শীতে পোষা প্রাণীর যত্ন নেবেন যেভাবে
সানজানা রহমান যুথী শীতকাল প্রাণীদের জন্য খুব একটা ভালো সময় নয়। এ সময় পোষা প্রাণীরাও পড়ে বেশ বিপাকে। কিন্তু পোষা প্রাণী মালিকরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে কী করবেন। তাই শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে কী করা উচিত—এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ারের পেট অ্যানিম্যাল কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্জন ভেট. ডা. ফয়সাল কবির। চলুন তার কাছে সরাসরি জেনে নেওয়া যাক আপনার আদরের পোষ্যর যত্ন সম্পর্কে - ১. শীতের সময় পোষা প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা কীভাবে বজায় রাখা উচিত? আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রচলিত পোষা প্রাণী হলো - বিড়াল এবং কুকুর, যাদের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৭.৫ থেকে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে আমাদের দেশের তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কম থাকে এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম থাকে। তাই পোষা প্রাণী শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য উষ্ণ পরিবেশ, অর্থাৎ ঘরের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন এবং প্রয়োজন বোধে হিউমিডিফায়ার অথবা রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন। ২. কোন কোন প্রাণী শীতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে? মূলত নবজাতক, বয়স্ক অথবা অসুস্থ প্রাণী (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম) শীতকালে বেশি
সানজানা রহমান যুথী
শীতকাল প্রাণীদের জন্য খুব একটা ভালো সময় নয়। এ সময় পোষা প্রাণীরাও পড়ে বেশ বিপাকে। কিন্তু পোষা প্রাণী মালিকরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে কী করবেন।
তাই শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে কী করা উচিত—এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ারের পেট অ্যানিম্যাল কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্জন ভেট. ডা. ফয়সাল কবির। চলুন তার কাছে সরাসরি জেনে নেওয়া যাক আপনার আদরের পোষ্যর যত্ন সম্পর্কে -
১. শীতের সময় পোষা প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা কীভাবে বজায় রাখা উচিত?
আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রচলিত পোষা প্রাণী হলো - বিড়াল এবং কুকুর, যাদের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৭.৫ থেকে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে আমাদের দেশের তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কম থাকে এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম থাকে।
তাই পোষা প্রাণী শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য উষ্ণ পরিবেশ, অর্থাৎ ঘরের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন এবং প্রয়োজন বোধে হিউমিডিফায়ার অথবা রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন।
২. কোন কোন প্রাণী শীতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে?
মূলত নবজাতক, বয়স্ক অথবা অসুস্থ প্রাণী (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম) শীতকালে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও ব্র্যাকিওসেফালিক ব্রিডের বিড়াল বা কুকুর, যাদের থার্মোরেগুলেশন কম হয়, এবং কম পশমযুক্ত ব্রিডের প্রাণীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কিছু এক্সোটিক প্রাণী যেমন — গিনিপিগ, পাখি, খরগোশ এদের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।
৩. শীতকালে পোষা প্রাণীর খাবার পরিবর্তন করতে হয় কি?
সাধারণত ফুলি ইনডোর ক্যাট অথবা ডগের জন্য খাবারের পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। তবে সিকিউরিটি ডগ হলে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট অথবা প্রোটিন যুক্ত করতে পারেন। খাবারের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন করলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে; হঠাৎ খাবারের আমূল পরিবর্তন করা যাবে না। এবং যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের পূর্বে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নেবেন।
৪. শীতের সময় পানির প্রয়োজন কি কমে যায়? পানি পান করাতে কী করণীয়?
না, পানির প্রয়োজন কমে যায় না। বরং শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই সব সময় প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ থাকা উচিত। অতিরিক্ত পানির চাহিদা মেটানোর জন্য খাবারের পানির পরিমাণটা বাড়িয়ে দিতে পারেন, যেমন — চিকেন সিদ্ধ করার সময় চিকেন স্টকের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন।
৫. শীতে পোষা প্রাণীর ত্বক শুষ্ক হওয়া কিভাবে রোধ করা যায়?
রুমের আর্দ্রতা বাড়ানোর জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা, শীতে পোষা প্রাণীকে গোসল না করানো, ওমেগা–থ্রি যুক্ত সাপ্লিমেন্ট, সঠিক পুষ্টিযুক্ত খাবার প্রদান করা ও নিয়মিত কম্বিং করা।
৬. লোম বেশি ঝরা ও খুশকি হওয়া কি শীতের কারণে হয়?
হ্যাঁ, শীতের শুষ্ক বাতাস এবং আবহাওয়ার কারণে খুশকি দেখা যায়। এছাড়াও ঋতু পরিবর্তনের কারণে সিজনাল শেডিংও ঘটে। তবে অতিরিক্ত লোম পড়া বা খুশকি হলে সেটি চামড়ার বিভিন্ন ধরনের রোগের (প্যারাসাইট, অ্যালার্জি, ফাংগাল, ডার্মাটাইটিস) কারণে হতে পারে। তাই অতিরিক্ত লোম পড়লে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নেবেন।
৭. কোন লক্ষণ দেখলে দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিতে হবে?
হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিলে - চোখ এবং নাক থেকে অনবরত পানি ঝরা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, ২৪ ঘন্টার বেশি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, বারবার বমি বা পাতলা পায়খানা করা, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা অথবা অস্বাভাবিক আচরণ - দ্রুত একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নেবেন।
৮. শীতের জন্য বাড়িতে কী ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা রাখা উচিত?
রেকটাল থার্মোমিটার, হিটিং–প্যাড বা রুম হিটার, অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড বা ক্রিম, ভেটেরিনারিয়ান কর্তৃক সুপারিশকৃত সাধারণ জ্বর বা ঠান্ডার প্রয়োজনীয় ওষুধ বাসায় রাখতে পারেন। তবে যেকোনো ধরনের ওষুধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
৯. শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী ধরনের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া যায়?
শীতের সময় পোষা প্রাণীর বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রবণতা বাড়ে। তাই নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন, ডিওয়ার্মিং, ডেন্টাল এবং জেনারেল চেকআপ করানো উচিত। সুষম পুষ্টিযুক্ত খাবার, ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রাখা, ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বা ইমিউন বুস্টার সাপ্লিমেন্ট প্রদান করাও জরুরি।
১০. শহরের ফ্ল্যাটে পোষা প্রাণী রাখলে শীতে বিশেষ কোনো নিয়ম মানতে হয় কি?
কিছু সাধারণ নিয়ম যেমন — বসবাসের স্থান শুষ্ক রাখা, ফ্রেশ কুসুম গরম খাবার–পানির ব্যবস্থা করা, কিছু ইনডোর অ্যাকটিভিটিজ রাখা, লিটার বক্স উষ্ণ স্থানে রাখা, জানালার নিচে শোবার জায়গা না করা – এগুলো মেনে চললেই পোষা প্রাণী ভালো থাকবে। তবে রুম উষ্ণ রাখার জন্য হিটার ব্যবহার করলে অবশ্যই কেবল বা সার্কিটের সেফটি নিশ্চিত করে ব্যবহার করতে হবে, যেন আপনার আদরের পোষা প্রাণী অসাবধানতা–জনিত ইলেকট্রিক শক থেকে মুক্ত থাকে।
এএমপি/জেআইএম
What's Your Reaction?