নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ মঞ্চায়ন হবে। তার আগে সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার প্রতিবাদে হবে আলোচনা। সেকথা জানার পর নাট্যদলের হলবরাদ্দ বাতিল করেছিল শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এমনকি পরে আর কখনও হল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি দলটিকে। আট বছর পর অবশেষে শিল্পকলা একাডেমিতে ফিরছে সেই নাটক। আসছে ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তন মঞ্চে নাটকটির পরপর দুটি মঞ্চায়ন হবে।
২০১৬ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের মঞ্চায়ন। সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল নাট্যদল তীরন্দাজ রেপার্টরি। নাটক মঞ্চায়নের আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি প্রতিবাদী প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চেয়েছিল দলটি। সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল দেশের পরিবেশবাদী এবং রাজনৈতিক প্লাটফর্মগুলো। তাই নাটক মঞ্চায়নের আগে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ‘বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ শিরোনামে একটি আলোচনার আয়োজন করে তীরন্দাজ।
ওই বাহাসে আলোচক ছিলেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। তার আলোচনা শুনতে ও নাটকটি উপভোগ করতে সেদিন বহু দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন শিল্পকলায়। কিন্তু বাধ সাধে শিল্পকলা একাডেমি প্রশাসন। আলোচনা শুরুর আগে অনুমতি নেওয়া হয়নি, এমন কারণ দেখিয়ে ‘আয়োজন করা যাবে না’ বলে নির্দেশ জারি হয়। ভেস্তে যায় আলোচনা পর্ব। এমনকি মঞ্চায়নের আগ মুহূর্তে নাটকটির জন্য হলের বরাদ্দও বাতিল করা হয়।
ওই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল নাট্যাঙ্গনে। ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শিল্পকলা একাডেমি জানায়, নাটক বন্ধ নয়, জোরপূর্বক অনির্ধারিত তথাকথিত ‘সুন্দরবন চুরি বিষয়ক বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে দলটিকে আর নাটকের জন্য জায়গা দেওয়া হয়নি। সে প্রসঙ্গে দলের সদস্য দীপক সুমন বলেন, ‘আমরা আবেদন করে গেছি। কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। এমনকি ওই দিনের হল ভাড়ার যে টাকা দিয়েছিলাম, সেটাও রিফান্ড করেনি।’
নতুন সরকার এবং শিল্পকলা একাডেমির নতুন প্রশাসনের কাছে এই অভিনেতা ও নির্দেশকের চাওয়া, ‘শিল্পকলা জনগণের সম্পত্তি। কাজেই দলীয় বা গোষ্ঠী বিবেচনায় শিল্পকলার হল আর বরাদ্দ করা হবে না। সৃজনশীল কর্মের বিষয়বস্তু আর মানের উৎকর্ষতাই হোক এরকম রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র ব্যবহারের যোগ্যতার মাপকাঠি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বিচক্ষণ ও যোগ্য মানুষ। আশা করি আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান ঘুচবে।’
২০১৬ সালের ঘটনার পর শিল্পকলায় হল বরাদ্দ না পেয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হয়েছিল। যদিও সেখানে আলোর উপযুক্ত ব্যবস্থার ছিল না, অতিরিক্ত ব্যয় বলে প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়নি।
শিল্পকলা একাডেমিতে হল বরাদ্দ না পেয়ে কেটে যায় সাত বছর। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির দুটো প্রদর্শনী করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একই মিলনায়তনে নাটকের ৪১তম প্রদর্শনী হয়। মহিলা সমিতির মঞ্চে নাটকের ৪২তম প্রদর্শনী ছিল গত ২৮ এপ্রিল। পরে আবারও ২৭ সেপ্টেম্বর একই জায়গায় শো করে দলটি।
পৌরাণিক কাহিনি ঘিরে এই নাটক লিখেছেন মোহিত চট্টোপাধ্যায়। নির্দেশনা করছেন দীপক সুমন। মঞ্চসজ্জা ও আলোক পরিকল্পনা করছেন ফয়েজ জহির। ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ তীরন্দাজের ষষ্ঠ প্রযোজনা। এর ‘আগন্তুক’ চরিত্রে অভিনয় করেন দীপক সুমন ও ‘চিকিৎসক’ চরিত্রে কাজী তৌফিকুল ইসলাম।
এই নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে এক আগন্তুককে ঘিরে। আগন্তুক ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে, তার কণ্ঠনালিতে সূর্য আটকে গেছে। বহুকাল ধরে সে তা বহন করছে। সে সূর্যটি বের করতে চায় বা চিরকালের জন্য হৃৎপিণ্ডে রেখে দিতে চায়। এমন অদ্ভুত সমস্যার কথা আগে শোনেনি কেউ। তাই আগন্তুককে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে থাকে চিকিৎসালয়ে আসা অন্যরা। আগন্তুক তাতে দমে না গিয়ে নিজের কণ্ঠনালিতে আটকে থাকা সূর্যের একটা ফয়সালা করতে চায়।
৫০০ ও ৩০০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে নাটকটি উপভোগ করতে পারবেন যে কেউ। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নাটকের টিকিটের দাম মাত্র ১০০ টাকা।
আরএমডি/জেআইএম