বাংলার চিরায়ত প্রবাদ ‘মাছে ভাতে বাঙালি’কে মিথ্যা প্রমাণ করলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শরিফ নামে এক যুবক। শিশুকাল থেকেই তিনি রুটি খাওয়া শুরু করেন। ভাত না খেয়ে শুধু রুটি পার করে দিয়েছেন ৩৫ বছর।
শাহজাদপুর উপজেলার রুপবাটি ইউনিয়নের মৃত রজব আলী মোল্লার ছেলে শরিফ মোল্লা পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক। তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকে রুটি, সবজি সঙ্গে মাংস কিংবা ডিমভাজি। কখনো তিনি ভাত খাননি। এ কারণে এলাকায় তিনি ‘রুটি শরীফ নামে পরিচিত।
শরিফের পরিবার ও গ্রামবাসীরা জানান, ছয় মাস বয়সে শরিফের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তার মা। শিশুকালেই ভাত বমি করে দিয়েছিলেন শরিফ। এরপর বারবার তাকে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েও ব্যর্থ হন পরিবারের লোকজন। শুধু ভাত নয়, চালের তৈরি কোনো ধরনের খাবারই খাননি শরিফ।
তার প্রিয় খাবার রুটির সঙ্গে সবজি বা ভাজি। কখনো কখনো রুটির মাংস বা ডিমও খান। তার এমন খাদ্যাভ্যাসের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একজন বাংলাদেশি হয়েও কীভাবে ভাত ছাড়া বেঁচে আছেন, তাই তাকে দেখতে প্রায়ই বাড়িতে লোকজন ভিড় জমান।
শরিফ প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তার স্ত্রী আমেনাও প্রথম দিকে স্বামীর এমন খাদ্যাভ্যাসে অবাক হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে শরিফের মা সাবেয়া বেগম বলেন, আমার দুই ছেলের মধ্যে শরিফ ছোট। জন্মের পর ছয় থেকে সাত মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ পান করেছে সে। এরপর তাকে ভাত নরম করে মুখে দিলে বমি করে ফেলে দিত। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর আটার রুটি বানিয়ে মুখে দিলে তা খেতে শুরু করে। সেই যে শুরু হলো রুটি খাওয়া আজও চলছে।
তিনি আরও বলেন, শিশুকালে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওর জন্য রুটি বানিয়ে নিয়ে যেতে হতো। আবার কোথাও কোনো দাওয়াত খেতে গেলে আলাদা রুটির ব্যবস্থা থাকত। ৩৫ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। আজীবন রুটি তৈরি করে দেওয়ার শর্তেই শরিফকে বিয়ে করানো হয়।
শরিফের স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, বিয়ের দিন সবাই এসে বলে, তোর স্বামী ভাত খায় না, তাকে রুটি বানিয়ে দিতে হবে। প্রথম দিকে আমি বিষয়টি শুনে অবাক হই। বিয়ের পর দেখি সত্যিই তিনি ভাত খান না। এখন আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে। সবার জন্য ভাত রান্না করলেও তার জন্য রুটি তৈরি করে দিই। আমাদের যেমন ভাত ছাড়া তৃপ্তি হয় না, তেমনি শরিফ রুটি ছাড়া তৃপ্ত হন না।
শরিফের বড় ভাই আরিফ বলেন, আমার বাবা (রজব আলী) বেঁচে থাকতে শরিফকে চিংড়ি মাছের মধ্যে ভাত দিয়ে খাওয়ানোর করেন। কিন্তু শরিফ চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে ভাত ফেলে দিয়ে শুধু চিংড়ি মাছ খেয়েছিল। এ ছাড়া ভাত খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো কাজই হয়নি।
লাজুক প্রকৃতির শরিফ যেখানেই যান, কেবল একটি প্রশ্নই শুনতে হয় তাকে౼‘কেন ভাত খান না আপনি?’ প্রথম দিকে বিব্রত হলেও এখন সয়ে গেছে তার।
ব্যতিক্রমী খাদ্যাভ্যাসের কারণে পরিচিতি পাওয়া শরিফ এখন খেপে না গিয়ে জানান, এখন তিনি নিজের পরিচিতি পাওয়ার বিষয়টা উপভোগ করেন। বাকি জীবন এই রুটি খেয়েই কাটাতে চান বলেও জানান তিনি।
শরিফের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমীন আলম কালবেলাকে বলেন, তিনি (শরিফ) ভাত না খেলেও শর্করা জাতীয় খাবার রুটি খাচ্ছেন। আমাদের শরীরে ছয়টা উপাদান লাগে౼শর্করা, আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবার ইত্যাদি। ভাত না খেলেও রুটির মধ্যে তিনি শর্করা পাচ্ছেন। তাই এতে তার শরীরের কোনো সমস্যা হবে না।