ্ছে, আর তাদের পরিবারের মাধ্যমে আরও তিন লাখ ৬০ হাজার শিশু পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে—মোট হিসাবে যা প্রায় পাঁচ লাখ।
প্রকল্পের সহকারী ব্যবস্থাপক আদিবা নাহরীন জাগো নিউজকে বলেন, যৌথ উদ্যোগ কীভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ শিশুতোষ জীবনকে নতুনভাবে গড়তে পারে তা নতুন করে দেখায় এ প্রকল্প। প্রাথমিক শিক্ষা ও যত্নের ওপর জোর দিয়ে এই কেন্দ্রগুলো একটি সুস্থ, সক্ষম প্রজন্মের ভিত্তি স্থাপনের কাজ করছে। আমরা শিশুদের জন্য শুধু এটুকুই চেয়েছি।
শিশুযত্ন কেন্দ্রের পাশের খালে ফোটা কচুরিপানা ফুল তুলছে কয়েকজন শিশু/ছবি: জাগো নিউজ
আইসিবিসি প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাদির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে শিশুযত্ন কেন্দ্রের এই ধারণা শহরে ছিল। এখন গ্রামেও জীবনরক্ষাকারী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বাস্তব হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা ও যত্নের ওপর জোর দিয়ে কেন্দ্রগুলো সুস্থ ও সক্ষম প্রজন্ম গঠনে কাজ করছে। প্রকল্পটি আরও ১৫ জেলায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যেসব এলাকার শিশুরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, দরিদ্র ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি—যেমন সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, বাগেরহাট, চাঁদপুর ও ভোলা। এসব এলাকায় আমরা কাজ করতে চাই যাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শিশুরা নিরাপদে বেড়ে ওঠে।’
শিশুদের দৃষ্টির সমস্যা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আব্দুল কাদির বলেন, প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৩৩ থেকে ৩৭ জনের দৃষ্টিতে সমস্যা থাকে। যদি পাঁচ বছর বয়সের আগে তা শনাক্ত ও চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে আরোগ্য পাওয়া সম্ভব। তাই প্রকল্পে শিগগির শিশুদের চোখ পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়টি যুক্ত করা হবে। কারণ অনেক শিশু সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারায়।
এসইউজে/এমএমকে/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম
What's Your Reaction?