স্মরণীয় মুসলিম মনীষী
ইমাম মাতুরিদি (রহ.) ছিলেন একজন সুন্নি হানাফি ধর্মতত্ত্ববিদ, বিচারপতি এবং তাফসির ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ। তিনি আবু মনসুর আল মাতুরিদি বা ইমাম মাতুরিদি নামেই বেশি পরিচিত। তার পুরো নাম আবু মনসুর মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মাহমুদ আল-মাতুরিদি আল-হানাফি। আল-মাতুরিদি হলো নিসবাত; অর্থাৎ, তার জন্মভূমির প্রতি সম্পৃক্ত করে এই উপাধি দেওয়া হয়েছে। মাতুরিদ সমরকান্দের একটি এলাকা। সেই জায়গার প্রতি সম্পৃক্ত করেই তাকে আল মাতুরিদি বলা হয়। পরবর্তীকালে তার আকিদা-দর্শন ও অনুসারীদের এ নামেই ডাকার প্রচলন হয়। বলা হয়, ‘মাতুরিদি আকিদা’। ইমাম মাতুরিদি আনুমানিক ৮৫৩ সালে সমরকন্দের নিকটবর্তী মাতুরিদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইসলামী ধর্মতত্ত্ব, তাফসির এবং ফিকহ বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সেই সময় সমরকন্দ ছিল সামানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং এ শহরের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল তাজিক, যদিও আশপাশের বেশিরভাগ মানুষ ছিল তুর্কিভাষী। আবু নাসর আহমাদ বিন আব্বাস বিন হুসাইন আল ইয়াজি, আবু বকর আহমদ বিন ইসহাক বিন সালেহ আল জুযজানি (আল ফারক ওয়াত তাময়িয গ্রন্থের লেখক), নুসাইর বিন ইয়াহইয়া আল বালখি এবং কাজিউল কুজাত (প্রধান বিচারপতি) মুহাম্মদ বিন মুকাত
ইমাম মাতুরিদি (রহ.) ছিলেন একজন সুন্নি হানাফি ধর্মতত্ত্ববিদ, বিচারপতি এবং তাফসির ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ। তিনি আবু মনসুর আল মাতুরিদি বা ইমাম মাতুরিদি নামেই বেশি পরিচিত। তার পুরো নাম আবু মনসুর মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মাহমুদ আল-মাতুরিদি আল-হানাফি। আল-মাতুরিদি হলো নিসবাত; অর্থাৎ, তার জন্মভূমির প্রতি সম্পৃক্ত করে এই উপাধি দেওয়া হয়েছে। মাতুরিদ সমরকান্দের একটি এলাকা। সেই জায়গার প্রতি সম্পৃক্ত করেই তাকে আল মাতুরিদি বলা হয়। পরবর্তীকালে তার আকিদা-দর্শন ও অনুসারীদের এ নামেই ডাকার প্রচলন হয়। বলা হয়, ‘মাতুরিদি আকিদা’।
ইমাম মাতুরিদি আনুমানিক ৮৫৩ সালে সমরকন্দের নিকটবর্তী মাতুরিদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইসলামী ধর্মতত্ত্ব, তাফসির এবং ফিকহ বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সেই সময় সমরকন্দ ছিল সামানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং এ শহরের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল তাজিক, যদিও আশপাশের বেশিরভাগ মানুষ ছিল তুর্কিভাষী। আবু নাসর আহমাদ বিন আব্বাস বিন হুসাইন আল ইয়াজি, আবু বকর আহমদ বিন ইসহাক বিন সালেহ আল জুযজানি (আল ফারক ওয়াত তাময়িয গ্রন্থের লেখক), নুসাইর বিন ইয়াহইয়া আল বালখি এবং কাজিউল কুজাত (প্রধান বিচারপতি) মুহাম্মদ বিন মুকাতিল আর-রাজি প্রমুখ ইসলামী শিক্ষাবিদরা ছিলেন তার শিক্ষক। আবু নাসর আল ইয়াজি ছিলেন তার শিক্ষক ও বন্ধু। আবু বকর আল জুযজানি ছিলেন আবু সুলাইমান মুসা বিন সুলাইমান আল জুরজানির ছাত্র, যিনি ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ আশ শায়বানির ছাত্র ছিলেন। এ ছাড়া মুহাম্মদ বিন মুকাতিলও ইমাম মুহাম্মদ আল শায়বানির কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
ইমাম মাতুরিদি যখন বেড়ে উঠছিলেন, তখন ইসলাম ধর্মের কতিপয় মাজহাবের বিরুদ্ধে উঠতি প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান ছিল। তন্মধ্যে বিশেষভাবে মুতাজিলা, কারামতি, বাতিনিয়া ও অন্যান্য দার্শনিক ধারার সঙ্গে মুসলিম সমাজের বৌদ্ধিক দ্বন্দ্ব চলছিল। ইমাম মাতুরিদি এ প্রেক্ষাপটেই যুক্তি ও নকল (ওহি)-এর সমন্বিত প্রণালির মাধ্যমে সুন্নি আকিদার স্বচ্ছ ও পরিমিত অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ সময় তিনি রচনা করেন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘কিতাবুত তাওহিদ’, যা ইসলামী কালামশাস্ত্রের এক যুগান্তকারী গ্রন্থ। এতে তিনি আল্লাহর অস্তিত্ব, গুণাবলি, কদর, কাসব, নবুয়ত, ইমান, কুফর, কেয়ামত ও মানবযুক্তির ভূমিকা সবকিছু গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। তার তাফসির ‘তাওয়িলাতুল কোরআন’ কোরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যুক্তি ও ভাষার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। এ গ্রন্থটি বিশেষভাবে হানাফি ইলমুস-সুন্নাহ ও আকিদাতুল-মাতুরিদিয়ার আদর্শিক ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক হয়েছে। মাতুরিদি চিন্তাধারার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সমন্বয়বাদী ও মধ্যপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি যুক্তিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেননি, আবার তাকে সীমাহীন স্বাধীনতাও দেননি। তার মতে, মানুষের বুদ্ধি সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে, তবে ওহিই সর্বোচ্চ মানদণ্ড। ইমান ও আমলের সম্পর্ক, তাকদিরের ব্যাখ্যা, আল্লাহর গুণাবলি, নবুয়তের প্রয়োজনীয়তা এসব বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট, ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রমাণনির্ভর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
তার সমগ্র চিন্তাধারা পরবর্তী সময়ে ‘মাতুরিদি মাজহাব’ নামে সুন্নি ইসলামের আকিদাগত দুই প্রধান ধারার (মাতুরিদি ও আশআরি) একটিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে তুর্কি, মধ্য এশিয়া, হানাফি-অধ্যুষিত অঞ্চল ও ভারত উপমহাদেশে তার আকিদা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ইমাম মাতুরিদি ৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে সমরকন্দে ইন্তেকাল করেন। তার কবর এখনো বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম তীর্থকেন্দ্র। ইমাম মাতুরিদি রেখে গেছেন যুক্তি, ভাষা, নকল ও তাজকিয়া সব মিলিয়ে এক উজ্জ্বল আকিদা-ঐতিহ্য, যা আজও বিশ্ব মুসলিমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
What's Your Reaction?