সরকারি পিসি কলেজে শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজের বহুমুখী সংকট দিনদিন বাড়ছে। একদিকে যেমন শ্রেণিকক্ষ সংকট অপরদিকে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষ পুরাতন ও জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটিতে ৫টি ভবনের মধ্যে ২টি পরিত্যক্ত। ৮৪টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে রয়েছে মাত্র ৪৮টি। ৬৮ জন শিক্ষকের পদের বিপরীতে রয়েছেন ৩৫ জন। অধ্যাপকের ৩টি পদের বিপরীতে ১ জন, সহকারী অধ্যাপকের ১৭টি পদের বিপরীতে ৮ জন, সহযোগী অধ্যাপকের ১৪টি পদের বিপরীতে ৫ জন ও প্রভাষকের ৩৪টি পদের বিপরীতে ২১ জন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। নেই কোনো অডিটোরিয়াম। বিভাগীয় অফিস ১১টির মধ্যে ৫টির অবস্থাও নাজুক। এছাড়া বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট ও রোভারের কার্যক্রমের জন্য নেই আলাদা ভবন। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী খান মাহির বলেন, আমাদের কলেজে আবাসনের সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। শ্রেণিকক্ষে কোনো সাউন্ড সিস্টেম নে

সরকারি পিসি কলেজে শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজের বহুমুখী সংকট দিনদিন বাড়ছে। একদিকে যেমন শ্রেণিকক্ষ সংকট অপরদিকে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষ পুরাতন ও জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটিতে ৫টি ভবনের মধ্যে ২টি পরিত্যক্ত। ৮৪টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে রয়েছে মাত্র ৪৮টি। ৬৮ জন শিক্ষকের পদের বিপরীতে রয়েছেন ৩৫ জন। অধ্যাপকের ৩টি পদের বিপরীতে ১ জন, সহকারী অধ্যাপকের ১৭টি পদের বিপরীতে ৮ জন, সহযোগী অধ্যাপকের ১৪টি পদের বিপরীতে ৫ জন ও প্রভাষকের ৩৪টি পদের বিপরীতে ২১ জন কর্মরত রয়েছেন।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। নেই কোনো অডিটোরিয়াম। বিভাগীয় অফিস ১১টির মধ্যে ৫টির অবস্থাও নাজুক। এছাড়া বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট ও রোভারের কার্যক্রমের জন্য নেই আলাদা ভবন।

সরকারি পিসি কলেজে শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী খান মাহির বলেন, আমাদের কলেজে আবাসনের সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। শ্রেণিকক্ষে কোনো সাউন্ড সিস্টেম নেই। পেছনে বসলে অনেক সময় কিছুই শোনা যায় না। ক্লাস চলাকালীন সময় পলেস্তারা খসে পড়ে। আমাদের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে একই শিক্ষককে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। বাথরুমের অবস্থা খুবই নাজুক। পরিষ্কার করার কোনো লোক নেই। আমরা সরকারের কাছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসফিয়া মিম বলেন, আমাদের কমন রুমে বসার ব্যবস্থা নেই, সিট ভাঙা। রুমের অবস্থাও বেশি ভালো না। শিক্ষক সংকটের জন্য আমাদের ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে না। আমরা বেশি ক্লাস করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাথরুমের সব কিছু ভাঙা। অনেক আগের করা বলে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। বাথরুম নোংরা থাকে। যার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরকারি পিসি কলেজে শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত

শরণখোলা থেকে পিসি কলেজে পড়তে আসা বিজন দাস বলেন, আমি কলেজের হোস্টেলে সিট না পেয়ে বাইরের হোস্টেলে থাকি। আমার মাসে ৭-৮ হাজার টাকার মতো বাড়তি খরচ হচ্ছে। আমার মতো মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির জন্য এত খরচ করে পড়া অনেক কষ্টসাধ্য। কলেজের হোস্টেলে সিট পেলে আমার জন্য সুবিধা হতো।

বাংলা বিভাগের প্রভাষক তাপস চন্দ্র ঘরামী বলেন, সাতক্ষীরা, কয়রা, শরণখোলার মতো দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। কলেজে হোস্টেল আছে কিন্তু পর্যাপ্ত না। কলেজের আবাসিক হোস্টেলে যে পরিমাণ সিটের আবেদন পড়ে কিন্তু বরাদ্দ হয় খুবই সীমিত। তারা অনেকে আর্থিকভাবে তেমন সামর্থ্যবান না। কিন্তু বাইরে অতিরিক্ত টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের লেখাপড়া করতে হয়। আমাদের দাবি নতুন করে ছাত্রনিবাস বা ছাত্রীনিবাস করা হলে ভালো হবে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রইস সরদার বলেন, একাদশ শ্রেণিতে তিন গ্রুপ ভর্তি হলে শুরুতেই তাদের ভালো কোনো শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতে পারছি না। আর অনার্সে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ১৬০ জনের মতো ভর্তি হয়। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের এত ধারণ ক্ষমতা নেই। প্রথম যখন শিক্ষার্থীরা এসে বসতে পারছে না, দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে তখনই একটা পিছুটান তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কলেজে ১৪টি বিভাগেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষকেই অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকট নিরসন খুব জরুরি দরকার। পাশাপাশি অবকাঠামোর দিকেও নজর দিতে হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ শেখ জিয়াউল ইসলাম বলেন, কলেজে ১১ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজেও তেমন সহায়তা করতে পারছি না। মাত্র তিনটা ভবনেই আমাদের সবকিছু করতে হচ্ছে। বাকি দুইটা পরিত্যক্ত, কিন্তু এখনো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা যায়নি। ফলে নতুন কোনো ভবন বারবার চেয়েও পাইনি। এরই মধ্যে দুটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন পর্যায়ে আছে তা বলতে পারছি না। অতিশীঘ্রই যদি আমাদের বরাদ্দ না হয় তাহলে আগামীতে শিক্ষা, পাঠদান সবই বাধাগ্রস্ত হবে।

কলেজের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৮ সালের ৮ই আগস্ট কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। ১৯১৮ সালের ৯ই আগস্ট কলা বিভাগের প্রথম পাঠদানের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের যাত্রা শুরু হয়। কলেজটি অনুমোদন পায় ১৯২১ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত কলেজের নাম ছিল বাগেরহাট কলেজ। এর পর কলেজটি বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকায় পদার্থ বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামানুসারে প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ বা পিসি কলেজ নামকরণ করা হয়।

নাহিদ ফরাজী/এমএন/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow