হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এ তথ্য জানান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি (হাসিনা) নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিরোধ করেননি। শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হওয়ায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। দুই অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায়ে একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ ও আহতদের ক্

হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এ তথ্য জানান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি (হাসিনা) নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিরোধ করেননি।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হওয়ায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। দুই অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ে একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ ও আহতদের ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার পর আদালতে উঠে ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনাল রায় পড়া শুরু করেন। ছয়টি অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় আদালতে পড়া শেষ হয় প্রায় আড়াই ঘণ্টায়।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিটি প্রমাণ হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এগুলোর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, পাঁচটি অভিযোগ তিনটি কাউন্টে ভাগ করে সাজা প্রদান করা হয়েছে আসামিদের।

তাদের বিরুদ্ধে গঠন করা প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উল্লেখ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’ ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। প্ররোচনা, উসকানি, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এতে।

এই অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। কারণ তিনি অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ‘ইমপ্রিজনমেন্ট টিল ন্যাচারাল ডেথ’ অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’ দিয়েছেন।

চার নম্বরে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

পাঁচ নম্বরে আশুলিয়ায় জীবিত একজনসহ মোট ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকার চাঁনখার পুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়াতে জীবিত একজনসহ ছয়জনকে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে, এই মামলার একমাত্র গ্রেফতার আসামি ও ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে প্রথম অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু অপরাধের ব্যাপকতা এবং যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেসব অপরাধ তিনি করেছেন সেগুলোর জন্য তিনি সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য।

কিন্তু যেহেতু তিনি এই মামলাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য সাহায্য করেছেন সে বিষয় বিবেচনায় তিনি ন্যূনতম সাজা পাবেন।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে আরও বলেছেন, তিনি সব এট্রোসিটিজের (নৃশংসতা) জন্য দায়ী। কিন্তু ঘটনার বিবরণ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিসক্লোজ করেছেন তিনি। এসব বিষয় বিবেচনায় সাবেক এই আইজিপিকে ট্রাইব্যুনাল পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এফএইচ/ইএ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow