শীতের অপেক্ষায় থাকে মাদারীপুরের শত শত নিম্ন আয়ের পরিবার
মাদারীপুরের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে শীত কেবল কুয়াশা আর ঠান্ডার বার্তা নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে বাড়তি রোজগার আর ঘুরে দাঁড়ানোর এক নতুন সুযোগ। যখন ঘরে ঘরে এখন আর পিঠা তৈরির চল নেই, ঠিক তখনই শহরের অলিগলি ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে চুলা জ্বালিয়ে বসেন নিম্ন আয়ের শত শত মানুষ। দিনভর রিকশা চালিয়ে বা গৃহকর্মীর কাজ করার চেয়েও সহজ এই মৌসুমি ব্যবসা। এর মাধ্যমে এসব মানুষের জীবনে এনেছে উষ্ণতা আর আত্মনির্ভরতার এক নতুন গল্প। চিতই, ভাপা আর নানা রকম ভর্তার মন মাতানো গন্ধে এখন মাদারীপুর শহর মাতে, আর তা বিক্রি করেই তিন থেকে চার মাস নিজেদের সংসার চালান অনেক পরিবার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ, শকুনি লেকপাড়, ২ নম্বর শকুনি, কলেজের পিছনে, হাসপাতালের মোড়, থানার মোড়, ইটেরপুল, পুরানবাজার, রেন্ডিতলা, করাচি রোড, চৌরাস্তা, পানিছত্র, কাজীর মোড়, পুরাতন ফেরিঘাটসহ প্রায় শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ চুলা বসিয়ে বা ভ্যানগাড়িতে করে এই পিঠা বিক্রি হচ্ছে। পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, চাপড়ি, পাকন, মুঠি পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, চিট রুটিসহ নানা ধরনের পিঠা বানানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশ
মাদারীপুরের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে শীত কেবল কুয়াশা আর ঠান্ডার বার্তা নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে বাড়তি রোজগার আর ঘুরে দাঁড়ানোর এক নতুন সুযোগ। যখন ঘরে ঘরে এখন আর পিঠা তৈরির চল নেই, ঠিক তখনই শহরের অলিগলি ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে চুলা জ্বালিয়ে বসেন নিম্ন আয়ের শত শত মানুষ।
দিনভর রিকশা চালিয়ে বা গৃহকর্মীর কাজ করার চেয়েও সহজ এই মৌসুমি ব্যবসা। এর মাধ্যমে এসব মানুষের জীবনে এনেছে উষ্ণতা আর আত্মনির্ভরতার এক নতুন গল্প। চিতই, ভাপা আর নানা রকম ভর্তার মন মাতানো গন্ধে এখন মাদারীপুর শহর মাতে, আর তা বিক্রি করেই তিন থেকে চার মাস নিজেদের সংসার চালান অনেক পরিবার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ, শকুনি লেকপাড়, ২ নম্বর শকুনি, কলেজের পিছনে, হাসপাতালের মোড়, থানার মোড়, ইটেরপুল, পুরানবাজার, রেন্ডিতলা, করাচি রোড, চৌরাস্তা, পানিছত্র, কাজীর মোড়, পুরাতন ফেরিঘাটসহ প্রায় শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ চুলা বসিয়ে বা ভ্যানগাড়িতে করে এই পিঠা বিক্রি হচ্ছে। পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, চাপড়ি, পাকন, মুঠি পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, চিট রুটিসহ নানা ধরনের পিঠা বানানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চিতই আর ভাপা পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় শুঁটকি, ধনেপাতা, সরিষা, বাদাম, কালোজিরা, মরিচসহ নানা ধরনের ভর্তা।
পিঠা বিক্রেতা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাপা পিঠা তৈরি করা হয় মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে। এছাড়াও ডাল ও চালের গুড়া দিয়ে তৈরি হয় চাপড়ি। মচমচে চাপড়িও ভর্তা দিয়ে খেতেও দেখা যায়। বেশির ভাগই ভ্রাম্যমাণ এই দোকানগুলোতে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে এই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে থাকেন। অনেকেই ভ্যানগাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে আবার কেউ নির্দিষ্ট জায়গায় থামিয়েও পিঠা বিক্রি করছেন। সুবিধা ও চাহিদামতো এক থেকে আটটি মাটির চুলা বসিয়ে পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় বেশিরভাগই একাধিক মাটির চুলায় এই পিঠা বানিয়ে থাকেন। দুপুরের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও সন্ধ্যার পর বাড়ে ক্রেতা। অনেকেই বিকেলের নাস্তা হিসেবেও এই পিঠা খেয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন
