শীত এলেই ঘুম বাড়ে, ক্লান্ত লাগে কারণ কী জানেন?
শীত পড়তেই সকালে আয়েশ করে ঘুমাতে কার না ভালো লাগে! এই সময় বিছানা ছাড়তে মনই চায় না, উষ্ণ কম্বলের ভেতর আরেকটু সময় কাটিয়ে দেওয়ার লোভ সামলানোই কঠিন। কিন্তু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে শুধু কাজের ব্যাঘাতই ঘটে না, শরীর ও মনেও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। এ সময়ে এমন অবস্থা খুব সাধারণ এবং প্রায় সবারই হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে প্রকৃতি ও শরীরের ছন্দের সূক্ষ্ম সম্পর্ক। আসুন জেনে নেওয়া যাক এ সময়ে ক্লান্ত লাগে কেন- ১. সূর্যের আলো কমে গেলে সূর্যের আলো আমাদের ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে আসায় শরীর কম আলো পায়, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ে শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম বা ঘুম-জাগরণের প্রাকৃতিক ঘড়িতে। আলো কমে গেলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ঘুম, আলসেমি ও ক্লান্তি তৈরি করে। এই অবস্থাকেই বলা হয় ‘উইন্টার ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম’। শরীর তখন মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে বিশ্রামের সময় এসেছে। ২. ভিটামিন ডি- এর অভাবে শীতের আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো সূর্যের আলো কম পাওয়া। সূর্যের আলো না থাকলে শরীরে ভিটামিন ডি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না। এই ভিটামিনের ঘাটতি থেকে ক্লান
শীত পড়তেই সকালে আয়েশ করে ঘুমাতে কার না ভালো লাগে! এই সময় বিছানা ছাড়তে মনই চায় না, উষ্ণ কম্বলের ভেতর আরেকটু সময় কাটিয়ে দেওয়ার লোভ সামলানোই কঠিন। কিন্তু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে শুধু কাজের ব্যাঘাতই ঘটে না, শরীর ও মনেও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। এ সময়ে এমন অবস্থা খুব সাধারণ এবং প্রায় সবারই হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে প্রকৃতি ও শরীরের ছন্দের সূক্ষ্ম সম্পর্ক।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এ সময়ে ক্লান্ত লাগে কেন-
১. সূর্যের আলো কমে গেলে
সূর্যের আলো আমাদের ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে আসায় শরীর কম আলো পায়, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ে শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম বা ঘুম-জাগরণের প্রাকৃতিক ঘড়িতে। আলো কমে গেলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ঘুম, আলসেমি ও ক্লান্তি তৈরি করে। এই অবস্থাকেই বলা হয় ‘উইন্টার ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম’। শরীর তখন মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে বিশ্রামের সময় এসেছে।
২. ভিটামিন ডি- এর অভাবে
শীতের আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো সূর্যের আলো কম পাওয়া। সূর্যের আলো না থাকলে শরীরে ভিটামিন ডি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না। এই ভিটামিনের ঘাটতি থেকে ক্লান্তি, মন খারাপ, শক্তি কমে যাওয়া এবং মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। আবার ঠান্ডার সময় অনেকেই ঘরে থাকতে পছন্দ করেন, বাইরে যাওয়া ও ব্যায়াম কম হয়, রক্ত সঞ্চালনও ধীর হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে শরীরে অলসতা আরও বেড়ে যায়।
৩. সূর্যের আলো কারণে মানসিক প্রভাব
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শীতে সূর্যের আলো কম পাওয়ায় মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলে। আলো কমলে সেরোটোনিন নামের হরমোন কমে যায়, যা আমাদের মুড বা অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে অনেকের মধ্যে ‘উইন্টার ব্লুজ’ বা হালকা বিষণ্ণতা দেখা দেয়। এই অবস্থা থেকে মন ভারী লাগে, কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং সারাদিনই ক্লান্তি ঘিরে ধরে।
৪. খাদ্যাভ্যাসের কারণে
এ সময় খাদ্যাভ্যাসও বড় ভূমিকা রাখে। শীতে অনেকেই ভারী ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেয়ে ফেলেন, যা শরীরকে আরও ঘুম ও অলস করে তুলতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের সামান্য পরিবর্তনেই শীতের এই ক্লান্তি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
ক্লান্তি দূর করতে যা করবেন
ক্লান্তি কাটানো সম্ভব কিছু সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকতে দিন। দিনের শুরুতে প্রাকৃতিক আলো শরীরকে জাগিয়ে তোলে এবং শক্তির মাত্রা বাড়ায়। যদি সম্ভব হয়, কয়েক মিনিটের জন্য বাইরে হাঁটতে বের হন। হালকা ব্যায়াম ও তাজা বাতাস শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং অলসতা দূর করে।
এর পাশাপাশি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জাগার অভ্যাস বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি স্থিতিশীল থাকে, ঘুমের মান ভালো হয় এবং দিনের বেলায় ক্লান্তি ও ঘুম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
এ সময়ে খাবারেও সচেতন হওয়া দরকার। বেশি তেল-চর্বিযুক্ত ভারী খাবার খেলে শরীর আরও অলস হয়ে পড়ে, তাই ওটস, ডিম, ডাল, শাকসবজি ও ফলের মতো হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়া ভালো। একই সঙ্গে পানি পান করার অভ্যাসও বজায় রাখতে হবে। শীতে তৃষ্ণা কম থাকলেও শরীরের পানির প্রয়োজন কিন্তু কমে না, তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
এছাড়া প্রতিদিনের খাবারে রঙিন ফল ও সবজি রাখার চেষ্টা করতে পারেন। কমলালেবু, পালং শাক, বাদামসহ এমন অনেক খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বি-ভিটামিন থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। দিনের শেষের দিকে অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলে তা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং উল্টো পরদিন আরও ক্লান্ত লাগতে পারে, তাই ক্যাফেইন গ্রহণেও নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি শীতকালে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘুম দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ভিটামিন ডি বা থাইরয়েডের মাত্রা জেনে নেওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় এই ঘাটতিগুলো ক্লান্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন:
আপেলের বীজ চিবিয়ে খাওয়া কতটা বিপজ্জনক?
ফুসফুসের রোগ সিওপিডি কী? জানুন লক্ষণ
এসএকেওয়াই/জেআইএম
What's Your Reaction?