ভাপা পিঠার স্বাদে শুরু হোক শীতের আয়োজন
খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত মাগুরার গাছিরা
শীতের আগমনে জমে উঠেছে ঢাকার পাইকারি বাজার
মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপারের পিঠা বিক্রেতা ফাতেমা বেগম বলেন, শীত কেবল শুরু হয়েছে। তবুও আমাদের বিক্রি হচ্ছে। তবে শীত বেশি পড়লে পিঠা বিক্রি অনেক বেশি হবে। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এবং চুলার সংখ্যা বাড়িয়ে পিঠা বিক্রি করবো। এখন গড়ে প্রতিদিন দুই হাজার টাকার মতো হয়। শীত বাড়লে তিন থেকে চার হাজার টাকা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি পিস চিতই পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ১৫ টাকা, চাপড়ি ১০টা, পাটিসাপটা ১৫ টাকা, তেলে ভাজা পিঠা ১০ টাকা, চিট রুটি ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এতে করে একেকজন পিঠা বিক্রেতার দিনে আয় করেন দুই হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই শীতের মৌসুম প্রায় তিন থেকে চার মাস তাদের জীবিকা নির্বাহ হয় এই পিঠা বিক্রি করে। অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায়, পিঠা বানিয়ে তা বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করছেন মাদারীপুরের নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ। বাকী সময় তারা কেউ রিকশা চালান, কেউ গৃহকর্মীর কাজ করেন, কেউ শ্রমিকের কাজ করেন। তবে শীতের এই সময়ে নিজ উদ্যোগেই, নিজের ইচ্ছেমতো আয় করতে পারায়, তারা প্রতিবছরই পিঠা বিক্রি করে আয় করছেন।
মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার সঙ্গে আমার মা, ভাগনি ও স্ত্রী থাকেন। কেউ ঘরে পিঠা বানায় না। কারণ মা ও স্ত্রী দুইজনের একটু অসুস্থ। তাই যখন পিঠা খেতে ইচ্ছে হয়, তখন রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান থেকে কিনে নেই। আমি খাই সঙ্গে আমার পরিবারও খায়। গরম গরম পিঠাগুলো দারুণ মজা। সঙ্গে নানা ধরনের ভর্তা আরো বেশি মজা।
আরও পড়ুন
শেয়াই পিঠা বাগেরহাটের শীতকালীন ঐতিহ্য
হাজীর হাওলা গ্রামের আরেক বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, আমি স্কুলের শিক্ষিকা। সময় করে পরিবারের জন্য পিঠা বানাতে পারি না। তাই এই শীতের সময় রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পিঠা কিনে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেয়ে থাকি।
পিঠা বিক্রেতা লিপি বেগম বলেন, বর্তমানে পিঠা বিক্রি করে টাকা আয় করছি। বাড়ির সামনে রাস্তায় মাটির চুলায় পিঠা বানিয়ে তা বিক্রি করে লাভ ভালই হয়। তাই এখন গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে দিয়েছি। পুরো শীতে এই পিঠা বানানোর কাজ করবো। শীত গেলে আবার গৃহকর্মীর কাজ করবো।
মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, শীত এলেই মাদারীপুরের অনেক নারীরা কাজ খুঁজে পান। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণভাবে পিঠা বিক্রি করেন। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নারীরা ঘরে বসে না থেকে আয় করছেন, সেটা খুব ভালো উদ্যোগ।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/কেএইচকে/এমএস
What's Your Reaction?